উমরান মালিক আর তাঁর বলের গতি!
আইপিএলের এবারের মৌসুমের শুরু থেকেই একের পর এক চমক জাগিয়ে শিরোনামে জম্মু-কাশ্মীরে জন্ম নেওয়া ভারতীয় ফাস্ট বোলার। একেকটা ম্যাচ যায়, আর নিজেরই গতির আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের পেসার। তাঁর গতিতে মুগ্ধ ভারতীয় অনেক সাবেক ক্রিকেটারই উমরানকে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে নেওয়ার পক্ষে জোর আওয়াজ তুলেছেন। তবে গত বছর সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর ভারতের কোচের পদ থেকে সরে যাওয়া রবি শাস্ত্রী শুধু এই গতিতেই মুগ্ধ হচ্ছেন না।
উমরানকে একটা সতর্কবাণীও দিয়েছেন শাস্ত্রী। শুধু এমন গতিতে টি-টোয়েন্টিতে কিছু আসবে-যাবে না জানিয়ে শাস্ত্রীর কথা, ভারতের জাতীয় দলে জায়গা পেতে, ভালো কিছু করতে উমরানকে গতির পাশাপাশি বলটাকে ঠিক জায়গায় ফেলাও শিখতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতি বলেই গতির ঝড় না তুলে মাঝেমধ্যে ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দেওয়ার জন্য এমন ধুন্ধুমার গতিতে বল করা যেতে পারে বলেও পরামর্শ শাস্ত্রীর।
এবারের আইপিএলে নিয়মিতই ১৫০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে বল করে যাচ্ছেন উমরান। এই তো, দিন দুয়েক আগে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে বল করেছেন ১৫৬.৯ কিমি গতিতে। তাতে নিজেরই আগের রেকর্ড ভেঙে গড়েছেন আইপিএলের ইতিহাসে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির বলের নতুন রেকর্ড।
শুরুর দিকে তাঁর গতির ঝড়ে উইকেটও এসেছে, সে কারণে বাড়তি মুগ্ধতাই ছিল সবার চোখেমুখে। এমনি এমনিই তো আর উমরানকে ভারতের জাতীয় দলে নতুন বলের আক্রমণে বুমরার সঙ্গী করার দাবি ওঠেনি!
কিন্তু রবি শাস্ত্রী শুধু এই গতিতেই মুগ্ধ নন। আইপিএলে আজ উমরানের সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সঙ্গে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচের আগেও স্টার স্পোর্টসে উমরানকে নিয়ে কথা উঠেছিল, সেখানে উমরানকে সতর্ক করে দিয়ে শাস্ত্রীর পরামর্শ, গতির ঝড় তোলার পাশাপাশি বলে নিয়ন্ত্রণও শিখতে হবে তরুণ ফাস্ট বোলারকে। না হলে ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লাগার পর যে এই ১৫৬ কিলোমিটার গতির বলই উল্কার বেগে বাউন্ডারির দিকে ছুটবে!
সংবাদমাধ্যমে সব সময় সব জায়গায় ১৫৬, ১৫৭ নিয়ে কথা বলতে দেখছি। কিন্তু এই গতিটাকে ঠিক জায়গামতো কাজে তো লাগাতে হবে!উমরানের গতি নিয়ে প্রশ্নে রবি শাস্ত্রী
‘ও শিগগিরই ভারতীয় দলে খেলবে, তবে ও যদি বল ঠিকমতো ফেলার শিল্পটা শিখতে না পারে, তাহলে এই ১৫৬ কিমি গতির বলই ব্যাটে লেগে ২৫৬ কিমি বেগে ছুটবে। ঠিক সেটাই হচ্ছে এখন’—শাস্ত্রীর বিশ্লেষণ।
সর্বশেষ দুই ম্যাচে উমরানের রান দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত শাস্ত্রীর। আইপিএলে আজকের আগ পর্যন্ত ১০ ম্যাচে ২০.৫৩ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়েছেন উমরান—দুই ম্যাচ আগে গুজরাট লায়নসের বিপক্ষে ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট।
তবে গতির ঝড় তুলে উইকেট কুড়ালেও ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ৮.৮ করে। ইকোনমি রেটের এমন অবস্থা করায় সবচেয়ে বেশি অবদান আজকের আগের দুই ম্যাচেরই—গুজরাটের বিপক্ষে ৫ উইকেট নেওয়ার পর দুই ম্যাচে ৮ ওভারে কোনো উইকেট তো পানইনি, উমরান এই ৮ ওভারে রান দিয়েছেন ১০০! আজ ২ ওভারে ২৫ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
শাস্ত্রীর বিশ্লেষণ, ‘এত গতিতে বল যদি ঠিক জায়গায় না পড়ে, তাহলে বারবার বাউন্ডারি হবেই। ব্যাটে লাগার পর তো বলটা ২৫০-৩০০ কিমি বেগে ছোটে! টুর্নামেন্ট যত এগোবে, উইকেট তত ধীর হয়ে আসবে। পিচ এখন ব্যাটিংবান্ধব, সে কারণে এখন ওর ঠিক জায়গায় বল ফেলা আরও বেশি জরুরি।’
সংবাদমাধ্যমে, সাবেকদের মুখে উমরানের বলে ১৫৬-১৫৭ কিমি গতি নিয়ে উচ্ছ্বাসের বাড়াবাড়িতেও যেন একটু বিরক্ত শাস্ত্রী, ‘সংবাদমাধ্যমে সব সময় সব জায়গায় ১৫৬, ১৫৭ নিয়ে কথা বলতে দেখছি। কিন্তু এই গতিটাকে ঠিক জায়গামতো কাজে তো লাগাতে হবে!’
তবে এর মানে এই নয় যে উমরানের গতি কমাতে বলছেন শাস্ত্রী। বরং গতিটাকে সুযোগ বুঝে সময়মতো ব্যবহার করে নিজের পক্ষে কাজে লাগানোরই পরামর্শ উমরানকে দিচ্ছেন ভারতীয় কিংবদন্তি, ‘গতি থাকা ভালো, তবে মনে এটা গেঁথে নিতে হবে যে গতিটা কাজে লাগিয়ে বল ঠিক জায়গায় ফেলতে হবে। সেটি করতে না পারলে আপাতত নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করো, ব্যাটসম্যানকে ভড়কে দিতে মাঝেমধ্যে এই গতিতে বল করো। এই ভাবনাগুলো ওর মাথায় থাকতে হবে।’