কোনো একদিন বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন, এটা আগেই জানতেন মুত্তিয়া মুরলিধরন! শ্রীলঙ্কার অফ স্পিন–জাদুকর এটাও জানিয়েছেন, বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সমস্যার মধ্যে পড়ার সময় তিনি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন লেগ স্পিনার হওয়ার।
ছোটবেলা থেকে লেগ স্পিনও খুব ভালো করতে পারতেন তিনি। কবজি ঘুরিয়ে গোটা ক্যারিয়ারই অফ স্পিন করেছেন। টেস্টে ৮০০ আর ওয়ানডেতে পেয়েছেন ৫৩৪ উইকেট। মোট ১ হাজার ৩৩৪ উইকেট নিজের করে নেওয়া এই অফ স্পিনারের লেগ স্পিন সত্তার কথাটা কখনো শোনা যায়নি। আজ এত বছর পর জানা গেল, লেগ স্পিন দিয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খুব সহজেই টিকে থাকতে পারতেন তিনি।
মুরলি এমন কথা বলেছেন একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে, ‘আমি দুটিই করতাম, অফ স্পিন, লেগ স্পিন। আমার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যে সমস্যায় পড়ব, এটা আমি ছোটবেলা থেকেই জানি, তাই বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছিলাম। এটা খুব দরকার। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যখন আসলেই ঝামেলায় পড়লাম, তখন ইচ্ছা করলেই আমি লেগ স্পিনার হয়ে যেতে পারতাম। ওটাও আমি যথেষ্ট ভালো পারতাম।’
১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মুরলির বোলিং অ্যাকশন প্রথম প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে মুরলিকে ৭ বার নো বল ডেকেছিলেন অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার। তাঁর অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনের কারণেই ব্যাপারটা ঘটেছিল। বায়োমেকানিক্যাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে আইসিসি ১৯৯৬ সালে তাঁর অ্যাকশন বৈধ ঘোষণা করে। এরপর ভালোই চলছিল। তাঁর অ্যাকশন নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দেয় ১৯৯৯ সালে। অস্ট্রেলিয়াতেই একটি ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে ড্যারেল হেয়ারের মতোই মুরলির বলে বারবার নো বলে ডেকেছিলেন আরেক অস্ট্রেলীয় আম্পায়ার রস এমারসন। সেদিন ঘটনার প্রতিবাদে গোটা শ্রীলঙ্কা দল নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন সে সময়ের লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা। আইসিসি অবশ্য পরবর্তী সময়ে আবারও এই অফ স্পিনারের বোলিং অ্যাকশন বৈধ ঘোষণা করে। তবে তাঁর গোটা ক্যারিয়ারেই নিজের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার ব্যাপারটি ছিল।
মুরলি নিজে অবশ্য তাঁর বিকল্প ভেবে রেখেছিলেন, ‘আমার বিকল্প ছিল। এটা প্রত্যেকেরই থাকা উচিত। আমি ছোটবেলায় লেগ স্পিনই করতাম। তাই আমার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠল, আমাকে নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হলো, তখন ভেবেই রেখেছিলাম, পরীক্ষার ফল খারাপ এলে লেগ স্পিনার হয়ে যাব।’
তাঁর ক্যারিয়ারের এই ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় অনেক কিছুই দেখেন তিনি, ‘সবারই জীবনে একাধিক ক্যারিয়ার প্ল্যান থাকা উচিত। প্রথমটা কাজে না লাগলে বিকল্প পথে এগোনো উচিত। এটা অন্য পেশাতেও হতে পারে, হতে পারে অন্য খেলাতেও। ব্যর্থতা আসবেই। সেই ব্যর্থতাটা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, মূল বিষয় সেটিই। ব্যর্থতাকে মেনে নিয়ে বিকল্প পথে এগিয়ে নতুন দিনের সন্ধ্যান করাটাই সাফল্য।’
পেশাদারি খেলায় মানসিক ব্যাপারটা খুব দরকার বলে মনে করেন এই লঙ্কান কিংবদন্তি, ‘আমি অনেক খেলোয়াড় দেখেছি, যাদের প্রতিভা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু পেশাদারি খেলার জগতের চাপটা নিতে না পারার মানসিক শক্তি না থাকার কারণে তাঁরা হারিয়ে গেছেন।’