অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ম্যাথু ওয়েড। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি ম্যাচ খেলছেন, অবদান রেখেছেন গ্লাভস হাতে। অথচ ফাইনালে হয়তো খেলাই হতো না তাঁর। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ওয়েড মাঠে নেমেছিলেন চোটকে সঙ্গী করে!
সেমিফাইনালের আগপর্যন্ত কেউই অস্ট্রেলিয়া দলে ম্যাথু ওয়েডের গুরুত্বটা বুঝতে পারছিল না। কেন ওয়েডের বদলে একাদশে আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জশ ইংলিশকে নেওয়া হচ্ছে না, এ নিয়েও চলছিল অনেক সমালোচনা। কিন্তু সেমিফাইনালে সব সমালোচনা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন ওয়েড। পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে টানা তিন ছক্কা মেরে দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। কেন দল তাঁকে এত গুরুত্ব দেয়, সবার কাছেই তা পরিষ্কার হয়ে যায়।
ওয়েড চোটে পড়েন মূলত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল খেলতে নামার এক দিন আগে। অনুশীলন করার সময় পেশিতে চোট পান তিনি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও টিম ম্যানেজমেন্টের চাপে স্ক্যান করান। স্ক্যানে দ্বিতীয় মাত্রার সাইড স্ট্রেইন ধরা পড়ে। কিন্তু চিকিৎসকের দল ওয়েডকে এই সংবাদ জানায়নি। তাঁরা ভেবেছিলেন, চোট কতটা গুরুতর এটা জানলে হয়তো ওয়েড ফাইনালে খেলবেন কি খেলবেন না, এ নিয়ে দোটানায় ভুগবেন।
ওয়েড এটা স্বীকার করেছেন, তিনি ভেবেছিলেন তাঁকে হয়তো ফাইনাল থেকে বাদ দেওয়া হবে। আর তখন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা জশ ইংলিশকে সে স্বাদ নিতে হতো বিশ্বকাপ ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে।
ফাইনালে খেলা নিয়ে আগের রাতেও নিশ্চিত ছিলেন না বলে জানান ওয়েড, ‘অবশ্যই ফাইনালের আগের রাতে আমি একটু উদ্বিগ্ন ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে যদি আমি ব্যাট ঘোরাতে না পারতাম, তাহলে আমাকে ফাইনালে খেলানো হতো না।’ অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করলে তাঁর জন্য পরে উইকেটকিপিং করা একটু মুশকিল হয়ে যেত বলে মনে করেন ওয়েড, ‘আমি খুবই চিন্তায় ছিলাম, আমরা যদি আগে ব্যাট করতাম, তাহলে আমাকে ক্রিজে নেমে যত জোরে সম্ভব ব্যাট চালাতে হতো। এর ফলে আমার মাংসপেশি ছিঁড়ে যেত এবং আমি কিপিং করতে পারতাম না। আর এতে আমার দল বিপদে পড়ে যেত।’
ফাইনাল খেলার জন্য কতটা উদগ্রীব ছিলেন এটা ফুটে উঠল ওয়েডের কথায়, ‘আমি মনে মনে ভাবছিলাম আমাকে যদি বাদ দিতে হয়, তাহলে বিছানার সঙ্গে বেঁধে রাখতে হবে। আমি সব সময় মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু যদি বুঝতাম যে আমি খেললে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাহলে কোনোদিন মাঠে নামতাম না। আমি সকালে নেটে গিয়ে কিছুক্ষণ ব্যাটিং করি, এবং চোটের কথা কাউকে বুঝতে দিইনি। আমাকে আরও বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং করানো হয়, তেমন কোনো সমস্যা ছাড়াই আমি ব্যাট করে যাই।’
ওয়েডের সতীর্থ গ্লেন ম্যাক্সওয়েল অবশ্য ওয়েড যে চোট লুকাচ্ছেন তা বুঝে ফেলেছিলেন, ‘সে খুব হালকাভাবে ব্যাটিং করছিল দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী হচ্ছে?” তখন ও জানালো, “আমি সাইড স্ট্রেইনের চোটে ভুগছি”। অথচ আমি এর কিছুই জানতামই না!’
এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ জানান সবাই ওয়েডের পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গেই পর্যবেক্ষণ করছিলেন, ‘ওর খেলতে না পারার একটা ভয় তো ছিলই। দলের ডাক্তার ওকে জোর করে স্ক্যান করায়। স্ক্যানে কী ধরা পড়ল, এটা জানার জন্য ওয়েডের কোনো আগ্রহই ছিল না। কিন্তু আমি সেটা দেখি। দ্বিতীয় মাত্রার সাইড স্ট্রেইন নিয়ে খেলাটা খুবই কঠিন।’ কিন্তু ওয়েডকে কিছুতেই যে নিরস্ত করা যাবে না সেটা ফিঞ্চ জানেন বলেই খেলতে বাধা দেননি, ‘কাউকে যদি মাঠে নামতেই হতো, সেটা হতো ওয়েড। ওকে বাদ দেওয়ার জন্য ওর পা কাটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না।’
চোট নিয়ে খেললেও কিপিংয়ে ওয়েড কোনো ছাড় দেননি বলে নিশ্চিত করেন ফিঞ্চ, ‘আমি মনে করি ও দুর্দান্ত কিপিং করেছে। ইনিংসের শেষের দিকে কয়েকটা ডাইভ এবং থ্রো করার সময় ও যে ব্যথা পাচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু তার পরেও একটা বলও সে ছুটতে দেয়নি।’