টেস্ট খেলতে হবে না, কফি খাও

ভারত ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে বিরাট কোহলির একটি মন্তব্য খেপিয়ে দিয়েছে অনেককে। ফাইল ছবি
ভারত ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে বিরাট কোহলির একটি মন্তব্য খেপিয়ে দিয়েছে অনেককে। ফাইল ছবি
>এবারের ইংল্যান্ড সফরে দলের লক্ষ্য হিসেবে বিরাট কোহলি বলেছিলেন, কফি উপভোগ করা আর ঘুরেটুরে বেড়ানো। রসিকতার ছলে বলা সেই কথাটাই হজম করতে হচ্ছে ভারতকে। এবার ভারতীয় ক্রিকেট দল যে টেস্টের জন্য যথেষ্ট অনুশীলনই করেনি

প্রশ্নটার জবাব হালকা মেজাজে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। তখন কি আর জানতেন, স্রেফ মজা করে বলা কথাটা এত সিরিয়াস রূপ নেবে! এবারের ইংল্যান্ড সফরে আপনার লক্ষ্য কী, জবাবে ভারত অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘গতবার ইংল্যান্ড সফরের আগেও আমাকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন বলেছিলাম, আমার লক্ষ্য ইংল্যান্ডে গিয়ে একটু ঘুরেফিরে দেখা, আর কফি খাওয়া। আমি একটু অন্যভাবে সবকিছু দেখি। যেখানেই যাই, সেই দেশটিকে উপভোগ করার চেষ্টা করি।’

এই কথাই এখন হজম করতে হচ্ছে কোহলিকে। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক সন্দীপ পাতিল বলেছেন, ‘প্রথম দুই টেস্টে ভারতের খেলা দেখার পর মনে হচ্ছে, অধিনায়কের কথাটা ওরা বেশ সিরিয়াসলি নিয়েছিল। ইংলিশ কন্ডিশনে ওরা আক্ষরিক অর্থেই স্রেফ কফি উপভোগ করছে। জানি কেউ সমালোচনা পছন্দ করে না। কিন্তু কোনো দল যখন এতটা বাজে খেলে, তাদের বাস্তবতা, সত্যি আর সমালোচনার জন্যও প্রস্তুত থাকা উচিত।’

ভারতীয় দলের কোনো অধিনায়ক ইংল্যান্ড সফর নিয়ে কফি খাওয়ার মতো মন্তব্য করতে পারেন, যেন বিশ্বাসই হতে চাইছে না পাতিলের, ‘আগের যুগে আমরা ভেবেই কাহিল হয়ে যেতাম, আমাদের আরও ভালো করতে হবে, শিখতে হবে, কঠোর অনুশীলন করতে হবে। সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনুসরণ করতে হবে, তাঁদের কাছ থেকে শিখতে হবে, পরামর্শ নিতে হবে। কিন্তু একাধিকবার ইংল্যান্ড সফর করেছে, সেখানে সফল হয়েছে এমন ক্রিকেটারের পরামর্শও কোহলিদের দরকার পড়েনি। ইংল্যান্ডের কফি পেয়েই ওরা খুশি। সত্যি বলতে কি, ইংল্যান্ড সফর করেছে এমন ভারত অধিনায়কদের যখন দেখি, অজিত ওয়াদেকার, সুনীল গাভাস্কার, শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি আর আজহার; ওদের কেউ কখনো এমন গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেনি।’

এখনকার ক্রিকেটারদের বায়নাক্কাও অনেক বেশি বলে মনে করেন পাতিল। ভারতের এবারের ইংল্যান্ড সফরে যেমন মাঝে প্রায় দুই সপ্তাহের মতো বিরতি ছিল। এর মধ্যে একটি চার দিনের অনুশীলন ম্যাচ ছিল। সেটিও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধে তিন দিনের ম্যাচ বানানো হয়। এ নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তুলেছিলেন গাভাস্কার। এজবাস্টন টেস্টের আগে কোহলিরা ৫ দিনের বিরতি পেয়েছিলেন। পাতিল বলছেন, তাঁদের সময়ও তো এমন লম্বা সফর ছিল। তখন তো বিরতির প্রশ্ন ওঠেনি, ‘মনে পড়ছে আমার প্রথম অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজি দ্বীপ সফরের কথা। সেটা ছিল সাড়ে চার মাসের দীর্ঘ এক সফর। কিন্তু আমাদের অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার নিজে কখনো কোনো ছুটি নেননি, কাউকে নিতেও দেননি। পুরো সাড়ে চার মাস আমাদের ভাবনাজুড়ে ছিল শুধুই ক্রিকেট। আমরা ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছি, ক্রিকেটই খেলেছি।’

১৯৮২ ইংল্যান্ড সফরের উদাহরণও টেনেছেন পাতিল, ‘সেবার আমাদের দুই মাসের ইংল্যান্ড সফর ছিল। সুনীল গাভাস্কার ছিলেন আমাদের অধিনায়ক। তিনি নিজে ছুটি নেননি, কাউকে নিতেও দেননি। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানে দেড় মাসের সফরেও কেউ কোনো ছুটি নেয়নি। ১৯৮৬ সালের ইংল্যান্ড সফরে আমাদের অধিনায়ক ছিলেন কপিল দেব। তিনিও কোনো ছুটির কথা বলেননি। ফলাফল ছিল, আমরা সেবার সিরিজ জিতেছিলাম।’

এখনকার ক্রিকেটারদের বাড়াবাড়ি রকমের ব্যস্ততা ও ঠাসা সূচির কথা পাতিল বিবেচনায় আনছেন। কিন্তু যত ভালো ক্রিকেটারই হন না কেন, অনুশীলনের কোনো বিকল্প আছে বলে মনে করেন না তিনি, ‘আমরা ক্রিকেট খেলেছি, প্রচুর অনুশীলনও করেছি। এখনকার খেলোয়াড়েরা অনুশীলন ছাড়াই ক্রিকেট খেলে। তার ফলাফল তো আপনাদের সামনেই।’

তাঁদের সময়েও ক্রিকেটারদের ব্যস্ততা কম ছিল না বলে মন্তব্য পাতিলের, ‌‘এখনকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খুব ঠাসা। কিন্তু এখনকার ক্রিকেটারদের শুধু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে হয়। আমাদের সময়ে সত্তর, আশি বা নব্বইয়ের দশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে ক্লাব ক্রিকেট, অফিস ক্রিকেট, ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে হতো। আমরা প্রতিটি ম্যাচের আগে কঠোর অনুশীলন করতাম। গত চার দশকে ক্রিকেট অনেক বদলেছে। কিন্তু আপনি যদি যথেষ্ট অনুশীলন না করেন, লক্ষ্য কখনোই পূরণ হবে না। কথা কম, বেশি অনুশীলন আর বেশি ক্রিকেট; এটাই আমার পরামর্শ।’