সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের ক্যারিয়ারের শুরুতে কাছে থেকে দেখেছেন জেমি সিডন্স। ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ। এবার ব্যাটিং পরামর্শকের দায়িত্ব নিয়েছেন জাতীয় দলের, দেখছেন একঝাঁক তরুণ ক্রিকেটারদের। বাংলাদেশের দুই প্রজন্মের ক্রিকেটারদের কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আজ ভাগাভাগি করে নিলেন অস্ট্রেলীয় এ কোচ।
ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের তিনি বলছিলেন, ‘সিনিয়ররা এখনো ভালো করছে। তবে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তরুণেরা কী করছে। তরুণদের কোনো ভয়ডর নেই। ওরা যেকোনো সময় যেকোনো দলের বিপক্ষে পারফর্ম করার আত্মবিশ্বাস রাখে। ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলতেই হয়।’
আমাদের পাঁচ দিন ভালো খেলতে হবে। শুধু এক দিন নয়। টানা পাঁচ দিন একটুও ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘণ্টায় চেষ্টা করে যেতে হবে।টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশকে ভালো করার উপায় বাতলে দিলেন সিডন্স
২০০৮ সালে সিডন্সের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছিল বাংলাদেশ দল। কিছু ব্যক্তিগত অর্জন ছাড়া তখন বাংলাদেশের দলীয় কোনো সাফল্য ছিল না। এরপর ২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আরও একটি সফরেও ব্যর্থতা ছিল বাংলাদেশের সঙ্গী। অতীতের হতাশা অবশ্য এবার ওয়ানডে সিরিজ জিতে ভুলিয়ে দিয়েছে তামিম ইকবালের ওয়ানডে দল।
সিডন্সের কাছে এ সিরিজ জয় বাংলাদেশের উন্নতিরই প্রমাণ, ‘আমরা শেষবার যখন দক্ষিণ আফ্রিকায় এসেছিলাম, তখনো ভালো খেলেছিলাম। সাকিব পাঁচ উইকেট পেয়েছিল। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে রেখেছি। কিন্তু এবারের জয়ে বোঝা যায় যে বাংলাদেশ ক্রিকেট কতটা এগিয়েছে।’
সেঞ্চুরিয়নে যখন ওয়ানডে দলের ক্রিকেটাররা উদ্যাপনে ব্যস্ত, তখন সিডন্স টেস্ট দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন কেপটাউনে। টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতির জন্য গ্যারি কারস্টেনের একাডেমিতে বিশেষ ক্যাম্প করেছে মুমিনুলরা।
ভিন্ন শহর থেকে হলেও তামিমদের হয়ে টিভি পর্দার সামনে বসে গলা ফাটিয়েছেন সিডন্সরা, ‘দারুণ অনুভূতি ছিল। আমরা সবাই মিলে খেলা দেখেছি। দূর থেকে ওদের উৎসাহ দিচ্ছিলাম। খারাপ লাগছে, কারণ আমরা একসঙ্গে ছিলাম না। তবে পুরো দেশ নিশ্চয়ই গর্ববোধ করছে ওদের অর্জনে। সিরিজ জেতা এবং দাপট দেখিয়ে জেতা অনেক বড় ব্যাপার।’
ওয়ানডের সাফল্য ৩১ মার্চ শুরু হতে যাওয়া টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তবে এটাও ঠিক, বড় সংস্করণের চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি দলের জন্য। সিডন্স বলছিলেন, ‘আমাদের ওয়ানডের আত্মবিশ্বাসটা টেস্টেও অনুভূত হবে। তবে আমাদের পাঁচ দিন ভালো খেলতে হবে। শুধু এক দিন নয়। টানা পাঁচ দিন একটুও ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রতিটি ঘণ্টায় চেষ্টা করে যেতে হবে।’
দীর্ঘ সংস্করণের ক্রিকেট খেলার প্রস্তুতি অবশ্য মুমিনুলরা দুই সপ্তাহ ধরেই নিচ্ছেন। কেপটাউনের ক্যাম্প প্রসঙ্গে সিডন্স জানান, ‘কেপটাউনে সময়টা দারুণ ছিল। আবহাওয়া খুব ভালো ছিল। ব্যাটসম্যানরা ভালো প্রস্তুতির সুযোগ পেয়েছে। গ্যারি কারস্টেন, রায়ান কুকের কাছ থেকে অনেক ভালো সহায়তা পেয়েছি। ক্রিকেটাররা একেবারে আদর্শ ১০ দিন কাটিয়েছে বলতেই হয়। ভালো জিম, ভালো অনুশীলনের সুযোগ–সুবিধায় আশা করি মুমিনুল ও সাদমানদের টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতিটা ভালোই হয়েছে।’
লাল বলে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার অনুশীলনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তামিম-লিটনদের। ওয়ানডে সিরিজে ব্যস্ত থাকায় তাঁরা টেস্ট ম্যাচের প্রস্তুতির অংশ ছিলেন না। সিডন্স তাঁদের ব্যাপারে বলছিলেন, ‘খেলাটা লাল বলের, সাদা বলের নয়। তাই সাদা বল খেলে আসা ক্রিকেটাররা শিখছে কীভাবে ছেড়ে খেলতে হবে, দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ঢাকা বা চট্টগ্রামের চেয়ে অনেক বেশি বাউন্স থাকবে। স্টাম্পের ওপরের বল ছাড়তে হবে, স্টাম্পের বাইরের বল ছাড়তে হবে। চেষ্টা করতে হবে, কীভাবে বাজে বলে রান করা যায়। এটাই টেস্ট ক্রিকেট।’