শিরোনামটা ‘কী হয়েছে তামিমের’ হলেই বোধ হয় বেশি সময়োপযোগী হতো। যে উইকেটে তাঁর ব্যাট হেসে হেসে কথা বলবে, সাদা বলটাকে উড়িয়ে নিয়ে ফেলার কথা মাঠের এ প্রান্তে-ও প্রান্তে, সেই ওভালে কিনা পর পর দুই ম্যাচে করলেন ১৬ আর ২৪! তামিমের নিশ্চয়ই কিছু একটা হয়েছে।
আগের দিন ঈদ ছিল ইংল্যান্ডে। নিরাপত্তার চাদর মুড়ে বাংলাদেশ দল ঈদের নামাজ পড়েছে রিজেন্ট পার্ক সেন্ট্রাল মস্কে। কিন্তু তামিম হোটেলেই থেকে গেলেন। কিছু একটা তো তাঁর হয়েছেই!
চলুন তাহলে তামিমের ‘অন্দর মহলে’ গিয়েই খোঁজ নিয়ে আসা যাক, তার কি হয়েছে? অথবা আদৌ তামিমের কিছু হয়েছে কিনা।
লন্ডনের ঈদের নামাজের প্রসঙ্গের আগে একটু ক্রাইস্টচার্চে ঘুরে আসা যাক। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চের সফরে বাংলাদেশ দল একদিন ক্রাইস্টচার্চের এক মসজিদে জুমআর নামাজ পড়তে গিয়ে দেখল সেখানে ভয়াবহ বন্দুক হামলা চলছে। পাখির মতো নির্বিচারে মানুষ মারছে ব্রেন্টন টারান্ট নামে এক অস্ট্রেলিয়ান। চোখের সামনে অমন রোমহর্ষক ঘটনা, রাস্তায় পড়ে গুলিবিদ্ধ মানুষকে কাতরাতে দেখা— এগুলো সবচেয়ে বেশি স্পর্শ করেছিল তামিমকেই। এবার লন্ডনে এসেও দেখা গেল, বাংলাদেশ দলের ঈদের নামাজ নিয়ে আইসিসির নিরাপত্তা বিভাগের ঢাক ঢাক গুড় গুড় আচরণ। আগেও যাদের এ রকম বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাদের যে কারও মনে সংশয় জাগতেই পারে, তবে কি এখানেও সেরকম কোনো শঙ্কা! দলের আরও দু-এক জনের সঙ্গে হতে পারে সে কারণেই ঈদের দিন দুপুরে তামিম হোটেলে থেকে গেলেন।
আর ব্যাটসম্যান তামিম? বিশ্বকাপে এসে তাঁরই বা হঠাৎ কি হলো! তামিম কেন বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে ১৬ আর ২৪ রান করে আউট হয়ে গেলেন, সেটির মীমাংসা কিন্তু আরও সহজ। সত্যি বলতে, এটা এখনই প্রশ্ন তোলার মতো কোনো প্রসঙ্গই নয়। বিশ্বকাপে তামিমের সামনে আরও অন্তত সাতটি ম্যাচ আছে, বাংলাদেশ দল এরপর সেমিফাইনাল বা ফাইনালে গেলে তো আরও বেশি ম্যাচ। নিজেকে মেলে ধরার অফুরন্ত সুযোগ আছে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের সামনে। তামিম বলেই আশাটা বেশি, কারণ এ রকম পরিস্থিতি কীভাবে কাটিয়ে তুলতে হয়, সেটি তাঁর চেয়ে ভালো কম ব্যাটসম্যানই জানেন। কিছু আত্মবিশ্বাসী শট, একটা ভালো ফিফটি, ৭০-৮০ রানের ইনিংস... এটুকুই পারে তামিমের হাতের বাঁধন খুলে দিতে। এরপরই দেখবেন ইংল্যান্ড ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে তামিম কী দুরন্ত হয়ে ওঠেন।
এটা একটা আশা এবং সে আশার পিঠে আরও আকটি আশা যে, তামিম বেশির ভাগ সময়ই নিরাশ করেন না।
বিশ্বকাপের আগে ওভালের ম্যাচ নিয়ে তামিম নিজেই বেশি রোমাঞ্চিত ছিলেন। থাকবেন না-ই বা কেন! এবার আসার আগে ওভালে তাঁর দুটি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সে দুই ম্যাচেই করেছিলেন দুর্দান্ত ব্যাটিং। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৫। এরপর আবার যখন লন্ডনের এ মাঠে আসবেন, তামিমের আশার বেলুন উড়িয়ে আসাই স্বাভাবিক। আর বড় মঞ্চে বড় কিছু করার তাড়না তাঁর সব সময়ই। আমিরাতে ২০১৮ এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে আঙুলে চোট পেয়ে বাকি ম্যাচগুলো খেলতে পারলেন না। সেটি নিয়ে তাঁর হতাশার কথা কে না জানে! দেশে ফেরার পর বারবারই বলেছেন, বড় আশা ছিল এশিয়া কাপে ভালো কিছু করবেন।
এবার ইংল্যান্ডেও একই রকম আশা নিয়ে এসেছেন তামিম। মুখ ফুটে না বললেও বিশ্বকাপের জন্য তাঁর দীর্ঘ শারীরিক, মানসিক প্রস্তুতিই বলে দিয়েছে সব। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর একটু কি চাপ নিয়ে নিলেন! ওভালে রান করার সহজ সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে গেল। অন্য সব ব্যাটসম্যান রান পেলেন, কিন্তু নিজের সামর্থ্যরে তুলনায় তিনি কিছুই করতে পারলেন না। আজ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও হয়তো সেই হতাশাই পেছন থেকে টেনে ধরেছিল কলার। ব্যাটিংয়ে প্রথম ম্যাচেও অস্বস্তি ছিল, এ ম্যাচেও ফার্গুসনের শর্ট বলে আকাশে বল তুলে দিলেন একটু আগে খেলে।
তাতে তামিমের হতাশার জ্বলুনিটা হয়তো আরেকটু বেড়েছে। পরের ম্যাচগুলোতে ভুগতে পারেন আরও বেশি স্নায়ুচাপে। তবু তামিমের কাছেই আশা। তিনি নিজেই পারেন নিজেকে ফেরাতে। আগে পেরেছেন, ভবিষ্যতেও পারবেন। শুধু মনের মধ্যে শক্ত করে নেবেন বিশ্বাসটা, ‘আমার আসলে কিছুই হয়নি।’