আর যা-ই হোক, এই সিরিজটা আয়োজনে ভারত, অস্ট্রেলিয়া দুই দলেরই অনেক আগ্রহ। অস্ট্রেলিয়ারই বেশি। একে তো ভারত-অস্ট্রেলিয়া মানে দারুণ ক্রিকেটীয় লড়াই, তারওপর সিরিজটা থেকে অস্ট্রেলিয়ান বোর্ডের ৩০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার আয় হতে পারে বলে জানাচ্ছে সংবাদমাধ্যম। করোনাভাইরাস শেষ পর্যন্ত কোনো সিরিজ হতে দেয় না দেয় তার ঠিক নেই বটে, তবে চার টেস্টের এই সিরিজ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দুই বোর্ডই—বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)—উঠেপড়ে লেগেছে সিরিজ আয়োজনে।
তা সিরিজ এখনো নিশ্চিত না হলেও এ নিয়ে কথাবার্তা-আলোচনা-আশাবাদ শুরু হয়ে গেছে। ভারতের ফাস্ট বোলার ভুবনেশ্বর কুমার সম্প্রতি কথা বলেছেন এই সিরিজ নিয়ে। তাতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ব্রিসবেনে দ্বিতীয় টেস্টটি। সেটি যে দিবারাত্রির টেস্ট! গোলাপি বলের টেস্টকে ভুবনেশ্বরের কাছে মনে হচ্ছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ, পাশাপাশি টেস্টটা অনেক মজার হবে বলেও ধারণা ৩০ বছর বয়সী ভারতীয় ফাস্ট বোলার।
'ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সিরিজ নিয়ে সবাই-ই খুব রোমাঞ্চিত। অনেক লম্বা সময় পর ম্যাচ দেখার সুযোগ পাবে সবাই। তা ছাড়া আমরা খেলব ক্রিকেটের সবচেয়ে কঠিনতম প্রতিপক্ষদের একটির সঙ্গে'—ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআইকে বলেছেন ভুবনেশ্বর।
অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে সাতটি দিবারাত্রি টেস্ট খেলেছে, তুলনায় ভারতের অভিজ্ঞতা বলতে গত নভেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলকাতায় একমাত্র দিবারাত্রির টেস্ট। স্বাভাবিকভাবেই অভিজ্ঞতায় অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে। গোলাপি বলে অস্ট্রেলিয়ানদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন ভুবনেশ্বরও, তবে পরে বললেন, 'অ্যাডিলেডে গোলাপি বলে খেলা অনেক মজার হবে।'
এতদিন পর ক্রিকেটে ফিরতে পারাই বা কম মজার কী! করোনাভাইরাসের কারণে সব বন্ধই ছিল, কদিন হলো ক্রিকেট ফিরতে শুরু করেছে মাঠে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাউদাম্পটনে প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছে, ওল্ড ট্রাফোর্ডে দ্বিতীয় টেস্ট চলছে। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেটাররা এখনো বলতে গেলে ঘরবন্দীই। ভারতে করোনার প্রকোপ অনেক বেশি, আক্রান্তের সংখ্যায় এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর বিশ্বে তৃতীয় ভারত। করোনার কারণেই অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হতে পারে ভারতীয় দলকে।
এর মধ্যে অবশ্য ভালো একটা দিকও খুঁজে বের করেছেন ভারতীয়দের প্রিয় 'ভুবি।' কোয়ারেন্টিন মানে যে অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বাড়তি সুযোগ! 'হ্যাঁ, কোয়ারেন্টিন তো নিশ্চিতভাবেই ওই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে, আরও ভালো প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে'—বললেন ভুবনেশ্বর।
কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলে অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য যে মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে ভারতীয় পেস আক্রমণ—তা অনেকেই বলছেন। ভুবনেশ্বরের পাশাপাশি মোহাম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মারা মিলে গত বছর দু-তিনেকে ভারতের পেস আক্রমণ হয়ে উঠেছে দারুণ শক্তিশালী ও বৈচিত্রময়। অনেকের চোখেই বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর পেস আক্রমণ ভারতের। আসলেই ভারতের পেস আক্রমণ বিশ্বের সেরা কি না—সে প্রশ্নে বুমরার উত্তর, 'সেরা কি না বলতে পারব না, তবে সবার যেরকম দক্ষতা, তাতে আমাদের পেস বোলিং আক্রমণ যে অনেক ভালো তা নিয়ে সংশয় নেই। সব অবস্থাতেই আপনাকে আপনার অধিনায়কের ভরসার দাম দিতে হবে, বিরাটও (ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি) আমাদের প্রত্যেককে অনেক সাহায্য করে।'
১৯ বছর বয়সে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে শচীন টেন্ডুলকারকে শূন্য রানে বোল্ড করে প্রথম আলোচনায় আসা ভুবনেশ্বর এ পর্যন্ত ভারতের হয়ে ২১টি টেস্ট, ১১৪টি ওয়ানডে ও ৪৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তবে অনেকদিন হয়ে গেছে, তাঁকে ভারতের জার্সিতে দেখা যায়নি। মার্চের পর থেকে তো করোনাই সব থামিয়ে রেখেছে, করোনা হানা দেওয়ার আগে নিউজিল্যান্ডে ভারতের সর্বশেষ টেস্টেও চোটের কারণে ভুবি খেলতে পারেননি। আপাতত বাড়িতেই ফিটনেস ধরে রাখার সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মাঠে ফিরতে যেন তর সইছে না ভুবনেশ্বরের, 'জানি না ক্রিকেট কবে আবার শুরু হবে, তবে মাঠে ফিরতে সবাই-ই উন্মুখ হয়ে আছি।'
তা এতকিছু নিয়ে কথা হলো, আর আইপিএল প্রসঙ্গ থাকবে না? অস্ট্রেলিয়ায় অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যে এ বছর আর হচ্ছে না, তা শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার অপেক্ষায়। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) চায় সে সময়টাতে আইপিএল আয়োজন করতে। এপ্রিল-মে মাসে হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এ বছর আইপিএলও পিছিয়ে গেছে। তবে করোনা এখনো ভারতে যেমন দাপুটে, তাতে ভারতেই আইপিএল হবে নাকি অন্য কোনো দেশে, তা নিশ্চিত নয়। এখানেও ভুবনেশ্বরের আকুলতা, 'চাই যেন আইপিএলটা এ বছরে হয়। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তেই খেলতে রাজি আমরা।'
অর্থের বান বইয়ে দেওয়া আইপিএলের আকর্ষণ অন্যরকমই বটে!