‘চোকার’ শব্দটা নিয়ে বড্ড আপত্তি দক্ষিণ আফ্রিকানদের। ক্রিকেটের বড় বড় সব প্রতিযোগিতায় হাস্যকর সব ভুলে বারবার খালি হাতে ফেরার পর এ শব্দটি আঠার মতো লেগে গেছে প্রোটিয়াদের গায়ে। কাল রাতে যা হলো, অন্তত আরও কিছুদিন এ অপবাদ গায়ে মেখে চলতে হবে তাদের। এভাবেও ম্যাচ হারা যায়!
লক্ষ্য ৩৩১ রানের হতে পারে, কিন্তু কাল সাউদাম্পটনে জয়ের জন্য শেষ ৭ বলে ৭ রান দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। অর্থাৎ বলপ্রতি ১ রান। উইকেটে তখন ডেভিড মিলার ও ক্রিস মরিস। দুই ব্যাটসম্যানই বলপ্রতি ১ রান নয়, ২/৩ রান নেওয়ার যোগ্য। এর আগে সেটাই করছিলেন দুজন। ইংলিশ বোলারদের বেধড়ক পিটুনি দিয়ে ৪৮ বলে ৬৯ রান মিলারের। আর মরিসের ৩৪ রান এসেছে ১৮ বলে।
দক্ষিণ আফ্রিকা কয় বল হাতে রেখে মাঠ ছাড়ে, সে অপেক্ষায় সবাই। ৪৯তম ওভারের শেষ বলে কোনো রান না এলেও মনে হয়নি এই ম্যাচ তারা হারতে পারে। ৬ বলে ৭ রান তো কিছুই না এই দুই টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টের কাছে! তবে কারও কারও হয়তো মনে হয়েছিল, নামটা দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই হয়তো...। সিরিজের প্রথম ম্যাচেও তো চাপে ভেঙে পড়তে দেখা গেছে ওদের।
মার্ক উডের শেষ ওভারে দেখা দিল সেই চোকার দক্ষিণ আফ্রিকা। এতক্ষণ যেখানে খুশি বল পাঠানো দুই ব্যাটসম্যান ৬ বলে নিতে পারলেন শুধু চার রান! ইনিংসের দ্বিতীয় ওভার থেকে ইংল্যান্ডের চেয়ে রান তোলায় এগিয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একবারও মনে হয়নি ম্যাচটি তারা হারবে। হাতেও যথেষ্ট উইকেট। সেই তারাই শেষ পর্যন্ত হেরেই গেল ২ রানে! সে সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে দ্বিপাক্ষিক সিরিজটাও জিতে নিল ইংল্যান্ড।
২০১৫ সালে বাংলাদেশের কাছে হারার পর এ তেতো স্বাদ আর কেউ দিতে পারেনি প্রোটিয়াদের। নিউজিল্যান্ড কিংবা ভারতে গিয়েও সিরিজ জেতা দক্ষিণ আফ্রিকা ইংল্যান্ডে গিয়ে থামল।
দুদিন পরেই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, আর এ সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার এভাবে ফর্ম হারিয়ে ফেলা! নাকি নিজেদের আসল রূপে দেখা দেওয়া! আইসিসির টুর্নামেন্ট মানেই যে প্রোটিয়াদের তীরে এসে তরি ডোবানো। ১৯৯২ সালে বৃষ্টি আইনের অন্যায় শিকার বনা, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে এক ব্রায়ান লারার কাছে হার, ৯৯–তে ল্যান্স ক্লুজনারের পাগুলে দৌড়, ২০০৩ সালে ডি/এল পদ্ধতির হিসাবে গরমিল, ২০১১–তে দুর্দান্ত ফর্মে থেকেও নিউজিল্যান্ডের কাছে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া, আর ২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে স্বভাববিরুদ্ধ বাজে ফিল্ডিং ওই নিউজিল্যান্ডের কাছে ম্যাচ তুলে দেওয়া—তালিকাটা দিন দিন লম্বাই হচ্ছে।