ফজল মাহমুদ, ইমরান খান, সরফরাজ নেওয়াজ, সিকান্দার বখত, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, আকিব জাভেদ, শোয়েব আখতার, মোহাম্মদ আসিফ, মোহাম্মদ আমির—পাকিস্তানি ফাস্ট বোলারদের তালিকা করতে বসলে সেটি লম্বাই হবে। ক্রিকেটে পাকিস্তান যেসব আকর্ষণীয় বিষয়ের জন্ম দিয়েছে, তাদের ফাস্ট বোলাররা সে তালিকার বড় অংশজুড়েই থাকবে। লম্বা রান আপ, গতির সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সংমিশ্রণ যেকোনো তরুণ ক্রিকেটারদেরই পাকিস্তানি ফাস্ট বোলিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট করবে। বাংলাদেশের তরুণেরাও এর ব্যতিক্রম নন। ব্যতিক্রম নন, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে ৬ বছর কাটিয়ে দেওয়া পেসার তাসকিন আহমেদও। তিনি নিজেও ভীতি ছড়ান ব্যাটসম্যানদের মনে, কিন্তু নিজেকে সমৃদ্ধ করতে তাসকিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফাস্ট বোলারদের বোলিংটা খুব মনোযোগ দিয়েই দেখেন। পাকিস্তানি ফাস্ট বোলাররা তাঁকে আলাদাভাবে টানে উপমহাদেশের জল–আবহাওয়ায় বেড়ে ওঠার কারণেই।
এই উপমহাদেশ থেকে বিশ্বমানের ফাস্ট বোলার তৈরি হওয়াটা অন্য রকম ব্যাপারই। উমহাদেশের একটি দেশ পাকিস্তান থেকে কীভাবে বছরের পর বছর ধরে দারুণ সব ফাস্ট বোলার তৈরি হচ্ছে—এটা অবাকই করে তাসকিনকে। পুরো ব্যাপারটিকেই নিজেদের জন্য প্রেরণাদায়ক মনে করেন বাংলাদেশের এই পেস বোলার, ‘ঐতিহাসিকভাবেই পাকিস্তান থেকে অনেক ফাস্ট বোলার উঠে আসে। ওদের চেয়ে আমরা তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে আছি। যেহেতু একসঙ্গে সিরিজ খেলব, সুযোগ হলে ওদের সঙ্গে কথা বলব। ওদের কাছ থেকে যদি এমন কিছু শিখতে পারি, যেটি আমাদের জন্য ভালো, সেটি তো দারুণ ব্যাপার। উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে ওরা অন্য পর্যায়ের ফাস্ট বোলার পাচ্ছে—এটা তো আমাদের জন্য প্রেরণারই।’
তাসকিনের নিজের বোলিংয়ের উন্নতিটাও দৃশ্যমান। এ বছরের শুরু থেকেই ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাসকিনের পারফরম্যান্স বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এককথায় অনন্য। তবে তাসকিনের মূল লক্ষ্য বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদের একজন হওয়া। সে জন্যই সাময়িক উন্নতিতে সন্তুষ্ট হতে চান না তিনি, ‘বোলিংয়ে উন্নতির প্রক্রিয়া চলছে গত ২-৩ বছর ধরেই। এটা দুই-আড়াই মাসে হয়নি। এখনো প্রক্রিয়াতেই আছি। এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি। তবে আগের চেয়ে উন্নতি তো হয়েছেই। দেশি–বিদেশি কোচরা অনেক সাহায্য করছেন। ভবিষ্যতে বিশ্বমানের একজন বোলার হওয়া আমার স্বপ্ন।’
ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে বেশি বেশি খেলার সুযোগ পেলে হয়তো তাসকিনের মতো ফাস্ট বোলারদের উন্নতির পথটা সহজ হবে। আজ তাঁর কথায় সেই ইঙ্গিতই পাওয়া গেল, ‘ফাস্ট বোলাররা সব সময় বোলিং সহায়ক উইকেটে খেলতে চায়। কিন্তু সাদা বলে বোলিং সহায়ক উইকেটে কমই খেলা হয়। স্পোর্টিং উইকেটই বেশি খেলা হয়। মিরপুরেও স্পোর্টিং উইকেট আশা করছি, যেখানে ব্যাটসম্যান-বোলার উভয়েই সুবিধা পাবে। কন্ডিশন যেমনই থাক, বোলার হিসেবে ওই কন্ডিশনে মানিয়ে নেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। আমিও শিখছি কীভাবে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া যায় সব কন্ডিশনে। সব কন্ডিশনে যাতে সেরাটা দিয়ে ভালো করতে পারি, এটাই আমার চ্যালেঞ্জ।’
তাসকিন ও বাংলাদেশ দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হবে আসন্ন পাকিস্তান সিরিজও। বিশ্বকাপে ব্যর্থ বাংলাদেশকে খেলতে হবে সামনে বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা পাকিস্তানের বিপক্ষে। কাজটা যে কঠিন হবে, সেটি তাসকিনের ভালোই জানা, ‘কোনো সন্দেহ নেই পাকিস্তান টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বের শীর্ষ একটি দল। বিশ্বকাপে তারা দারুণ খেলেছে। দুর্ভাগ্যবশত সেমিফাইনালে হেরে গেছে। কিন্তু তারা সব বিভাগেই ভালো করছে। তাদের বিপক্ষে ভালো করতে হলে আমাদেরও সব বিভাগেই ভালো করতে হবে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি, দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। সহজ হবে না, কিন্তু আমরা আশাবাদী।’