>খেলার সুযোগ এখনো পাননি। তবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের অন্যতম সদস্য আবু জায়েদের অভিজ্ঞতা এখনো পর্যন্ত চমৎকার। খুব ভালো সময় কাটছে তাঁর।
চারবার সময় দিয়েও সময় ঠিক রাখতে পারলেন না আবু জায়েদ। তাঁরই-বা দোষ কী! ইংল্যান্ডে দারুণ ব্যস্ত সময় কাটছে। এর মধ্যে সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় বের করা সত্যিই কঠিন।
পরশু বার্মিংহামে আসার পর সময় হলো। সেটিও সিটি সেন্টারের এক ক্যাশ মেশিন থেকে টাকা তুলে হোটেলে আসার পথে মিনিট দশেক। হোটেলের সামনে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন জায়েদের বোনজামাই। বোনের পরিবার বার্মিংহাম থেকে দেড় ঘণ্টা দূরত্বের চেলটেনহামে থাকে। ছুটির চার দিনের দুই দিন বোনের বাসায় বেড়াবেন জায়েদ। সে জন্য তাড়াহুড়া ছিল।
সিলেটের ছেলে বলে এই দেশে এ রকম ব্যস্ততা জায়েদের নিত্যদিনের। ইংল্যান্ডে সিলেটের মানুষের অভাব নেই। তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ঘরের ছেলে জায়েদ। আজ একজন ঘোরাতে নিয়ে যাচ্ছেন, তো কাল কেউ দাওয়াত দিচ্ছেন। না খেললেও ইংল্যান্ডে অলস সময় কাটছে না বাংলাদেশ দলের পেসার জায়েদের।
তবে তিনি দলের সঙ্গে থেকেও যেন নেই! বিশ্বকাপে এক ম্যাচও এখনো খেলেননি, দলে আছেন অতিথির মতো। অনেকটা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান জাহাঙ্গীর আলমের অবস্থা। দলের সঙ্গে ১৬ তম সদস্য হিসেবে সেবার ইংল্যান্ডে শুধু ঘুরেই বেড়িয়েছিলেন জাহাঙ্গীর, কোনো ম্যাচ খেলা হয়নি।
জায়েদের সামনে অবশ্য এখনো অন্তত দুটো ম্যাচ আছে। নিশ্চিত করে তাই এখনই বলে দেওয়া ঠিক হবে না যে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ থেকে তিনিও জাহাঙ্গীরের মতো না খেলে দেশে ফিরবেন। আর যদি একটি ম্যাচও খেলেন, জাহাঙ্গীর না হলেও জায়েদ হয়ে যাবেন নিয়ামুর রশিদ কিংবা শফিউদ্দিন আহমেদ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের দলে থাকলেও নিয়ামুর আর শফিউদ্দিনের খেলার সুযোগ হয়েছিল শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে।
জায়েদ অবশ্য নিজেকে জাহাঙ্গীর বা নিয়ামুর কিছুই ভাবছেন না। বিশ্বকাপের দলের সঙ্গে আছেন। যেকোনো সময় দলে ডাক পড়তে পারে। সে জন্য প্রতি মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে-এই হলো তাঁর চিন্তা। জায়েদ সেভাবে কাজও করে যাচ্ছেন অনুশীলনে, ‘আমি অনুশীলনে বোঝার চেষ্টা করছি আমাদের বোলিংয়ে কোন জিনিসটার অভাব থেকে যাচ্ছে। ওটা নিয়ে বেশি কাজ করি। ম্যাচ খেললে আমাকে হয়তো ওই ঘাটতিগুলো পূরণ করতে হবে।’
সব ক্রিকেটারের মতো বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন জায়েদেরও ছিল। টেস্ট অভিষেকের পরই নাকি মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপের স্বপ্নপূরণের দরজাটাও হয়তো সামনে খুলে যাবে। প্রধান নির্বাচক যেদিন বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করলেন, সেখানে নিজের নাম দেখে তাই অবাক হননি জায়েদ। হ্যাঁ, ২০১৯ বিশ্বকাপে দলের সাত ম্যাচের একটিতেও খেলার সুযোগ হয়নি বলে কিছুটা আফসোস তো আছেই। তবে দল ভালো খেলায় সেটিও উঁকি দিয়েই হারিয়ে যাচ্ছে, ‘দলে থেকেও খেলতে না পারলে খারাপ লাগবেই। কিন্তু দল তো আগে। দল ভালো খেললে সবই ভালো লাগে। ইচ্ছা আছে যখনই সুযোগ পাব, তখনই যেন ভালো কিছু করতে পারি।’
আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে থেকেই দলের সঙ্গে আছেন জায়েদ। ওই সিরিজের মাঝখানে একবার কথা উঠেছিল, জায়েদ শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের দলে থাকবেন না। তাঁর জায়গায় আনা হবে তাসকিন আহমেদকে। কোচিং স্টাফ থেকেই নাকি তাসকিনকে আনার চাপটা বেশি ছিল। দলের মধ্যে ওঠা সে আলোচনায় প্রতিবাদী ছিলেন তামিম ইকবাল।
একজন খেলোয়াড়কে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখিয়ে দলের সঙ্গে উড়িয়ে আনার পর কোনো কারণ ছাড়াই তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত মানতে পারেননি তামিম। এ ছাড়া নির্বাচকদের দিক থেকেও সায় ছিল না তাসকিনকে আনায়। শেষ পর্যন্ত জায়েদই থেকে যান দলের সঙ্গে। ত্রিদেশীয় সিরিজে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট পেয়ে তাসকিনের সম্ভাবনার কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠুকে দেন তিনি। পরশু সে প্রসঙ্গ তুললে হেসে ফেলেন জায়েদ, ‘ও রকম আলোচনা শুনে খারাপ লাগেনি আসলে (হাসি)। দলের ভালোর জন্যই তো আলোচনা। তবে আমি নিজেও জানতাম না ও রকম একটা কিছু হচ্ছে। সবাই বলল আগে ভালো খেলো, তারপরেই না যাওয়ার চিন্তা।’
পরে তো আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে জায়েদও দেখিয়ে দিলেন তাঁর সামর্থ্য, ‘৫ উইকেট পাওয়ার পর মনে হয়েছে, আমি ওয়ানডে ক্রিকেটটাও খেলতে পারব। আপনি জানেন, লিস্ট ‘এ’তেও কিন্তু আমার ৫ উইকেট নেই। কিন্তু ওখানে ঠিকই হয়ে গেল।’ খেললে বিশ্বকাপেও সে রকম কিছু হতো, সে নিশ্চয়তা অবশ্য দিচ্ছেন না জায়েদ, ‘আমার বল যে রকম সুইং করে, এখানে উইকেটে ঘাস থাকলে হয়তো সেটা কাজে আসত। এখানে তো বেশির ভাগ উইকেটই ফ্ল্যাট।’
খেলার সুযোগ না পেলেও বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা জায়েদের এখন পর্যন্ত চমৎকার। মজার ঘটনাও আছে। এখানে এক দর্শককে প্রায়ই মাঠে দেখেন জায়েদ। তাঁকে দেখলেই জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার ভাইয়ের সঙ্গে কথা হইছে?’ জায়েদ বলছিলেন, ‘ওনার মনে হয় সন্দেহ, এখানে আসার পর আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। উনি কথা বলিয়ে দিবেন। আমি এখানে আসছি, আমার ভাই এখানে আছে। তারপরও ওনার টেনশন আমার ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে কি না।’
বলতে বলতে জায়েদ হাসেন। হাসিতে দূরদেশে কাছের মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার তৃপ্তি।