>টি-টোয়েন্টিতে তাঁর দুটি সেঞ্চুরি আছে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি। অথচ বিপিএলে একটা সেঞ্চুরি ছিল না তামিমের। বাঁহাতি ওপেনার বিপিএলে সেঞ্চুরি করতে বেছে নিলেন ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নিজের সেরা ইনিংসটাই খেললেন আজ।
কালকের ঘটনটাই আরেকবার বলতে হচ্ছে। তামিম ইকবাল ছোট্ট একটা জরিপ চালালেন চার সাংবাদিকের মধ্যে—কালকের ফাইনালে কে জিতবে? তিনজনের রায় ঢাকার পক্ষে। এই প্রতিবেদক বললেন, ‘গত বিপিএলের পুনরাবৃত্তি হতে পারে!’
গত বিপিএলের পুনরাবৃত্তি হয়েছে কি না, ইনিংস বিরতিতে বলার উপায় নেই। কিন্তু চিত্রনাট্য সেদিকেই তো এগোচ্ছে। গত বিপিএলের ফাইনালে টস জিতে ঢাকা ডায়নামাইটস অধিনায়ক সাকিব আল হাসান নিয়েছিলেন ফিল্ডিং। এর পর কী হয়েছিল, নিশ্চয়ই স্মৃতি থেকে মুছে যায়নি—ক্রিস গেইলের বিস্ফোরক ব্যাটিং। রংপুরের জ্যামাইকান ওপেনার ঢাকার বোলারদের ইচ্ছে মতো পিটিয়ে ৬৯ বলে অপরাজিত ১৪৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে রংপুরকে এনে দিয়েছিলেন ১ উইকেটে ২০৬ রানের বিশাল স্কোর। ঢাকা জবাবে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানের বেশি করতে পারেনি। শিরোপা জিতল মাশরাফির রংপুর।
আজও টস জিতে বোলিং নিলেন সাকিব। আর আগে ব্যাটিং করতে নেমে গেইলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন তামিম। আন্তর্জাতিক এমনকি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরি থাকলেও ৫৭টা বিপিএল ম্যাচে যাঁর একবারও তিন অঙ্ক ছোঁয়া হয়নি, সেই তামিম আজ রাতটা নিজের করে নেওয়ার ব্রত নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামলেন। সন্ধ্যায় যখন মাঠে পা রাখলেন দুপাশ থেকে জ্বলে উঠল ‘ফায়ার ওয়ার্কস’। তারই মাঝে একটা কাভার ড্রাইভের শ্যাডো করে নিলেন বাঁহাতি ওপেনার। ২২ গজেও এ দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি বারবার। দৃষ্টিনন্দন সব শটে ‘ফায়ার’ শুরু করলেন তামিম। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটাই খেললেন ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে।
তামিমীয় ব্যাটিংয়ের সংজ্ঞা কী হতে পারে, সেটি নিশ্চয়ই বলতে হবে না। পেরিস্কুপ, সুইচ হিট, রিভার্স সুইপ কিংবা স্কুপের মতো উদ্ভাবনী শটের খুব একটা প্রয়োজন হয়নি। শুধুই ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ মেনে কাট, কাভার ড্রাইভ, পুল, বোলারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে মারা, সুইপ—ধ্রুপদি সব শট; যেসব শটে ছড়ায় অনাস্বাদিত মাদকতা, চোখে লেগে থাকে অনেকক্ষণ। কাগজে-কলমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক নন তিনি, কিন্তু তামিমই যে কুমিল্লার আসল নেতা, আজ ৬১ বলে অপরাজিত ১৪১ রানের ইনিংস খেলে সেটিই বোঝালেন বাঁহাতি ওপেনার। যেটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ রান।
তামিম তাঁর বাংলাদেশি সতীর্থদের আরও বোঝালেন ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে কীভাবে আলো ছড়াতে হয়। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএল ফাইনালে সেঞ্চুরি করা তামিমের ইনিংসের একটাই খুঁত, কাজি অনিকের করা অষ্টম ওভারের শেষ বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন। উইকেটকিপার নুরুল হাসান ক্যাচটা গ্লাভস বন্দী করতে পারেননি। কুমিল্লা ওপেনারের রান তখন ২৪।
সুযোগটা পেয়েই তামিম আরও আক্রমণাত্মক, ৩১ বলে ফিফটি। ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে খেলেছেন আর ১৯ বলে। ৫০ বলে সেঞ্চুরি করা তামিমকে শেষ পর্যন্ত আউটই করতে পারেননি ঢাকার বোলাররা। শেষ ১১ বলেই নিয়েছেন ৩৮ রান। কুমিল্লা আজ চার মারতে পেরেছে ১৩টি, এর মধ্যে ১০টাই তামিমের। ১২ ছক্কার ১১টিই তাঁর। তামিম যেখানে একাই নিয়েছেন ১৪১ রান, সেখানে তাঁর সতীর্থরা সবাই মিলে তাঁর চেয়ে ২ বল কম খেলে তুলেছেন ৪৭ রান। দলের ৭১ভাগ রানই তামিমের। দলের বাকি ব্যাটসম্যান যেখানে ৮০ স্ট্রাইক রেটই তুলতে হিমশিম খেয়েছেন, সেখানে তামিমের স্ট্রাইক রেট ২৩১ এর বেশি। বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেরই তো সেরা ইনিংস এটি।
গত ফাইনালে গেইলের দুর্দান্ত ইনিংসটা বৃথা যায়নি। এবার? দেখাই যাক।