তাঁর বোলিং দেখে ইয়ান বিশপ বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য দারুণ এক সম্ভাবনা। পরিশ্রম করলে ভবিষ্যতে ও আরও ভালো করতে পারবে।’
২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। অ্যান্টিগার সবুজ উইকেটে ডিউক বলের সামনে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের সর্বনিম্ন স্কোর ৪৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের চরম ব্যর্থতার সেই ম্যাচেই অভিষেক পেসার আবু জায়েদের। সিম, সুইং ও নিয়ন্ত্রণ দিয়ে নিজের প্রথম টেস্টেই ৩ উইকেট নেন। তাঁর ওই বোলিং দেখেই কথাটা বলছিলেন সাবেক ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলার ও ধারাভাষ্যকার বিশপ।
জায়েদ যেন বাংলাদেশ দলে পেসারদের আগমনের মশালচি! এর পর থেকে ইবাদত হোসেন, খালেদ আহমেদ, শরীফুল ইসলামদের আগমনে সমৃদ্ধ হতে থাকে পেস আক্রমণ। নিজেকে শুধরে ফিরে আসেন তাসকিন আহমেদও। টেস্টের জন্য একসঙ্গে এত পেস বোলার আগে পায়নি বাংলাদেশ। কিন্তু যাকে দিয়ে এই পেস–বিপ্লবের শুরু সেই জায়েদের জায়গাই এখন বাদ পড়াদের তালিকায়।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের ১৬ সদস্যের দলে নেই জায়েদ। অথচ দলে থাকবেন ধরে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে ব্যক্তিগতভাবে অনুশীলন করছিলেন। বাদ পড়ার খবরটা তাই হতাশাজনকই তাঁর জন্য, ‘খবরটা শুনে খারাপ লেগেছে। দলে থাকব ভেবে সেভাবেই নিজেকে তৈরি করছিলাম।’ অভিজ্ঞতায় জায়েদ এগিয়ে থাকার পরও তাঁকে না রেখে দলে রাখা হয়েছে টেস্ট অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা শহীদুল ইসলাম আর রেজাউর রহমানকে। জায়েদের জন্য এটা যেন বাদ পড়ার চেয়েও বড় ধাক্কা, ‘দলে চোটের সমস্যা থাকায় ভেবেছিলাম আমি দলে থাকব। সেটা না হওয়ায় অবাকই হয়েছি।’
জায়েদের বাদ পড়ার সঙ্গে অবশ্য পারফরম্যান্সের কোনো সম্পর্ক নেই। পরিসংখ্যান তো বরং বলছে, তিনিই বাংলাদেশের সেরা টেস্ট বোলার। ১৩ ম্যাচ খেলে ১৮ ইনিংসে বল করে নিয়েছেন ৩০ উইকেট। ৩৭ গড়ে উইকেট নেওয়া জায়েদ বাকিদের থেকে এগিয়ে থাকলেও এক বছর ধরে তিনিই টেস্ট দলে সবচেয়ে অনিয়মিত। না খেলেই বাদ পড়ার কষ্টটা জায়েদের কথায় স্পষ্ট, ‘দলের সঙ্গে থেকেও ম্যাচ খেলতে পারছি না। জাতীয় দলে থাকায় ঘরোয়া ক্রিকেটও খেলা হচ্ছে না। সব দিক থেকেই আমার ক্ষতি হয়ে গেল।’
সিম আর সুইং বোলিংটা ভালো পারলেও জায়েদ জাতীয় দলের অন্য পেসারদের তুলনায় গতি ও উচ্চতায় পিছিয়ে। ঘরের মাঠের পেস-বিরুদ্ধ উইকেটে একটা সময়ের পর তাই জায়েদের বোলিংটা আর কার্যকর থাকে না। জায়েদ অবশ্য সেটি মানতে রাজি নন। ঘরের মাঠে নিজের বোলিং গড়ের (৩২) উদাহরণ টেনে বলছিলেন, ‘আমার রেকর্ড দেখুন, দেশের বাইরের চেয়ে দেশে রেকর্ড ভালো। আর যদি দেশে না–ই খেলি, অন্তত দেশের বাইরে সুযোগ হতে পারত। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রস্তুতি ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়ার পরও আমার সুযোগ হয়নি।’
কেন হয়নি, সেটা বলতে গিয়ে যেন মনের একটা ক্ষোভই উগরে দিলেন এই পেসার, ‘আমার লবিং নেই, আমার সঙ্গে যা হচ্ছে, তা নিয়ে কথা বলার কেউ নেই।’ জায়েদের এমন ক্ষোভ অস্বাভাবিক নয়। কারণ, বাদ দেওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে একবার আলোচনাও করেননি নির্বাচকেরা।
ভালো খেলেও বাদ পড়ার অভিজ্ঞতা অবশ্য জায়েদের নতুন নয়। ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে কন্ডিশনের চাহিদার কারণে জায়েদকে ওয়ানডে ক্যাপ দেওয়া হয়। প্রথম ম্যাচে কোনো উইকেট না পেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নেন ৫ উইকেট। কী দুর্ভাগ্য, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচই সাদা বলে হয়ে আছে জায়েদের সর্বশেষ ম্যাচ! জায়েদ অবশ্য তাঁর ছোট্ট ক্যারিয়ারের এই উত্থান-পতনকে দেখছেন একটি বাজে স্পেলের মতো। পরের স্পেলে ঘুরে দাঁড়াবেন, এই আত্মবিশ্বাস তাঁর।
যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে জায়েদের টেস্ট–যাত্রার শুরু, সেখান থেকেই নতুন শুরুর স্বপ্ন বুনছেন তিনি, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডিউক বলে খেলা হবে, সুইং থাকবে। আশা করি সেখানে সুযোগ পাব। আর যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে না যাওয়া হয়, তাহলে ভিন্ন কিছু চিন্তা করতে হবে।’ ভিন্ন চিন্তাটা কী, জানালেন সেটাও, ‘তখন আরও চেষ্টা করতে হবে। আরও পরিশ্রম করতে হবে।’
জাতীয় দলের বাইরে যাওয়ার অন্য ভয়ও আছে জায়েদের। একবার দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে গেলে যদি ফিরে আসার পথটাই হারিয়ে যায় সামনে থেকে! এমনিতেই তো একটা জায়গায় নিঃসঙ্গ বোধ করেন তিনি—তাঁর হয়ে কথা বলার কেউ নেই।