এখন শাস্তি পেতে হবে রায়ান বার্লের।
এখন শাস্তি পেতে হবে রায়ান বার্লের।

জিম্বাবুয়ের জন্য স্পনসরের আবেদন করে শাস্তির মুখে বার্ল

একটা সময় ক্রিকেট–বিশ্ব শাসনেরই স্বপ্ন দেখত জিম্বাবুয়ে। ডেভিড হাটন, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার, গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, মারে গুডউইন, ক্রেগ উইশার্ট, নিল জনস, হিথ স্ট্রিক—এই নামগুলোই দেখিয়েছিল সেই স্বপ্ন। ১৯৯২ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে থেকেই বড় দলগুলো সমীহ করত তাদের। নব্বইয়ের দশকে টেস্ট দল হয়ে জিম্বাবুয়ের উন্নতির গ্রাফটা ছিল রীতিমতো অবাক করে দেওয়ার মতোই। মোটকথা, ক্রিকেটে দারুণ একটা শক্তি হয়ে ওঠার সবকিছুই ছিল তাদের।

সময়ের ফেরে অবশ্য জিম্বাবুয়ে এখন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে নিল জনসন আর মারে গুডউইনের মতো দুই ক্রিকেটার ‘উন্নত জীবন’ আর আর্থিক লাভের আশায় জিম্বাবুয়ে দলে খেলার চেয়ে অস্ট্রেলিয়াতে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাই বেছে নিয়েছিলেন। দেশটির ক্রিকেটের পতনের শুরুটাও বোধ হয় সে সময় থেকেই। এরপর বর্ণবৈষম্যমূলক রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ, রবার্ট মুগাবের অপশাসনের কারণে প্রতিবাদী হয়ে ক্রিকেট ছেড়েছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আর হেনরি ওলোঙ্গার মতো তারকারা।

সাদা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা বৈষম্যমূলক সরকারি পদক্ষেপ আর নানা অব্যবস্থাপনা মিলিয়ে হিথ স্ট্রিকের মতো ক্রিকেটাররাও দলত্যাগী হলে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট অতলে তলিয়ে যেতে থাকে। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে জিম্বাবুয়ে এখন কেবল নামেই টেস্ট দল! আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ডের মতো নতুন শক্তিও জিম্বাবুয়েকে বলে-কয়ে, হেসেখেলে হারিয়ে দেয়। যে দল টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগেই সেরা সহযোগী সদস্যদেশ হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছিল (১৯৮৩ ও ১৯৮৭), তারাই ২০১৯ সালে ক্রিকেটের শীর্ষ দশ দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ খেলতে পারেনি। মাঠের পারফরম্যান্স তো বটেই, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে অর্থাভাব ভাবিয়ে তুলেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের বেশ ভালোভাবেই।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এটিকে পৃষ্ঠপোষকদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ একটা জায়গায় পরিণত করেছে। টাকার অভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটের অবস্থা তথৈবচ, ক্রিকেটারের জোগানেও টান পড়ে গেছে বেশ ভালোমতোই। যদিও এর মধ্যেও ভালোবাসা আর টান থেকে ক্রিকেটটা চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। কিন্তু কতক্ষণ!

বুটের ছবি দেখিয়ে সাহায্য চেয়েছিলেন বার্ল।

রায়ান বার্লের সেই টুইট জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের দুরবস্থাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। নিজের একটি ক্রিকেট শু মেরামত করছেন—এমন একটা ছবি টুইটারে দিয়ে তিনি নিজেদের আর্থিক দুরবস্থার কথা জানিয়েছিলেন। আহ্বান জানিয়েছিলেন পৃষ্ঠপোষকদের এগিয়ে আসার জন্য। এই টুইটে ফুটে ওঠে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আর্থিক দৈন্যের দিকটি। সারা দুনিয়া জেনে যায়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের আর্থিক অবস্থা এমন যে তারা ক্রিকেটারদের নতুন বুটও কিনে দিতে পারে না!

এক সময় ক্রিকেটের উদীয়মান শক্তি ছিল জিম্বাবুয়ে।

বার্লের টুইটটিতে অবশ্য কাজ হয়েছে। বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারী সংস্থা পিউমা জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের ক্রিকেটারদের নতুন বুট পাঠায়। বার্লেরও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এগিয়ে আসে তারা। কিন্তু বিষয়টি পছন্দ হয়নি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের। বার্লের টুইট আর এর ফলে পিউমার বুট পাঠানোকে মোটেও ভালোভাবে নেয়নি তারা। বার্ল পড়েছেন তাদের রক্তচক্ষুর সামনে।

জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে এখন ক্ষয়িষ্ণু এক শক্তি।

জিম্বাবুয়ের শীর্ষ ক্রিকেট সাংবাদিক অ্যাডাম থিও টুইট করে জানিয়েছেন ঘটনাটি, ‘জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের কর্তারা বার্লের টুইট নিয়ে মহাখাপ্পা। তারা মনে করে এই টুইটে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’ থিও জানিয়েছেন, এ ঘটনায় বার্লের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।