কখনো কখনো একটা খেলাই ঘুরিয়ে দিতে পারে একটা দলের কক্ষপথ, একটা জয়ই হয়ে উঠতে পারে অনেক জয়ের চেয়েও বড়, কখনো কখনো জয়ের চেয়েও কীভাবে জেতা হলো, সেটাই হয়ে উঠতে পারে বড় প্রভাবক। আমি বিশ্বাস করি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়টা বাংলাদেশের সে রকমই একটা জয়। আমি চাই এটা আপনারাও বিশ্বাস করেন। এবং ক্রিকেটাররাও বিশ্বাস করুক। কারণ, আপনি তখনই পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে পারবেন, যখন সেটা আপনি বিশ্বাস করবেন। সবার সম্মিলিত বিশ্বাস সবার মধ্যে বিদ্যুৎতরঙ্গের মতো পজিটিভিটি ছড়ায়। আর তাতেই আসে সাফল্য।
ক্রিকেট বিশ্বকাপের রাউন্ড রবিন লিগ মোটামুটি মাঝামাঝি জায়গায় চলে এসেছে। পয়েন্ট টেবিলের ওপরের চার দলের দিকে তাকালে বলা যায়,
সেখানে কোনো সারপ্রাইজ নেই। পাঁচ নম্বরে আছে বাংলাদেশ। এখানেও শক্তির হিসাবে খুব বড় সারপ্রাইজ নেই। এখন আমাদের লক্ষ্য টপ ফোরের ন্যূনতম একটা দলকে হারানো এবং আমাদের নিচের পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পুরো পয়েন্ট লাভ করা।
আমাদের থিংকট্যাংক খোলা মন নিয়ে পরিস্থিতি পড়তে পারছে বলেই মনে হচ্ছে। ব্যাটিংয়ে সাকিব আল হাসান তাঁর সেরা ফর্মে আছেন। তামিম-মুশফিক-সৌম্যকে ঠিকঠাক লাগছে। মাঝখানে আমাদের একটু নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন দরকার ছিল। সেই জায়গায় লিটনকে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত বলে দিচ্ছে দলের নেতারা ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আমি নিশ্চিত, তাঁরা সামনের ম্যাচগুলোর দিকেও নজর রাখবেন এবং সেই অনুযায়ী একাদশ সাজাবেন।
কারণ, খেলাটাকে যদি একটা স্ট্র্যাটেজিক ওয়ারফেয়ার মনে করি, তাহলে সুন জুর আর্ট অব ওয়ার–এর একটা বাণী মনে রাখতে পারি: জমিনে বয়ে চলা পানি একটা কোনো নির্দিষ্ট আকার রাখতে পারে না। কারণ, তার আকার নির্ভর করবে কোন জমিনের ওপর সে চলছে তার ওপর। এই কথাটির মতো খেলার কৌশলও তেমনি নির্ভর করবে প্রতিপক্ষের শক্তি আর দুর্বলতার ওপর।
আসুন আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের নেতৃস্থানীয় খেলোয়াড়দের কৌশল নির্ধারণের সেই সক্ষমতা আছে।
আমরা তাঁদের ওপর একটু বিশ্বাস রাখি, চলেন। আর তাঁদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাবুক থেকে নিস্তার দিই, যেন দলের প্রধান ব্যাটসম্যানদের একজনকে সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ককে ডিফেন্ড করতে না হয়। আলোচনা-সমালোচনা সবই চলতে পারে, কিন্তু আসুন আমরা এমন কোনো ভাষা ব্যাবহার না করি যাতে তাঁদের মনটা বিক্ষিপ্ত হয় বা তাঁরা হতোদ্যম বোধ করেন।
মনে রাখবেন, আমরা একসঙ্গে জিতব, একসঙ্গেই হারব। হারলে শুধু খেলোয়াড়েরা হারবে আর জিতলে আমরা সবাই মিলে জিতব—এমন তো নয়।
শেষ করব অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আজকের ম্যাচটি দিয়ে। এখন থেকে সব খেলায় আমাদের জন্য ডু অর ডাই। আমার ধারণা, এ লড়াইয়ে আজ আমরা অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে নামব, যদি না রুবেলকে দলে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়।
ওয়ানডে খেলায় মাঝের ২০ ওভার খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ২০ ওভার হচ্ছে অনেকটা তরকারিতে লবণের মতো। চোখে পড়ে না, কিন্তু ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারলে পুরো ব্যঞ্জনই ধ্বংস। ব্যাটিংয়ের সময় এই মাঝের ২০ ওভারে উইকেট না হারিয়ে নিয়মিত সিঙ্গেল নিলে এবং বোলিংয়ের সময় যতটা সম্ভব রান নিয়ন্ত্রণ করে কিছু উইকেট তুলে নিতে পারলে আমরা নিজেদের সামনে সুযোগ সৃষ্টি করতে পারব। তারপর বাকিটা দেখা যাবে শেষ ১০ ওভারে।
ডু অর ডাই।