>করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠিকাতে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও চলছে লকডাউন। বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো নিজ শহর পোর্ট এলিজাবেথে সময়টা কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেখান থেকেই জানালেন তাঁর করোনা অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ চিন্তার কথা।
প্রশ্ন: লকডাউনে কীভাবে সময় কাটছে?
রাসেল ডমিঙ্গো: লকডাউন থেকে সময় কাটানো সহজ নয়। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। তবে এটার ভালো দিকও আছে। পরিবারের সঙ্গে অনেক সময় কাটাতে পারছি। ক্রিকেট নিয়ে অনেক কিছু পড়ছি। সারা বিশ্বে কী হচ্ছে দেখছি।
প্রশ্ন: আপনার ছাত্ররা তো ঘরে থাকতে থাকতেই ক্লান্ত। তাঁদের জন্য কী বলবেন?
ডমিঙ্গো: এখন সবারই নিজ নিজ পরিবারের দেখাশোনা করা উচিত। সব ক্রিকেটারের উচিত সচেতন থাকা। এটাই আসল কথা। এর মধ্যেই আবার নিজেদের ফিট রাখার চেষ্টা করতে হবে। ওদের সবাইকেই অনুশীলনের কিছু নিয়ম দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবাই যেন সেটা অনুসরণ করে। যতটা সম্ভব ফিটনেস ধরে রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে। কাজটা কঠিন, কিন্তু চেষ্টা তো করতে হবেই।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নিয়েই সামনে কঠিন সব কাজ এসে পড়ল। ভারত ও পাকিস্তান সফর, ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের কাছে টেস্ট হার। দল যখন জয়ে ফিরল, তখনই করোনার কারণে সব খেলা বন্ধ। এমন অনাহূত ছন্দপতনে নিশ্চয়ই আফসোস হচ্ছে?
রাসেল ডমিঙ্গো: হতাশ তো অবশ্যই। ভালো একটা সিরিজ গেল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এরপরই সব খেলা বন্ধ! আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেখান থেকে এগিয়ে যাওয়ার সময় ছিল এখন। সেটা আটকে গেল। আবার এ–ও সত্যি, এই সময়ে ক্রিকেটাররা সুযোগ পাচ্ছে খেলা থেকে দূরে থাকার। গত ছয়-সাত মাস ওরা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে। বিপিএল, ভারত-পাকিস্তান সফর—সব মিলিয়ে টানা খেলা যাকে বলে। বিশ্রামটা হয়তো ক্রিকেটারদের জন্য অত খারাপ হবে না, যতটা সবাই মনে করছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোন উন্নতিটা আপনাকে তৃপ্তি দিচ্ছে?
রাসেল ডমিঙ্গো: আমার মনে হয় আমাদের ব্যাটিংয়ে উন্নতি এসেছে। বেশ কিছু তরুণ ক্রিকেটার এসেছে। তামিম ও মুশফিক তো আছেই। ওরা নিয়মিত বড় কিছু করছে। লিটন, মিঠুন, শান্ত (নাজমুল), মুমিনুলদের এগিয়ে আসতে দেখে ভালো লাগছে। সবচেয়ে বড় উন্নতিটা বলব ব্যাটিংয়েই।
প্রশ্ন: খেলা যখন আবার শুরু হবে, দলের কোন দিকটিতে বেশি জোর দিতে চাইবেন?
রাসেল ডমিঙ্গো: আমরা দেশের বাইরে কেমন করছি, সেটা দেখতে হবে। এই জায়গায় অনেক কাজ বাকি। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে ব্যাটিং–সাফল্য দরকার। আমাদের ফাস্ট বোলারদের বাইরে গিয়ে ধারাবাহিকভাবে উইকেট নিতে হবে। চাপ সৃষ্টির বোলিং করতে হবে। অনেক কাজ করার বাকি ফাস্ট বোলারদের নিয়ে।
প্রশ্ন: করোনাভাইরাসে খেলা হয়ে যাওয়ায় সাকিবকে ছাড়া হয়তো খুব বেশি ম্যাচ খেলতে হবে না। এটিকে কি একটি ইতিবাচক দিক মনে করেন?
রাসেল ডমিঙ্গো: হ্যাঁ, মনে হচ্ছে না সাকিব খুব বেশি ম্যাচ হাতছাড়া করবে। ওকে পেলে তো ভালোই হবে। বিশ্বমানের ক্রিকেটার। বিশ্বের ১ নম্বর অলরাউন্ডার।
প্রশ্ন: ওয়ানডে দলের নতুন অধিনায়ক তামিম ইকবালকে নিয়ে কতটা আশাবাদী?
রাসেল ডমিঙ্গো: তামিমের সঙ্গে কাজ করতে উন্মুখ হয়ে আছি। আমি খুবই খুশি তাকে অধিনায়ক হিসেবে দেখে। খুবই পরিণত মস্তিষ্ক, মনোযোগী ছাত্র। নিজের খেলা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে। সব সময় চায় বাংলাদেশ ভালো করুক। আমি নিশ্চিত, তামিম খুব ভালো অধিনায়ক হবে।
প্রশ্ন: দর্শকশূন্য গ্যালারিতে খেলা হওয়ার কথা আসছে নানা আলোচনায়। আপনি বিষয়টির সঙ্গে একমত?
রাসেল ডমিঙ্গো: শূন্য মাঠে খেলা? আমার কোনো সমস্যা নেই। মূল কথা হচ্ছে ক্রিকেটারদের খেলে যাওয়া। খেলতে থাকলেই উন্নতি হবে। ফিটনেস উন্নতি হবে। কিছু কিছু ক্রিকেটীয় কর্মকাণ্ড ধীরে ধীরে শুরু করতে পারলে ভালো হয়। সেটা ১০ জন মানুষের সামনে হোক আর ১ লাখ মানুষের সামনে হোক, খুব একটা পার্থক্য নেই।
প্রশ্ন: টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ব্যাপার আছে যেহেতু, স্থগিত হয়ে যাওয়া টেস্টগুলো তো খেলতেই হবে। হয়তো টানা অনেক ম্যাচ খেলতে হবে তখন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
রাসেল ডমিঙ্গো: খেলা শুরু হলে একের পর এক সিরিজ, একের পর এক ম্যাচ খেলতে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ম্যাচ খেলতে হবে। আমাদের একদল ফিট ক্রিকেটার খুব দরকার পড়বে তখন। শুধু ১১ জন নয়, ১৮-২০ জন ক্রিকেটার থাকতে হবে, যারা যেকোনো সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে প্রস্তুত থাকবে।