>ক্রিকেট বিশ্বকাপ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। চলছে রোমাঞ্চমাখা অপেক্ষা, চলছে স্মৃতিচারণাও। ফিরে দেখা বিশ্বকাপ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনের নতুন ধারাবাহিক। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে বিশ্বকাপের অপরাজিত চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে লেখা। লিখেছেন সঞ্জয় বসাক
গ্রুপপর্বে খেলতে হবে ৯ ম্যাচ। সেমিফাইনালে উঠতে পারলে এবং জিতলে ধরা দেবে ফাইনালের মঞ্চ। আর ফাইনাল জিতলে তো চ্যাম্পিয়নই। সব মিলিয়ে এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি দিতে হবে ১১ ম্যাচের দীর্ঘ পথ। অনেকে বলতে পারেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে হলে এটুকু কষ্ট তো করতেই হবে। কিন্তু জেনে অবাক হতে পারেন, মাত্র চার ম্যাচ খেলেও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির আছে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেই ‘সৌভাগ্যবান’ দল। তাঁরা বিশ্বকাপে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নও। এর মধ্যে ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মাত্র চার ম্যাচ খেলে। বিশ্বকাপের প্রথম আসরের মতো দ্বিতীয় আসরও বসেছিল ইংল্যান্ডেই। আটটি দল দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে একে অন্যের মুখোমুখি হয়েছিল গ্রুপ পর্বে। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল গ্রুপ ‘বি’তে। ৯ জুন গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের মুখোমুখি হয় ক্লাইভ লয়েডের দল। মাত্র ১৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে গর্ডন গ্রিনিজের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটের সহজ জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সূচি অনুযায়ী গ্রুপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল ১৩ জুন, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওভালে। কিন্তু সেদিন তো বটেই, তিন দিন চেষ্টার পরও ভারী বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়াতে পারেনি। ফলে মাঠে না নেমেই ওই ম্যাচে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দুই দল। গ্রুপে শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ ছিল স্যার রিচার্ড হ্যাডলির নিউজিল্যান্ড। গ্রিনিজ-লয়েডের ব্যাটিং ও বোলারদের দারুণ পারফরম্যান্সে ৩২ রানের জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিফাইনালে পা রাখে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
সেমিফাইনালে লয়েডের দল প্রতিপক্ষ হিসেবে পেল ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ পাকিস্তানকে। টুর্নামেন্টে আরও একবার রান পেলেন গ্রিনিজ, এবার সঙ্গ দিলেন আরেক ওপেনিং ব্যাটসম্যান ডেসমন্ড হেইন্সও। ১৩২ রানের উদ্বোধনী জুটির পর রিচার্ডস আর লয়েডের ব্যাটে চড়ে ২৯৩ রানের বড় পুঁজি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে মাজিদ খান ও জহির আব্বাসের ব্যাটে প্রথমবার বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন দেখলেও ৭৪ রানের মধ্যে শেষ ৯ উইকেট হারিয়ে বিদায় নেয় পাকিস্তান। ৪৩ রানের জয়ে টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ফাইনালে পৌঁছে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডদের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড, ফাইনালে আসার পথে যারা চার ম্যাচের প্রতিটিতেই জিতে এসেছে। কিন্তু ফাইনালে অভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতেই পারল না মাইক ব্রিয়ারলির ইংল্যান্ড। ভিভ রিচার্ডস (১৩৮*) ও কলিস কিংয়ের (৮৬) অনবদ্য দুটো ইনিংসের কল্যাণে ইংল্যান্ডকে ৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে অপরাজিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সেটিও মাত্র চার ম্যাচে মাঠে নেমেই।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড হয়ে আছে এটি। তবে এই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও অপরাজিত বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখা গেছে আরও তিনবার। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ৫ ম্যাচসহ মোট ৮ ম্যাচ জিতে প্রথম ও একমাত্র ক্রিকেট বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছিল শ্রীলঙ্কা।
এরপরের দুটি নজির দেখা গেছে পরপর দুই বিশ্বকাপে, এবং সেটিও একই দলের কাছ থেকেই। রিকি পন্টিংয়ের সেই সর্বজয়ী অস্ট্রেলিয়ান দল ২০০৩ ও ২০০৭ আসরের শিরোপা ঘরে তুলেছিল কোনো ম্যাচ না হেরে! ২০০৩ আসরে ১১ ম্যাচ, আর পরের আসরে ১২ ম্যাচ—মোট ২৩ ম্যাচের প্রতিটি জিতে টানা দুইবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনন্য নজির স্থাপন করেছিল পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।