জেতার চেষ্টাই করল না বাংলাদেশ!
জেতার চেষ্টাই করল  না বাংলাদেশ!

‘টেস্ট’ খেলে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

কিছুদিন আগে বিসিবি সভাপতি এমন একটা অভিযোগ করেছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা নাকি টেস্টে ‘ওয়ানডের’ মেজাজে খেলেন, আর ওয়ানডে খেলেন টেস্টের মেজাজে। তাঁর কথাটা হয়তো কথার কথা কিংবা ক্রিকেট দলের নানা ব্যর্থতায় অভিমান করেই বলেছিলেন।

কিন্তু আজ ওয়েলিংটনে বাংলাদেশ দল যেন বিসিবি সভাপতির কথাটা বাস্তবে রূপ দিতে উঠেপড়ে লেগেছিল! নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে কোথায় ধবল ধোলাই এড়ানোর লড়াই করবেন তাঁরা, তা নয়, মাঠে টেস্ট না ওয়ানডে কী খেলতে নেমেছেন, সেটিই যেন ভুলে গেলেন! রীতিমতো ‘টেস্ট’ খেলে কিউইদের ৩১৮ রানের জবাবে ১৫৪ রানে অলআউট বাংলাদেশ। এ জন্য তারা খেলেছে ৪২.৪ ওভার। ১৬৪ রানের এ জয়ে ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করল নিউজিল্যান্ড।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন কোথায় বাড়তি উদ্দীপনায় উদ্ভাসিত হবেন তাঁরা, তা নয়, উল্টো নির্বিষ আর প্রেরণাহীন ক্রিকেট খেললেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকাররা।

৩১৯ রানের লক্ষ্যের পেছনে ছোটাটা কঠিন হবে—এটা জানা ছিল। কিন্তু তাই বলে ক্রিকেটারদের মধ্যে সামান্য চেষ্টাটা থাকবে না! ৭ ওভারে স্কোরবোর্ডে ২৬ রান তুলতেই ৩ উইকেট পড়ে যায়। কিন্তু শুরুর ধাক্কাটা সেই যে গোটা দলকে খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল, তা থেকে আর বেরিয়েই আসা গেল না। আধুনিক যুগে ওয়ানডে ম্যাচ মানেই রানের ফুলঝুরি, চার-ছক্কার ছড়াছড়ি।

যা একটু খেললেন মাহমুদউল্লাহই।

ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে সেটি ঠিকই দেখা গেল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটিং যেন পড়ে রইল ‘প্রস্তর যুগে’। আজ ২০২১ সালে এসেও বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে সেই ১৮-১৯ বছর আগের ব্যাপারটা দেখা গেল। যখন প্রতিপক্ষ আগে ব্যাটিং করে স্কোরবোর্ডে বড় কোনো সংগ্রহ জমা দেওয়ার পরপরই ম্যাচ জয়ের আশা ছেড়ে ‘সম্মান রক্ষার’ লড়াইয়ে নামত বাংলাদেশ দল। আজ ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের ৩১৮ রানের জবাবে কিন্তু সে কাজও করা যায়নি।

তামিম ইকবাল আর লিটন দাসের ওপেনিং জুটিতে রান এসেছে ১০। নিউজিল্যান্ড সফরের তিনটি ওয়ানডেতেই তারা ব্যর্থ হলেন। তবে আজ তামিম ফিরেছেন শুরুতেই। লিটন কিছুক্ষণ টিকে ছিলেন। কিন্তু ২১ রানের বেশি করতে পারেননি। ট্রেন্ট বোল্ট আর ম্যাট হেনরির বোলিংয়ের সামনে নিজেকে কেমন যেন গুটিয়ে রেখেছিলেন লিটন। হেনরির বলে পুল করতে গেলে তা যখন থার্ড ম্যানের দিকে বাতাসে ভাসছিল, সেটিই দৌড়ে এসে এক হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে লুফে নেন বোল্ট।

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ছবিটা ছিল এমনই।

এমন ক্যাচে উইকেট হারিয়ে এরপর যেন গোটা দলের ওপরই আতঙ্ক ভর করল। মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম কেউই নিজেদের ফিরে পেলেন না। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা মিঠুন সংগ্রামের ইতি টানেন ৩৯ বলে মাত্র ৬ রান করে। মুশফিকুর রহিম ৪৪ বলে করেন ২১। ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কতটুকু খোলসে ঢুকিয়েছিলেন, এই দুটি ইনিংস সেটিরই প্রমাণ। এর আগে অবশ্য সৌম্য সরকার খোলসের বাইরে বের হতে গিয়ে পরিচয় দিয়েছেন আরও একটি ব্যর্থতার।

পরিস্থিতি প্রতিকূলে ছিল হয়তো, নিউজিল্যান্ডের বোলাররা বোলিং করছিলেন দুর্দান্ত, বিরুদ্ধ কন্ডিশন—সবই ঠিক আছে, কিন্তু এমনটা নিশ্চয়ই প্রত্যাশিত ছিল না বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে! বিন্দুমাত্র লড়াই করা যাবে না? রঙিন পোশাকে খেলতে নেমে এমন ধীরলয়ের ব্যাটিং হতাশ করবে ওয়েলিংটনের দর্শকদেরও। তাই তো শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ যখন কিছুটা হাত খুলে ব্যাটিং করলেন, বেসিন রিজার্ভের দর্শকেরা তখন দারুণভাবে হাততালি শোনালেন। হ্যাঁ, দলের একমাত্র ‘সফল’ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ একটা ফিফটি পেয়েছেন। কিন্তু সেটি তাঁর নিজের রেকর্ড সমৃদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই করছে না। আসলে মাহমুদউল্লাহরও কিছু করার ছিল না।

ছবিটি কিন্তু বলে দেয় আজকের ম্যাচের গল্প

কোচ রাসেল ডমিঙ্গো বা ব্যাটিং কোচ জোনাথন লুইস ওপরের দিকে যাদের ওপর আস্থা রেখেছিলেন, তাঁরা যা খেললেন ! মজার ব্যাপার হলো, ইনিংসের সর্বোচ্চ জুটিটা এল ১০ম উইকেটে এসে—৫২ রান। রুবেল হোসেনের সঙ্গে। এমন অদ্ভুত কিছু বোধ হয় বাংলাদেশের ম্যাচেই দেখা যায়। মাহমুদউল্লাহ ৭৩ বলে ৭৬ রান করেছেন। তাঁর ইনিংসে ছিল ৬টি চার আর ৪টি ছক্কা। মাহমুদউল্লাহর মতো ইনিংস আর দুজন খেলতে পারলেই এ ম্যাচের বর্ণনাই অন্য রকমভাবে দেওয়া যেত।

নিউজিল্যান্ডের বোলারদের পারফরম্যান্স বরাবরের মতোই দুর্দান্ত। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তাঁদের পারফরম্যান্সের গ্রাফটাকে ঠিক রাখতেও যথেষ্ট সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন। জিমি নিশাম নিয়েছেন ২৭ রানে ৫ উইকেট। ম্যাট হেনরিও ২৭ রান দিয়েছেন, নিয়েছেন ৪ উইকেট। একটি উইকেট দখল করেছেন কাইল জেমিসন।