কী একটা রাত গেল রোহিত শর্মার! কোনো কিছুই যেন ঠিক হয়নি মুম্বাই ইন্ডিয়ানস অধিনায়কের।
দিল্লি ক্যাপিট্যালসের কাছে তাঁর দল কাল হেরেছে ৬ উইকেটে। গ্রুপে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে এই দ্বিতীয় হার গত দুবারের চ্যাম্পিয়ন মুম্বাইয়ের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। কালকের হারটি আবার ছিল দিল্লির বিপক্ষে টানা পাঁচ ম্যাচ জেতার পর প্রথম হার! ম্যাচে চোট নিয়ে অনেকটা সময় মাঠের বাইরে ছিলেন রোহিত। এটি বাদ দিন, গোদের ওপর বিষফোড়া রোহিতের জন্য অপেক্ষা করছিল ম্যাচ শেষে।
ম্যাচে স্লো ওভার রেট বা নিজেদের বোলিংয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বোলিং শেষ করতে পারেনি মুম্বাই। সে জন্য ১২ লাখ রুপি জরিমানা গুনতে হচ্ছে রোহিতকে। অথচ চোটের কারণে মুম্বাইয়ের বোলিংয়ের সময়ের প্রায় পুরোটাই মাঠের বাইরে ছিলেন রোহিত। সে সময় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন কাইরন পোলার্ড।
‘ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) ২০২১-এ ২০ এপ্রিল চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁর দলের ওভাররেট ধীর হওয়ার কারণে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে জরিমানা করা হয়েছে। যেহেতু আইপিএলে ওভার রেটের ন্যূনতম হার মানার ক্ষেত্রে এটা এই মৌসুমে তাঁর দলের প্রথমবার নিয়ম ভাঙার ঘটনা, সে কারণে মি. শর্মাকে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে’- বিবৃতিতে লিখেছে আইপিএল।
আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমবার ওভাররেট ঠিক রাখতে না পারার দোষের ক্ষেত্রে দলের অধিনায়ককে ১২ লাখ রুপি জরিমানা করা হবে। মৌসুমে একই অপরাধ একটা দল দ্বিতীয়বার করলে অধিনায়কের জরিমানা হবে ২৪ লাখ রুপি, পাশাপাশি একাদশের অন্য খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফির ২৫ শতাংশ অথবা ৬ লাখ রুপির মধ্যে যে অঙ্কটা কম, সেটা জরিমানা করা হবে। তৃতীয়বার একই অপরাধ হলে অধিনায়কের শাস্তি হবে ৩০ লাখ রুপি জরিমানার পাশাপাশি এক ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা, আর দলের একাদশের খেলোয়াড়দের জরিমানা হবে ১২ লাখ রুপি অথবা ম্যাচ ফির ৫০ শতাংশের মধ্যে যে অঙ্কটা কম, সেটি।
টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী, ফিল্ডিং দলকে ঘণ্টায় ১৪.১১ ওভার শেষ করতে হবে। আর ইনিংসের প্রথম ওভারের ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের মধ্যে ২০তম ওভার শুরু করতে হবে। কাল দিল্লির বিপক্ষে মুম্বাইয়ের বোলিং ইনিংস শুরু হয়েছিল স্থানীয় সময় ৯টা ৩০ মিনিটে, শেষ হয়েছে ১১টা ২৫ মিনিটে। প্রায় দুই ঘণ্টা!
অথচ এর বেশির ভাগ সময়ই রোহিত মাঠে ছিলেন না। ম্যাচের সময় সেটির কারণ জানানো হয়নি। তবে মুম্বাই অধিনায়ক পরে জানিয়েছেন, হালকা চোট পেয়েছেন তিনি, সতর্কতাবশতই মাঠ থেকে উঠে গিয়েছিলেন। দিল্লির ব্যাটিংয়ের সময় তাঁকে ড্রেসিংরুমে অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রোহিতের অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন কাইরন পোলার্ড। চোটের সর্বশেষ ম্যাচের পর রোহিত নিজেই জানিয়েছেন, ‘হালকা একটা চোট লেগেছে, এমনিতেই ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা।’
ম্যাচে মুম্বাইয়ের কিছুই ঠিক হয়নি। রোহিত মোটামুটি ভালো খেললেও আগে ব্যাট করা মুম্বাইয়ের ইনিংস মাঝপথে পড়েছে ধসের মুখে। ২৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ধসটা নামিয়েছেন দিল্লির লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র। ৯ উইকেটে ১৩৭ রান করে মুম্বাই। এরপর শিখর ধাওয়ান ও স্টিভ স্মিথের ইনিংস দিল্লিকে জিতিয়ে দেয় ৫ বল হাতে রেখে।
দিল্লির হয়ে দারুণ বল করেন লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র। ২৪ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। আবেশ খান নেন ১৫ রানে ২ উইকেট। মুম্বাইয়ের হয়ে ৩০ বলে ৩ চার ৩ ছক্কায় ৪৪ রান করেন রোহিত। সূর্যকুমার যাদবের (১৫ বলে ২৪) সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়েন। এঁদের বাইরে চারে নামা ঈশান কিষানের ব্যাট থেকে এসেছে ২৬ রান।
কিন্তু এই তিনজনের পরই নামে ধস। ১ উইকেটে ৬৭ থেকে হঠাৎ মুম্বাইয়ের রান হয়ে যায় ৬ উইকেটে ৮৪! শেষ দিকে জয়ন্ত যাদবের ২২ বলে ২৩ রানে দলীয় রান মোটামুটি জায়গায় নিয়ে যেতে পারে মুম্বাই।
এই রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচটা কঠিন করে ফেলেছিল দিল্লি। জয়ের জন্য শেষ ২৪ বলে ৩১ রান দরকার ছিল তাদের। এখান থেকে ললিত যাদবের দৃঢ়তায় ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে জিতেছে দিল্লি। দিল্লির হয়ে ৪২ বলে ৪৫ রান করেন শিখর ধাওয়ান। ১৫তম ওভারে তিনি আউট হওয়ার পর ৩১ বলে ৩৭ রান দরকার ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটির। শেষ দিকে ললিতের ২৫ বলে ২২ রানের অপরাজিত ইনিংস জয় এনে দেয় ঋষভ পন্তের দলকে। মুম্বাইয়ের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন জয়ন্ত যাদব, রাহুল চাহার, যশপ্রীত বুমরা ও কাইরন পোলার্ড।
দলীয় ৬৪ রানের মধ্যে স্টিভেন স্মিথ ও পৃথ্বী শ-কে হারায় দিল্লি। শিখর ধাওয়ান ও স্মিথের ৫৩ রানের জুটি জয়ের পথেই রেখেছিল দিল্লিকে। পঞ্চম উইকেটে হেটমায়ার ও ললিতের ১৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৩ রানের জুটি জিতিয়েছে দিল্লিকে। মাঝে ধাওয়ান-ললিতের ৩৩ বলে ৩৬ রানের জুটিও কার্যকর ছিল।