>
বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১ রানে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস
শেষ চারে উঠতে হলে করতে হবে ১২৮। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের এই স্বল্প স্কোরের বিপরীতে ঢাকা ডায়নামাইটসের তারকা ব্যাটসম্যানদের রাখুন। কাইরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল, সাকিব আল হাসান। এ ছাড়া রনি তালুকদার, মিজানুর রহমান কিংবা সুনীল নারাইনের মতো কার্যকর ব্যাটসম্যানেরা তো আছেনই। ফলটা তাই ঢাকা এই রান তাড়া করতে নামার আগেই অনেকে আন্দাজ করে নিয়েছিলেন। ভুল। এবং ভক্তদের এই আন্দাজকে ভুল প্রমাণ করেছেন ঢাকার ব্যাটসম্যানেরা-ই!
সাদামাটা এই রান তাড়া করতে নেমে ঢাকা হেরেছে ১ রানে। শেষ চারে উঠতে হলে এখন নিজেদের শেষ ম্যাচে জয় ছাড়া পথ নেই ঢাকার। অন্যদিকে রোমাঞ্চকর এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠল কুমিল্লা। ১১ ম্যাচে তাঁদের সংগ্রহ ১৬ পয়েন্ট। অথচ এই ম্যাচটা ঢাকা জিতে আজই নিশ্চিত করতে পারত শেষ চার।
১৫ ওভার শেষে ঢাকার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ৯০। এখান থেকে টানা ১১ বলে ঢাকার ব্যাটসম্যানেরা কোনো রান করতে পারেননি! উল্টো ১৭তম ওভারে টানা দুই বলে পোলার্ড ও নুরুল হাসানকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন কুমিল্লার পেসার সাইফউদ্দিন। শেষ তিন ওভারে ঢাকার দরকার ছিল ৩৭ রান। আন্দ্রে রাসেল তখনো উইকেটে থাকায় ঢাকার আশা টিকে ছিল। অন্য প্রান্তে শুভাগত হোম। ১৮তম ওভারে শহীদ আফ্রিদির কাছ থেকে দুই ছক্কায় মোট ১৭ রান আদায় করে নেন রাসেল। আসলে শেষ ৩০ বলে প্রতি ওভারেই ক্ষণে ক্ষণে পাল্টেছে ম্যাচের রং। জয়ের পাল্লা কখনো কুমিল্লা আবার কখনো ঢাকার দিকে ভারী।
১৯তম ওভারে তো নাটক আরও জমে গেল। ওয়াহাব রিয়াজের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ দিলেন রাসেল। ঢাকার সমর্থকেরা তো চুপসে এতটুকু। কিন্তু টিভি আম্পায়ারের কল্যাণে শেরেবাংলার জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল ‘নো বল’! বল করার সময় পাকিস্তানি পেসারের পা দাগের ওপাশে। ঢাকার সমর্থকেরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। ওই ওভারে শুভাগত ফিরলেও ৮ রান আসায় শেষ ওভারে জয়ের জন্য ১৩ রান দরকার ছিল ঢাকার। সমস্যা হলো স্ট্রাইকে ছিলেন রুবেল হোসেন। রাসেল অন্য প্রান্তে। ম্যাচে তখন টান টান উত্তেজনা। ঢাকা জিতে শেষ চারে উঠবে? নাকি সাকিবের দলকে অপেক্ষায় থাকতে হবে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত।
সাইফউদ্দিন শেষ ওভারের প্রথম বলেই তুলে নেন রুবেলকে। পরের বলে শাহাদত হোসেন ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদল করলেও তৃতীয় বলে রাসেল কোনো রান নিতে পারেননি। অর্থাৎ শেষ তিন বলে ১২ রান দরকার ছিল ঢাকার। হাতে কোনো উইকেট নেই। সামনে রাসেলকে পেয়েও স্নায়ুর চাপ ধরে রেখে দুর্দান্ত বল করছিলেন সাইফউদ্দিন। কিন্তু নাটক আরও জমে যায় ম্যাচের শেষ দুই বলে। পঞ্চম বলে রাসেল ছক্কা মারায় শেষ বলে দরকার ছিল ৬ রান—অর্থাৎ আরও একটি ছক্কা।
সাইফউদ্দিন শেষ বলটা করলেন রাসেলের পায়ের পাতা বরাবর—নিখুঁত ‘ব্লক হোল’ লেংথ। বলটা রাসেলের ব্যাটের ছোঁয়া লেগে সীমানাছাড়া, আর ১ রানের ব্যবধানে রোমাঞ্চ জিতল কুমিল্লা। উত্তেজনায় মাথার চুল ছেঁড়া আর নখ কামড়ানোর এই ম্যাচে রোমাঞ্চের স্বাদ পেয়েছেন দুই দলের সমর্থকেরাই। তবে রাসেল তেতো স্বাদ পেতে পারেন। ২৩ বলে ৩০ রান করে অপরাজিত থেকেও দলকে ম্যাচটা যে জেতাতে পারেননি!
শুরুতে এই রান তাড়া করতে নামা ঢাকার দুই ওপেনারকে দেখেই অনেকের চোখ কপালে উঠেছে। মিজানুর রহমান এবং উপুল থারাঙ্গা। মিজানুর এখনো বড় স্কোর না পেলেও এই বিপিএলে না হয় বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু থারাঙ্গা! লঙ্কান ওপেনারকে ঢাকার ব্যাটিং লাইনআপে আজ-ই প্রথম দেখা গেল। কোনো রান করতে না পারা থারাঙ্গা স্রেফ ৬টি বল নষ্ট করেছেন। দ্বিতীয় ওভারে থারাঙ্গাকে তুলে নেন কুমিল্লার স্পিনার মেহেদী হাসান। ঢাকার স্কোর তখন ১.৫ ওভারে ৬। এখান থেকে পরের ৩০ বলের মধ্যে রান উঠেছে ২৩, আর উইকেট পড়েছে আরও ৩টি! ঢাকার সমর্থকদের মনে কু–ডাক দিয়েছে তখন থেকেই।
থারাঙ্গা ফেরার পর দলীয় ১৭ রানে ফিরেছেন আরেক ওপেনার মিজানুরও। ওপেনিং জুটিতে চমক দেখাতে গিয়ে ঢাকা যেন নিজেই চমকে গেছে! দুই ব্যাটসম্যান যে ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি। স্পিনার মোশাররফ হোসেনের ঘূর্ণিতে মিজানুর ফিরেছেন চতুর্থ ওভারের শেষ বলে। স্কোরবোর্ডে তখন ১৭ রান। পরের ওভারের প্রথম বলেই রনিকেও তুলে নেন কুমিল্লার পেসার সাইফউদ্দিন। অর্থাৎ স্কোরবোর্ডে ১৭ রান থাকতে টানা দুই বলে ২ উইকেট হারায় ঢাকা। অধিনায়ক সাকিব এখান থেকে পারতেন আর কোনো বিপদ না ঘটতে দিতে।
কিন্তু পরের ওভারেই সাকিব ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। মেহেদী হাসানের আগের দুটি বলেই জোর করে মিডউইকেটে উড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছেন ঢাকা অধিনায়ক। একটি ছক্কাও পেয়ে যান। কিন্তু এরপরও লোভ সামলাতে পারেননি। মেহেদীর ভালো লেংথের বলকে আবারও একইভাবে মারতে গিয়ে বোল্ড হন সাকিব (৭)।