নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কিছুটা কমিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ দলের ফেরানো হয়েছে সাব্বির রহমানকে। এ নিয়ে বিতর্কও কম হচ্ছে না। দেশীয় সংবাদমাধ্যম তো বটেই, কিউই মিডিয়াতেও এ নিয়ে চলছে সমালোচনা। কিন্তু যার জন্য এত কিছু, সেই সাব্বির
সাব্বিরের শাস্তি কমাল কে? কার সিদ্ধান্তে দলে ফিরেছেন তিনি?
এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় কেউই নিতে চাচ্ছে না। বিসিবি নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু সরাসরি বলে দিয়েছেন, অধিনায়ক মাশরাফির দাবি মেনেই শাস্তি কমিয়ে দলে নেওয়া হয়েছে সাব্বিরকে। এদিকে মাশরাফিও জানিয়েছেন, তিনি শুধু সাব্বিরের ব্যাপারে তাঁর মত দিয়েছেন, দলে নেওয়া-না নেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যথারীতি নির্বাচকদের। এভাবে হুট করে শাস্তি কমিয়ে সাব্বিরকে দলে নেওয়ার ফলে যেটা হয়েছে, বিদেশি মিডিয়াতেও সমালোচনা চলছে বিসিবির। সামনে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ থাকায় নিউজিল্যান্ডের সংবাদমাধ্যমের আগ্রহ হয়তো একটু বেশি। নিউজিল্যান্ডের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ‘স্টাফ’ বলেছে, ‘শাস্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই নিষিদ্ধ ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানকে নিউজিল্যান্ড সফরে দলে টানার কারণ হিসেবে বোঝাবুঝির ভুলকে দোষারোপ করছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। পেশাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা হাস্যরসের বিষয়বস্তু। এ ছাড়াও সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দলের সংস্কৃতি নিয়ে এটি বিপজ্জনক বার্তাও।’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান দলে সাব্বিরের অন্তর্ভুক্তি অনুমোদন করলেও তাঁর ব্যক্তিগত অভিমতও দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, আরও একটু সময় নিয়েই নাকি সাব্বিরকে দলভুক্তির দরকার ছিল, ‘আমি মনে করি, আরও বেশি সময় নিয়ে, আরও বুঝেশুনে এলেই ওর (সাব্বির) জন্য ভালো হতো। ওর জন্য ঝুঁকিটা অনেক বেশি। একটা ছোট্ট ভুলে ওর ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।’
এমন একটা অবস্থায় দলে ঢুকে সাব্বির কিন্তু যথেষ্ট চাপেই আছেন। নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার আগেই তাঁকে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিপিএলে প্রতিটি ম্যাচেই তিনি ক্রিকেটপ্রেমীই কেবল নন, ক্রিকেট প্রশাসকদেরও শ্যেন দৃষ্টির মধ্যে আছেন। প্রতিটি ম্যাচেই দর্শকেরা আলাদা আগ্রহ নিয়ে সাব্বিরের খেলা দেখতে বসেন। অপেক্ষায় থাকেন সাব্বির কতটা ভালো করেন কিংবা খারাপ।
নিষিদ্ধ হওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে কিন্তু তেমন ভালো করেননি সাব্বির। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞার পর গত ছয় মাসে ঘরোয়া ক্রিকেটে চার দিনের ম্যাচ ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মিলিয়ে ২১ ইনিংস খেলেছেন সাব্বির, তিন অঙ্ক ছুঁতে পারেননি একটিও। ফিফটি তিনটি। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিপিএলেও তেমন আহামরি ফর্মে ছিলেন না। জাতীয় দল ঘোষণা হওয়ার আগে বিপিএলে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে সাত ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি, এক রংপুরের বিপক্ষে ৮৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংসটা বাদ দিলে বাকি ৬ ম্যাচে একটাও ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেলতে পারেননি তিনি। সে সব ম্যাচগুলোয় সাব্বিরের রান যথাক্রমে ৭, ০, ১২, ৬, ২০ ও ১১। স্ট্রাইকরেটের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়।
কিন্তু বিপিএলে মাশরাফির রংপুরের বিপক্ষে ৮৫ রানের ইনিংস খেলেই যেন পাশার দান পালটে দিয়েছেন সাব্বির। সাব্বিরের ওই ইনিংসটা প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক হিসেবে মাঠে দাঁড়িয়ে দেখেছেন বলেই হয়তো মাশরাফির মনে হয়েছে নিউজিল্যান্ড সফরে তাঁকে দরকার। নিউজিল্যান্ডের ফাস্ট বোলারদের তোপ সামলাতে সাত নম্বরে সাব্বিরের মতোই একজন বিগ হিটার দরকার। সেটি ফুটে উঠেছে তার কথাতেও, ‘বিশ্বকাপের কথা যদি ভাবেন সাতে এমন ব্যাটসম্যান কই, যে প্রতিপক্ষের দুর্দান্ত ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে রান তুলতে পারবে। সাতে তো অনেককে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। খুব ভালো ফল কি পেয়েছি?’
অধিনায়কের সমর্থন পাওয়া সাব্বির জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পর নিজের ফর্ম ফেরানোর জন্য কি চেষ্টা করছেন? উত্তরে ‘হ্যাঁ’ বলা যেতে পারে। জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার আগে বিপিএলে যেখানে সাব্বিরের ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস ছিল সাকল্যে একটি, জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার পরে বিপিএলে খেলা পাঁচ ইনিংসে এর মধ্যে ত্রিশ-ছাড়ানো ইনিংস খেলেছেন তিনটি, তিনটিই আবার শেষ তিন ম্যাচে। খুলনার বিপক্ষে চারটি চার ও দুটি ছক্কায় সাজানো ২৯ বলে ৪৪ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলে সিলেটকে জিতিয়েছেন। পরের ম্যাচেই রাজশাহীর বিপক্ষে ৩৯ বলে ৪৫ রান করেছেন, যদিও সে ম্যাচে তার দল জেতেনি। সর্বশেষ গতকালকের ম্যাচে চিটাগংকে হারিয়েছে সিলেট, যার পেছনে সাব্বিরের ২৫ বলে ৩২ রানের ইনিংসের অবদান ছিল বেশ।
বিসিবি সভাপতি দল ঘোষণা হওয়ার পর আয়োজন করে ঘোষণা দিয়েছেন, এটাই সাব্বিরের শেষ সুযোগ। শেষ সুযোগটা হেলায় হারাতে চান না সাব্বির, তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের সর্বস্ব একত্র করেই। তাঁর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স গুলিতে এটা স্পষ্ট।