ঘরের মাঠে আরও একটি টেস্ট সিরিজ, আরও একটি সিরিজ হার। গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ হারের পর এবার প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। এ নিয়ে ঘরের মাঠে টানা তিনটি টেস্ট সিরিজ হারল মুমিনুল হকের বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ড্রতে শেষ হওয়া টেস্ট ম্যাচের পর মিরপুর টেস্টও ড্রতে শেষ হতে পারত। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতায় সেটি হয়নি। একই টেস্টে দুইবার ব্যাটিং ধস ঘরের মাঠে বাংলাদেশের আরও একটি সিরিজ হারের কারণ।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছে এর মূল কারণ, দলে টেস্ট সংস্কৃতির অভাব। এটি গড়তে এই মুহূর্তে কী দরকার, সেটিও বলেছেন ডমিঙ্গো, ‘এই টেস্ট সিরিজের আগে আমি ছেলেদের একটা চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। ওদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা এর আগে কখনো জিম্বাবুয়ে ছাড়া বড় কোনো টেস্ট দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছ কি না? উত্তর ছিল, না। ওরা কখনোই বড় কোনো দলকে টেস্ট সিরিজে হারায়নি। আমরা যতক্ষণ না পর্যন্ত বড় টেস্ট সিরিজ জেতা শুরু করব, আমরা পরবর্তী ধাপে যেতে পারব না। আমাদের বড় সিরিজ জিততে হবে।’
শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে বাংলাদেশ দলের সংস্কৃতির পার্থক্যটাও উঠে এসেছে ডমিঙ্গোর কথায়। টেস্ট ক্রিকেটে খালেদ আহমেদ ও ইবাদত হোসেনের মতোই অভিজ্ঞ দুই লঙ্কান পেসার কাসুন রাজিতা ও আসিতা ফার্নান্ডো। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স দুই দলের পেস আক্রমণের পার্থক্যটা স্পষ্ট। রাজিতা ও ফার্নান্ডো যে প্রথম শ্রেণির প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটার হয়েছেন, খালেদ ও ইবাদত সেটি পাননি বললেই চলে।
ডমিঙ্গো যেমন বলছিলেন, ‘টেস্ট অভিজ্ঞতা হয়তো এক। কিন্তু ওদের তরুণ ক্রিকেটারদের প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞতা অনেক। এ ক্ষেত্রে টেস্ট সংস্কৃতির একটা পরিবর্তন আসতে হবে। তবে এই পরিবর্তনটা আসবে যখন আমরা আরও টেস্ট জিততে পারব। টেস্ট ক্রিকেট খেলার আগ্রহ, ইচ্ছা তখনই বাড়বে, যখন আমরা বড় একটা টেস্ট সিরিজ জিতব।’
পার্থক্যটা শুধু খেলার মাঠেই সীমাবদ্ধ নয়, ‘ছোট ছোট পার্থক্য। যেমন কীভাবে টেস্ট ক্রিকেটারদের ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হয়, টেস্ট ক্রিকেটারদের কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, মাঠে কেমন দর্শক আসে। কোনো সন্দেহ নেই, সাদা বলের ক্রিকেট এখানে বেশি গুরুত্ব পায়। আমি মনে করি, আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ভালো দল হতে শুরু করেছি। আমরা প্রতিযোগিতা করতে শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের আরও এক ধাপ উন্নতি করতে হবে। আমি পার্থক্যটা কমে আসতে দেখছি।’
ডমিঙ্গোর সংবাদ সম্মেলনে উইকেটের চরিত্রের প্রসঙ্গও এসেছে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা মুহূর্তগুলো এসেছে স্পিন সহায়ক উইকেটে, যেখানে ব্যাটিং-বোলিংয়ের সুষম প্রতিযোগিতা ছিল না বললেই চলে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই টেস্ট জয়গুলো বাংলাদেশের ভালোর চেয়ে ক্ষতিই বেশি করেছে বলে ডমিঙ্গোর দাবি, ‘এটা হয়তো আমাদের একটা টেস্ট ম্যাচের জন্য সাহায্য করবে। কিন্তু দীর্ঘ পরিসরের জন্য টেস্ট দল গড়তে সাহায্য করবে না। আগের টেস্ট জয়গুলোর প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, ওই টেস্ট জয় আমাদের পরে হয়তো ক্ষতিই করেছে। কারণ, এরপর ভালো উইকেটে যখন খেলেছি, তখন ভালো করিনি। আমরা যদি স্পিন সহায়ক উইকেট বানিয়ে খেলি, এরপর ঘরের বাইরে ভালো উইকেটে খেলি, তাহলে আমাদের কোনো সুযোগই থাকবে না। আমাদের টেস্ট সংস্কৃতি গড়তে হলে, ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে উন্নতি আনতে হলে ভালো উইকেটে খেলতে হবে।’
ঘরের মাঠে গত তিন সিরিজেই স্পোর্টিং উইকেটে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তাতে ফল বাংলাদেশের পক্ষে আসেনি। বাজে উইকেটে খেলার অভ্যাসের কারণেই নাকি ভালো উইকেটের চরিত্রটা ধরতে সময় লাগছে বাংলাদেশের। তবে জয়ের জন্য আবারও বাজে উইকেটে ফিরে যাওয়ার সহজ পন্থায় ফিরতে চান না ডমিঙ্গো, ‘এই টেস্টের উইকেট ভালো ছিল। টেস্টের পঞ্চম দিন ফল এসেছে, ভালো উইকেট! চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট ছিল। কিন্তু সেখানেও ফল হতে পারত। ওরা বাজে উইকেটে খেলে অভ্যস্ত, তাই ভালো করতে পারছে না। আমি হতাশাটা বুঝতে পারছি। যত ভালো উইকেটে আমরা খেলব, ক্রিকেটারদের উন্নতিও তত ভালো হবে। আমি জানি, সবাই জিততে চাচ্ছে। আমি জানি চটজলদি ফলাফলের সুযোগ আছে। বাজে উইকেটে খেলে প্রতিপক্ষকে ১০০ রানে অলআউট করে ফেলে আমরা ১২০ রান করব। এভাবে খেললে দল উন্নতি করবে না। এভাবে খেলেও কিন্তু সিরিজ জিততে পারিনি।’