বছরটা আকবর আলীদের জন্য হতে পারত স্মরণীয় এক বছর। গত ৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকায় যুব বিশ্বকাপ জিতে ফেরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এরপরই দলটার সামনে খুলে যায় অপার সম্ভাবনা। শুধু বোনাসের অর্থপ্রাপ্তিতেই সেটি শেষ হওয়ার কথা নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিশেষ পরিকল্পনায় ঢুকে পড়ে দলটা। কিন্তু তখন কে জানত, অতিমারি করোনাভাইরাস এলোমেলো করে দেবে সবই!
করোনাভাইরাস আর সবার মতো ক্রিকেটারদেরও বন্দী করে ফেলে চার দেয়ালের মধ্যে। যে বছরটা স্বপ্নের মতো কাটার কথা আকবর-শামীমদের, সে বছরেরই পাঁচটি মাস তাঁরা কাটালেন ঘরবন্দী থেকে। অবশেষে কারও কারও মুক্তি মিলেছে গত মাসে। বিকেএসপির ছাত্র হওয়ার সুবাদে দলের ছয়জন ক্রিকেটার গত মাসের শেষ দিকে বিকেএসপিতে শুরু করেন অনুশীলন। অধিনায়ক আকবর ছাড়াও নতুন শুরুর লক্ষ্যে সেখানে অনুশীলন করছেন মাহমুদুল হাসান, শামীম পাটোয়ারী, শাহীন আলম, হাসান মুরাদ ও পারভেজ হোসেন। তবে এটি ঠিক প্রথাগত অনুশীলন নয়। অনুশীলনে সূচিটা সাধারণত কোচরা সাজালেও এখানে আকবররাই কোচদের কাছে তুলে ধরছেন, কার কোথায় সমস্যা। কোচরা অনুশীলনের সূচি সাজাচ্ছেন সেভাবেই।
বিশ্বকাপ জেতা ছয় ক্রিকেটারের মধ্যে পাঁচজনেরই থাকার কথা আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরের হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) দলে। গত পরশু বিকেএসপির ইনডোরে তাঁদের সঙ্গে অনুশীলনে দেখা গেল জাতীয় দলের তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ও এইচপি দলের আরও দুই সদস্য মুকিদুল ইসলাম এবং সাগর চৌধুরীকেও। করোনাভাইরাসের কারণে বিকেএসপিতে এখন ছুটি চলছে। তবে সাবেক এই ছাত্রদের জন্য অনুশীলনের দুয়ার খোলা রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিশ্বকাপ জিতে আসার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলছিলেন যুব দলের খেলোয়াড়েরা। কিন্তু লিগ শুরু হতে না হতেই করোনাভাইরাসের থাবায় লন্ডভন্ড সবকিছু। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই মাসের অনুশীলন ক্যাম্পের জন্য আকবরদের যাওয়া হয়নি ইংল্যান্ডেও। এ বছর যেখানে বিশ্বকাপজয়ীদের নিয়েই আবর্তিত হতে পারত বাংলাদেশের ক্রিকেট, সেখানে উল্টো তাঁদের পাদপ্রদীপের আলো থেকেই সরিয়ে দেয় কোভিডের প্রকোপ। বাড়িতে থাকার সময় ক্রিকেটাররা হয়তো নিজেদের মতো করে ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জিমনেসিয়াম আর মাঠের কাজ ঘরের চার দেয়ালের ভেতর কতটুকুই-বা আর হতে পারে!
বিকেএসপির কোচদের অধীনে এখন পুরোদমেই চলছে অনুশীলন। সকালে ফিটনেস অনুশীলন, ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং। খেলোয়াড়দের সমস্যা জেনেই সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন বিকেএসপির কোচ আসাদুল হক, ‘ওদের চাহিদা অনুযায়ী কাজ করছি আমরা। ওরা যার যার সমস্যা বলছে, আমরা সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ এরপর দিলেন সমস্যার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও, ‘কারও হয়তো প্রতিক্রিয়া দেখানোর ক্ষমতা কমে গেছে। কেউ আবার ব্যাকফুটে খেলতে ভুলে গেছে। এই সমস্যাগুলো ধরে ধরে কাজ করছি।’
আকবররা ছাড়াও বিকেএসপিতে আলাদাভাবে অনুশীলন চলছে অনূর্ধ্ব-১৯ দল এবং সাকিব আল হাসানের। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সাকিবের ফেরার লড়াই অনুপ্রেরণা হতে পারে নতুন শুরুর আশায় থাকা আকবর-শামীমদের। আবার বিশ্বকাপ জেতা আকবর-শামীমদের দেখে অনুপ্রাণিত হতে পারে আগামী যুব বিশ্বকাপের প্রস্তুতি থাকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল।