নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে সব সময়ই সমীহজাগানিয়া একটি দল। রিচার্ড হ্যাডলি, মার্টিন ক্রো, স্টিফেন ফ্লেমিং, ড্যানিয়েল ভেট্টরি, শেন বন্ড থেকে হালের কেইন উইলিয়ামসনের মতো তারকাদের জন্ম দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু কখনো পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি কিউইরা। অনেক দিন পর্যন্ত বড় টুর্নামেন্টগুলোর সেমিফাইনাল পর্যন্তই ছিল তাদের দৌড়।
কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে দলটা যেন পুরোপুরি বদলে গেল। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ২০১৯ সংস্করণেও ফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ভাগ্য সহায় না হওয়ায় গতবার বিশ্বকাপটা জেতা হয়নি তাদের। তাতে দলের জয়ের ক্ষুধা কমেনি; বরং বেড়েছে। প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় উইলিয়ামসনের দল। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলে আইসিসির আরও একটি ইভেন্টের ফাইনালে পৌঁছে গেছেন উইলিয়ামসনরা।
সব সংস্করণে নিউজিল্যান্ডের এ দাপট খুব ভালোভাবেই দেখছেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার মাইক আথারটন। ইংল্যান্ডেরই আরেক সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন টুর্নামেন্টের আগে বলেছিলেন, বর্তমানে তিন সংস্করণের সবচেয়ে শক্তিশালী দল নিউজিল্যান্ড। একই সুরে কথাটা বললেন আথারটনও। তিনিও মনে করেন, নিউজিল্যান্ড এখন সব সংস্করণে সেরা দল।
স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে আলাপচারিতায় আথারটন এ কথা বলেন। শুরুতেই তিনি মেনে নেন নিউজিল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব, ‘নিউজিল্যান্ড অসাধারণ একটি দল, ক্রিকেটের সব সংস্করণেই। আরেকটি ফাইনালে উঠে এসেছে তারা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিল, পাশাপাশি ওরা এখন টেস্টেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আপনাকে মানতেই হবে, এই মুহূর্তে যেকোনো সংস্করণেই ওরা অপ্রতিরোধ্য। সুতরাং ওদের অভিনন্দন জানান। টাকাপয়সা বলুন কিংবা জনবল—সবকিছুই সীমিত পরিমাণে থাকা সত্ত্বেও ওরা অসাধারণভাবে এগুলো অর্জন করেছে।’
গতকাল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে ড্যারিল মিচেল ও জিমি নিশামের ব্যাটিং নৈপুণ্যে ৫ উইকেটের জয় পায় নিউজিল্যান্ড। ১৬৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুতেই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মার্টিন গাপটিলকে হারায় নিউজিল্যান্ড। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি অধিনায়ক উইলিয়ামসনও। কিন্তু এক পাশ আগলে রেখে খেলার শেষ দিকে জ্বলে ওঠেন মিচেল এবং এর আগে ১১ বলে ২৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে যান জিমি নিশাম। অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসে ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মিচেল।
আথারটন বলেন, কাল ম্যাচের দৃশ্যপট হঠাৎ করেই বদলে যায়, ‘সবকিছু খুব দ্রুত বদলে গেল। খেলার অনেক সময় পরও আমার কাছে মনে হচ্ছিল, খেলায় ইংল্যান্ডই এগিয়ে আছে। পিচটাকে বেশ মন্থর বলেই মনে হচ্ছিল, কিন্তু তখনই নিশাম এল এবং দুর্দান্ত কিছু শট খেলে খেলার মোড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিল।’
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে আজ রাত আটটায় মুখোমুখি হবে পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়া। এ ম্যাচে পাকিস্তানকেই এগিয়ে রাখলেন আথারটন, ‘আমি পাকিস্তানের পক্ষেই বাজি ধরব। আমার মনে হয়, এ প্রতিযোগিতার সবচেয়ে সেরা ও বৈচিত্র্যপূর্ণ আক্রমণ আছে ওদের।’
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের ভূয়সী প্রশংসা করেন ইংল্যান্ডের হয়ে ১১৫টি টেস্ট খেলা এই ব্যাটসম্যান, ‘আপনি তাদের বোলিং আক্রমণের দিকে তাকালে দেখবেন, শাহিন আফ্রিদি, হারিস রউফের সঙ্গে আছে দারুণ কিছু স্পিনার। তাদের বোলিংয়ের এত বৈচিত্র্যের জন্য আমার মনে হয়, ওদের বোলিং আক্রমণই সবচেয়ে সেরা এবং ওরাই বিশ্বকাপ জিতবে।’