একটা সময়ে বাংলাদেশ দলও এমন সময়ের মধ্য দিয়ে গেছে। আগে ব্যাট করলে ২০০ করাই কষ্ট হয়ে যেত। পরে ব্যাট করলে স্কোরবোর্ডে লক্ষ্য না দেখে পুরো ৫০ ওভার খেলার চেষ্টা করা।
সেই দিন বদলে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। কিন্তু সময় কখনো কখনো দল পাল্টেও ফিরে আসে! ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেও ফিরে এসেছে এমন সময়।
সিরিজ তিন ম্যাচের। প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে দেড় শ রানও তুলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আজ চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে পরে ব্যাট করেছে সফরকারী দল।
জয়ের জন্য লক্ষ্য ছিল ২৯৮—কিন্তু ‘শিক্ষানবিশ’ ওয়ানডে দল গড়া ক্যারিবীয়দের ব্যাটিং দেখে কখনো মনে হয়নি, লক্ষ্যটা নিয়ে তাদের কোনো ভাবনা আছে!
অন্তত ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে তা মনে হয়নি। তাতে যা হওয়ার তা-ই হলো। আজ তৃতীয় ম্যাচে ১২০ রানের জয়ে ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের প্রত্যাশামতোই বাংলাওয়াশ করল তামিম ইকবালের দল। নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে এটাই প্রথম সিরিজ জয় তামিমের।
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেই ফেলে আসা সময়ের মতো এবারের বাংলাওয়াশ থেকেও কিছু উন্নতি খুঁজে নিতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
প্রথম ওয়ানডেতে ৩২.২ ওভার ব্যাট করে ১২২ রান তুলতে পেরেছিল তারা। পরের ম্যাচে আরেকটু বেশি সময় (৪৩.৪) ব্যাট করে রানও বেশি তুলেছিল সফরকারী দল (১৪৮)।
আজ দ্বিতীয় ম্যাচের চেয়ে ৪ বল বেশি খেলতে পেরেছে জেসন মোহাম্মদের দল। দলীয় রানটা সে তুলনায় আগের দুই ম্যাচের চেয়ে সন্তোষজনক—৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট। ব্যাটিংয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার ইচ্ছার লেশমাত্র দেখা যায়নি।
ক্যারিবীয় টপ অর্ডার আগের দুই ম্যাচের মতো আজও ব্যর্থ। বলার মতো লড়াই যিনি করেছেন, তিনি আগের ম্যাচের ইনিংসে সর্বোচ্চ স্কোরার—রোভম্যান পাওয়েল।
আগের ম্যাচে আটে নেমে ৪১ রান করা পাওয়েলকে আজ ছয়ে পাঠিয়েছিল ক্যারিবীয় ম্যানেজমেন্ট। তিনি–ই ৪৭ রান করে যা একটু লড়েছেন। নইলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আজও দেড় শ রানের ওপাশে যেতে পারত কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল।
৯৩ রান তুলতেই নেই প্রথম ৫ উইকেট। শেষ ৫ উইকেট পড়েছে ৮৪ রানে।
সফরকারী দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার আঁচ না পেয়েই হয়তো ইচ্ছেমতো বোলার ব্যবহার করেছেন অধিনায়ক তামিম। তাসকিন আহমেদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের পাশাপাশি হাত ঘুরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য সরকার, এমনকি নাজমুল হোসেন শান্ত–ও!
৫১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এই ‘প্রতিযোগিতা’য় সবার ওপরে সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলা সাইফউদ্দিন। ২টি করে উইকেট মোস্তাফিজ ও মিরাজের। ১ উইকেট সৌম্যর। পাওয়েলের উইকেটটি পেয়েছেন তিনি।
এর আগে ইনিংসের শুরু থেকেই পিছিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বরাবরের মতোই দুই ওপেনার কিয়ন ওটলি ও সুনীল অ্যামব্রিস দলকে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি।
দলীয় ৭ রানে মোস্তাফিজের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দেন ওটলি। আর অ্যামব্রিসকে তো এই সিরিজে ‘বানি’–ই বানিয়ে ফেলেছেন মোস্তাফিজ। আগের দুই ম্যাচের মতো আজও তাঁকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন বাঁহাতি পেসার। সাইফউদ্দিন ও মিরাজ মিলে ভেঙেছেন মিডল অর্ডার।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এ নিয়ে টানা ৮ ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ১৬ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার তিন ম্যাচের সিরিজ জিতল ৩–০ ব্যবধানে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কতটা দুর্বল ওয়ানডে দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছে—সে প্রমাণ দিচ্ছে তথ্য–উপাত্ত। তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো তিন ম্যাচের কোনো সিরিজে কেউ ফিফটির দেখা পাননি।
টেস্ট সিরিজে কী ঘটে, এখন সেটাই দেখার অপেক্ষা।