>২০১৮ সাল থেকে দুই শর নিচে সবচেয়ে বেশিবার অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। ১১ বার। বাংলাদেশ হয়েছে ৯ বার। কিন্তু সেটি ইংল্যান্ডের চেয়ে প্রায় অর্ধেক ইনিংস খেলেই!
বিশ্বকাপ জেতার মূল্য দিচ্ছে ইংল্যান্ড। অন্তত বিশেষজ্ঞদের মতামতে সে সুর টের পাওয়া যাচ্ছে ইদানীং। ২০১৯ বিশ্বকাপ জেতার জন্য ওয়ানডেতে বেশি মনোযোগ দেওয়ারই নাকি খেসারত দিচ্ছে ইংল্যান্ড। এ কারণেই সিরিজ শুরুর আগেও ফেবারিটের তকমা জড়ানো ইংল্যান্ড সিরিজের মাঝপথেই অ্যাশেজ খোয়ানোর ভয়ে আছে।
ইংল্যান্ড যে ভালো করছে না, সেটা হেডিংলি টেস্টের প্রথম ইনিংসের পর নানা উপাত্ত টেনে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন পরিসংখ্যানবিদেরা। ২০১৮ সাল থেকে কাল পর্যন্ত টেস্টে চারবার এক শর নিচে গুটিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। গড়ে প্রায় প্রতি তিন ইনিংসে একবার দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে। এ পরিসংখ্যানই চিন্তায় ফেলে দিতে পারে বাংলাদেশকে। কারণ, বাংলাদেশের অবস্থা যে এদিক থেকে সবচেয়ে বাজে।
২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড। কাল পর্যন্ত ৩৭ ইনিংসে ব্যাট করা ইংল্যান্ড এর মাঝে ১১ বার দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে। প্রতি ৩.৩৬ ইনিংসে একবার দুই শর নিচে গুটিয়ে যাওয়া আসলেই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের টেস্ট মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। এ সময়ে এতবার কেউ দুই শর নিচে অলআউট হয়নি। ইংল্যান্ডের ধারে কাছে আছে দুটি দল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ। ৯ বার করে দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে দুই দল। উপমহাদেশের বাকি দুই দলও পিছিয়ে নেই। ৮ বার করে এ রকম গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত-পাকিস্তান।
বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার ব্যাপার মোট সংখ্যায় নয়। যদি গড় করা হয়। ইংল্যান্ড সবচেয়ে বেশি দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে ঠিকই, আবার সবচেয়ে বেশি ম্যাচও খেলেছে। আবার ইংল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশ প্রায় অর্ধেক ম্যাচ খেলে মাত্র ২ কম ইনিংসে দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে। ফলে গড়ে দুই শর নিচে অলআউট হওয়ার ধাক্কা বাংলাদেশকেই বেশি হজম করতে হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা ৯ বার দুই শর নিচে গুটিয়ে গেছে ৩৪ ইনিংসের মধ্যে। যেটির গড়ে ৩.৭৮ ইনিংস। আর বাংলাদেশ এ ‘কীর্তি’ করেছে ১৯ ইনিংসেই! প্রতি ২.১১ ইনিংসে একবার দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। নিয়মিত টেস্ট খেলছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ধারে কাছে কেউ নেই। প্রতি দুই ইনিংসে একবার অলআউট হওয়া আফগানিস্তান খেলেছেই মাত্র ২ টেস্ট, আর আয়ারল্যান্ড ৩টি। মাত্র ২ টেস্ট খেলেও জিম্বাবুয়ে (২.৫) বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। তা তো থাকবেই। বাংলাদেশ যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ঘরের মাঠেই দুবার দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে!
২০১৮ সালের পর দলগুলোর ব্যাটিং:
দল | ইনিংস | সর্বনিম্ন | <২০০ ইনিংস | <২০০ রান প্রতি ইনিংস |
আফগানিস্তান | ৪ | ১০৩ | ২ | ২ |
অস্ট্রেলিয়া | ৩০ | ১০৭ | ৬ | ৫ |
বাংলাদেশ | ১৯ | ৪৩ | ৯ | ২.১১ |
ইংল্যান্ড | ৩৭ | ৫৮ | ১১ | ৩.৩৬ |
ভারত | ২৮ | ১০৭ | ৮ | ৩.৫ |
আয়ারল্যান্ড | ৬ | ৩৮ | ৩ | ২ |
নিউজিল্যান্ড | ১৬ | ৯০ | ৩ | ৫.৩৩ |
পাকিস্তান | ২১ | ১৩৪ | ৮ | ২.৬৩ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ২৮ | ৭৩ | ৮ | ৩.৫ |
শ্রীলঙ্কা | ৩৪ | ১০৪ | ৯ | ৩.৭৮ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ২৪ | ৯৩ | ৮ | ৩ |
জিম্বাবুয়ে | ৪ | ১৮১ | ১ | ২.৫ |
নিজেদের মাটিতে বহুদিন টেস্ট খেলতে না পারা পাকিস্তান আছে বাংলাদেশের পরই। প্রতি ২.৬৩ ইনিংসে একবার দুই শর নিচে অলআউট হয়েছে পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৩) আছে এরপরই। যদিও অ্যান্টিগায় আজ আর ১১ রান করতে না পারলেই পাকিস্তানের আরেকটু চলে আসবে উইন্ডিজ। ইংল্যান্ডের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা (৩.৫)। হেডিংলিতে প্রথম ইনিংসে ১৭৯ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া একটু স্বস্তি পেতে পারে। কারণ, দেখা গেছে প্রতি পাঁচ ইনিংসেই একবার হয় এমন ঘটনা। শ্রীলঙ্কায় সিরিজ হারের মুখে থাকলেও দুই শর নিচে অলআউট হওয়ায় সবচেয়ে বেশি আপত্তি দেখাচ্ছে নিউজিল্যান্ডই (৫.৩৩)। দুই শর নিচে অলআউট হওয়াটাই শুধু মূল দুশ্চিন্তা নয়। এমন ইনিংসেও কন্ডিশন বিবেচনায় ম্যাচ জেতা সম্ভব। কিন্তু এক শ রানের নিচে থেমে গেলে সে ম্যাচে এগোনো কঠিন। গত দুই বছরে এ ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের ধারেকাছে কেউ নেই। চার বার এক শর নিচে অলআউট হয়েছে দলটি। বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ হয়েছে একবার করে। ২০১৯ সালে সর্বনিম্ন স্কোর করার রেকর্ড আয়ারল্যান্ডের (৩৮)। কিন্তু ২০১৮ সালে সে ‘অর্জন’ ছিল বাংলাদেশেরই। অ্যান্টিগাতে ৪৩ রানে ধসে পড়ার সে স্মৃতি নিশ্চয় এত দ্রুত ভোলেনি বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ!
২০১৮ সালের পর টেস্টে সর্বনিম্ন স্কোর
স্কোর | দল | প্রতিপক্ষ | ভেন্যু |
৩৮ | আয়ারল্যান্ড | ইংল্যান্ড | লর্ডস |
৪৩ | বাংলাদেশ | ওয়েস্ট ইন্ডিজ | অ্যান্টিগা |
৫৮ | ইংল্যান্ড | নিউজিল্যান্ড | অকল্যান্ড |
৬৭ | ইংল্যান্ড | অস্ট্রেলিয়া | লিডস |
৭৩ | দক্ষিণ আফ্রিকা | শ্রীলঙ্কা | গল |