বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর ভবিষ্যৎ আপাতত অনিশ্চিত, বলাই যায়। তবে ঢাকা টেস্টের আগের দিন এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক। অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এ প্রসঙ্গে মন্তব্যও করতে চাননি তিনি।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়ই ডমিঙ্গোর সঙ্গে নতুন করে দুই বছরের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বিসিবি। তবে অন্য জায়গা থেকে ভালো প্রস্তাব আছে জানিয়ে চুক্তিতে কঠিন একটি শর্ত যোগ করেছেন ডমিঙ্গো। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চুক্তি বাতিল করলে পুরো এক বছরের বেতন দিতে হবে তাঁকে। অবশ্য সূত্র অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে বিসিবির চিন্তাভাবনায় ডমিঙ্গোকে বিদায় করে দেওয়ার ব্যাপারটিও আছে।
ভালো বিকল্প পেয়ে গেলে এই ক্ষতি স্বীকার করে হলেও তারা ডমিঙ্গোর বিদায়ী সংবর্ধনার আয়োজন করে ফেলতে রাজি। তবে তার আগে যে দর–কষাকষির সম্ভাবনা, সেটি হয়ে যেতে পারে পাকিস্তান সিরিজ শেষ হওয়ার আগেই, অথবা সিরিজের পরপরই।
শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড সফরে ডমিঙ্গো অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব নিয়েই যাবেন, সংবাদমাধ্যমে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করা হলে মুমিনুল বলেছেন, ‘দেখেন, এটা আমি আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম যে এ রকম একটা ঘটনা হতে চলেছে। তো একজন অধিনায়ক হিসেবে, পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এটা নিয়ে আমার কথা বলা কঠিন। এটা তো বোর্ডের সিদ্ধান্ত, বোর্ড কী করবে। এগুলো নিয়ে আমার কথা বলাও কঠিন আর এগুলো নিয়ে আমি কথা বলতেও চাই না।’
ডমিঙ্গোকে নিয়ে সৃষ্ট সামগ্রিক আবহের কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে তাঁর শেষটা আরও কাছে বলেই মনে হচ্ছে। পাকিস্তান সিরিজে টিম ডিরেক্টর হিসেবে পরিচালক খালেদ মাহমুদকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। তাতে করে ডমিঙ্গোর কাজের ব্যাপ্তি সংকুচিত হয়েছে নিশ্চিতভাবেই। তবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজেও হতাশা ‘উপহার’ দেওয়ায় বিসিবির পরিচালকদের মধ্যে একটা অংশ আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন কোচের ওপর থেকে। ক্রিকেটারদের কেউ কেউ নাকি দিয়েছেন অনাস্থা ভোট।
সব মিলিয়ে বিসিবি মনে করছে, ডমিঙ্গোর কাছ থেকে আর ভালো কিছু পাওয়ার আশা করা বৃথা। তাঁর পক্ষেও কঠিন হবে এই দলের কাছ থেকে ভালো কিছু বের করে আনা। কারণ, দল ও বিসিবির আবহাওয়াটা আর তাঁর অনুকূলে নেই। পাকিস্তান সিরিজের পর ডমিঙ্গোকে আর বাংলাদেশ দলের সঙ্গে দেখা না গেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিসিবির একটি সূত্র সম্প্রতি বলেছে, প্রধান কোচ হিসেবে নতুন কাউকে না পাওয়া পর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে পারেন ডমিঙ্গোই। ভেতরে ভেতরে নতুন কোচ খোঁজাও হচ্ছে এবং সে তালিকায় এর আগে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করে যাওয়া দু–একজন কোচই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন। ব্যাপারটা হয়তো জানেন ডমিঙ্গো নিজেও। চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে এ দক্ষিণ আফ্রিকান আগ বাড়িয়ে টেস্টের বাইরেও অন্যান্য বিষয়ে প্রশ্ন নিতে চেয়েছেন। সেখানে দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট–কাঠামো নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এর আগে বিশ্বকাপ–ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে বিসিবির দুই পরিচালক এনায়েত হোসেন ও জালাল ইউনুসকে নিয়ে গড়া তদন্ত কমিটি বিশ্বকাপের পরপরই কাজ শুরু করেছে। খেলোয়াড়–কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে কথা বলার পর ডিসেম্বরের শুরুর দিকেই বোর্ড সভাপতির কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেন তাঁরা। অবশ্য যত দূর জানা গেছে, ব্যর্থতার কারণ হিসেবে তাতে ক্রিকেটীয় ভুল আর খেলোয়াড়দের টি–টোয়েন্টি সামর্থ্যের অভাবই উঠে এসেছে বেশি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের পরপরই দুই টেস্ট সিরিজের জন্য নিউজিল্যান্ড রওনা হয়ে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের।