>এশিয়া কাপে কাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল। ম্যাচ শেষে মুশফিক জানালেন, তামিমের সাহস দেখে তিনি নিজেও ভীষণ উদ্দীপ্ত হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চেয়েছিলেন।
৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে মোস্তাফিজ রান আউট। ব্যস, ৯ উইকেটে ২২৯ রানেই বাংলাদেশও অলআউট। তামিম ইকবাল আঘাত পেয়ে ফিরে যাওয়ায় ১১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে কারও নামার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সাহসের অন্য নাম হয়ে সেই তামিম-ই যখন ব্যাটিং করতে ফিরলেন, মুশফিক তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন বাড়তি কিছু করার।
মুশফিক ততক্ষণে সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন। কিন্তু তামিমের সাহসিকতা তাঁকে উদ্দীপ্ত করল নতুন করে। আর তাই শেষ উইকেটে জন্ম নিল এক রূপকথা। যেখানে তামিম যদি হন সাহসিকতার অপর নাম মুশফিক তাহলে সেই সাহসিকতাকে প্রাপ্য সম্মান বুঝিয়ে দেওয়া বীর। দুজনেই জাত যোদ্ধা—চোট বিবেচনায় নিলে কথাটা বলাই যায়।
পাঁজরে ব্যথা নিয়েই ইনিংস দ্বিতীয় ওভার থেকে শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন মুশফিক। দু্বাইয়ের প্রচণ্ড গরমে ‘ক্রাম্প’-এর শিকার হয়েছিলেন। সে জন্যই ইনিংসের শেষ দিকে দৌড়েছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কিন্তু ১১তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তামিমের ব্যাটিং করতে আসা নিশ্চয়ই তাঁর সব ব্যথা ভুলিয়ে দিয়েছে! মুশফিক নিশ্চয়ই ভেবেছিলেন, তামিম যদি পারে আমি কেন নয়!
কাল তামিম যা দেখিয়েছেন তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার ভাষায়, ‘লোকের উচিত তামিমকে মনে রাখা’। মুশফিকের ইনিংসও মনে রাখা উচিত। মোস্তাফিজ যখন আউট হন মুশফিক তখন ১৩৫ বলে ১১২। তামিম ফিরে এক হাতে ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সুন্দর দৃশ্য উপহার দেওয়ার পর ভীষণভাবে উদ্দীপ্ত মুশফিক তাঁর ইনিংসের শেষ ১৫ বলে তুলেছেন ৩২!
৪৮তম ওভারে থিসারা পেরেরার কাছ থেকে তুলেছেন ১৫ রান। পরের ওভারে তামিমকে স্ট্রাইকে যেতে না দিতে বুঝেশুনে তুলেছেন ৫ রান। এরপর শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে প্রথম দুই বল থেকেই দুই ছক্কায় ১২। মুশফিকের এই ভয়াল সুন্দর রূপের পেছনে তামিমের বীরত্ব আর দেশের প্রতি টান। তামিম ভাঙা আঙুল নিয়ে যদি দেশের জন্য ব্যাট করতে ফিরতে পারেন, মুশফিক তাহলে পাঁজরের ব্যথা আর পায়ের ‘ক্রাম্প’ নিয়ে পারবেন না কেন?
ম্যাচ শেষে মুশফিক সে কথাই জানালেন, ‘তামিমকে ব্যাট করতে আসতে দেখে ভেবেছি ওর জন্য এবং দেশের জন্য আমার কিছু করা উচিত।’
মুশফিকের সেই কিছু করতে চাওয়ার চেষ্টায় পুড়েছে লঙ্কান বোলাররা। ১১তম জুটিতে তামিমকে সঙ্গে তোলা ৩২ রানই মুশফিকের। তার আগেই ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। পাঁজরে তো ব্যথা ছিলই সঙ্গে ‘ক্রাম্প’—কিন্তু মুশফিকের ওপর তখন কী ভর করেছিল কে জানে! তামিমের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের ওই সময় টুকই তাঁর কাছে সেরা মুহূর্ত, ‘সম্ভবত আমার ব্যাটিংয়ের সেরা মুহূর্ত। কারণ গরমের কারণে তখন মনঃসংযোগ করার সঙ্গে রান নেওয়াও ভীষণ কঠিন ছিল।’
মুশফিক সেই কঠিন কাজটুকুই করেছেন সতীর্থের নিবেদনকে শ্রদ্ধা জানাতে, দেশকে ভালোবেসে। কে বলে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে কিছুই শেখার নেই!
আরও পড়ুন...