>আবারও সাকিবের দল আইপিএলের ফাইনালে। আগের দুবার কলকাতার হয়ে ফাইনাল খেলেছিলেন। এবার হায়দরাবাদকে শিরোপা জেতাতে খেলবেন সাকিব। মজাটা হচ্ছে, এবার সাকিবের ফাইনালে ওঠা হলো ইডেনে আগের দল কলকাতাকে ‘দর্শক’ বানিয়ে! আগের দুবারই ফাইনালে উঠে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য হিসেবে মাঠ ছেড়েছেন সাকিব। কিন্তু এবার?
পুরস্কার তাহলে সাকিব আল হাসানের হাতে দেখা গেল! রশিদ খান তিন বিভাগেই যে দুর্দান্ত খেলেছেন তাতে সাকিবের ম্যাচসেরা হওয়ার কথা নয়। কাল ইডেনে বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক পেয়েছেন ‘স্টাইলিশ প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ পুরস্কার।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসেই সাকিব জানিয়ে রাখলেন, ‘এ দিয়ে তৃতীয়বারের মতো আইপিএল ফাইনাল খেলব।’ সাকিব অবশ্য বলেননি, ‘আগের দুটি ফাইনালে কিন্তু আমি হারিনি!’ আগের সেই দুটি ফাইনাল দেখে নেওয়া যাক একনজরে---
* ২৭ মে ২০১২, এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়াম, চেন্নাই
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাটিং করে ৩ উইকেটে ১৯০ রান তোলে চেন্নাই সুপার কিংস। সাকিব ৩ ওভারে ২৫ রান দিয়ে পেলেন ১ উইকেট। ব্যাটিংয়ে ৭ বলে অপরাজিত ১১ রান করে অনায়াসে মিলিয়ে দিলেন ১২ বলে ২০ রানের সমীকরণ। প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল কলকাতা। সেই ফাইনাল জিতে সাকিবের প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘মনে হয় না আজ রাতটা ঘুমাতে পারব। আমার মনে হয় শাহরুখ (খান) আজ পাগলই হয়ে যাবে!’
* ১ জুন ২০১৪, এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম, বেঙ্গালুরু
কলকাতাকে বড় চ্যালেঞ্জই ছুড়ে দিয়েছিল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। ফাইনালের স্নায়ুচাপ সামলে কলকাতাকে ২০০ করতে হবে। মনিষ পান্ডের ৫০ বলে ৯৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের সৌজন্যে বড় স্কোর তাড়া করতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি কলকাতার। ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য, আর ব্যাটিংয়ে ১২ রান—সাকিব খুব যে বড় অবদান রাখতে পেরেছিলেন, তা নয়। তবে ওই যে ‘চ্যাম্পিয়নস লাক’! শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নের মেডেল পরেই মাঠ ছেড়েছেন সাকিব। ‘তিন বছরে দুবার চ্যাম্পিয়ন, এর চেয়ে ভালো লাগা আর কী হতে পারে!’—চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সাকিবের প্রতিক্রিয়া ছিল এমনই।
কাল ইডেনে আগের দল কলকাতার স্বপ্ন চুরমার করে সাকিব আবারও ফাইনালে। এবার আইপিএলে ইডেনে যে দুটি ম্যাচে খেলেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, দুটিতেই তাঁর পারফরম্যান্সে কলকাতাকে যেন ‘দেখিয়ে দেওয়া’র ছাপ ছিল! সাকিব যেন কলকাতাকে একটা অদৃশ্য বার্তা দিতে চেয়েছেন, সাত বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করাটা কতটা ভুল হয়েছে তোমাদের!
১৪ এপ্রিল অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের পর কালও প্রায় একই ছবি। অবশ্য রশিদ খানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে সাকিবের পার্শ্বচরিত্র হয়ে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না! তবে ম্যাচটা নিজেদের হাতের মুঠোয় আনতে বাঁহাতি অলরাউন্ডারের অবদান হায়দরাবাদ নিশ্চয়ই ভুলবে না। ৫০ বলে ১ উইকেটে ৮৭ রান তোলার পরও কলকাতার কাছ থেকে ম্যাচটা কীভাবে নিজেদের কাছে নিয়ে আসা হলো, সেটিই সাকিব বলছিলেন ম্যাচ শেষে, ‘ইনিংসের মাঝের ওভার গুলোয় যখন রশিদ ও আমি বোলিং করেছি তখন বেশি রানও দিইনি আবার উইকেটও নিয়েছি। ওখানেই ওদের চেপে ধরেছি। ওটাই ছিল ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট।’
গভীর রাতে কাল আর মুম্বাইয়ে রওনা দেওয়া হয়নি হায়দরাবাদের। সাকিবরা রওনা দিয়েছেন আজ সকালে। কাল সন্ধ্যায় হায়দরাবাদ ওয়াংখেড়ে পা রাখবে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার লক্ষ্যে, সাকিবের সেটি তৃতীয়বার। শিরোপা জিততে পারবেন কি না, সেটি বলা কঠিন হলেও কাল রাতে ইডেনে দাঁড়িয়ে সাকিব এতটুকু বলে গেলেন, ‘চেন্নাই অসাধারণ দল। দুই দলের জন্য অসাধারণ ফাইনাল হবে।’
চ্যাম্পিয়নস লাকের অভিজ্ঞতা থেকে সাকিব অবশ্য মুখ ফুটে বলেননি, ‘ফাইনালটা আমার জন্যও অসাধারণ হবে’—আগ বাড়িয়ে যে সেটা বলা যায় না!