>ক্রিস গেইলের পরামর্শমতো পাওয়ার হিটিংয়ে নিজেকে পাল্টেছেন আন্দ্রে রাসেল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে, আন্দ্রে রাসেলকে আন্ডারআর্ম বল করলেও ছক্কা মেরে দেবেন! এবার আইপিএল দেখলে কথাটা অবিশ্বাস করা কঠিন। রাসেল স্ট্রাইকে থাকলে কেমন যেন আতঙ্কে ভুগছেন বোলাররা। মাশুলও দিতে হচ্ছে হাতেনাতে। অনেকে আবার সাহস করে নানা রকম লাইন-লেংথে বল ফেলে তাঁকে নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ফল সেই একই। ছক্কা!
টি-টোয়েন্টি যত মারকুটে ক্রিকেট-ই হোক, ব্যাটসম্যানদের কাছে অন্তত ছক্কার চেয়ে চার মারা সহজ হওয়ার কথা। কিন্তু কলকাতা নাইট রাইডার্সের এই ব্যাটসম্যান অন্য ধাতে গড়া মানুষ। ছক্কা মারাই তাঁর কাছে বেশি সহজ। এ পর্যন্ত এবার ২৩ চারের পাশাপাশি মেরেছেন ৩৯ ছক্কা। বীরেন্দর শেবাগ তাই মনে করেন, রাসেল ব্যাট করলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। কারও পক্ষে যতটা মারকুটে হওয়া সম্ভব, রাসেল ঠিক ততটাই।
এবার আইপিএলে কিন্তু তেমন কিছুই দেখিয়ে চলছেন এই ক্যারিবীয়। টি-টোয়েন্টিতে ভবিষ্যৎ মনে করেই নয় বছর আগে তাঁকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় নামিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শুরুতে অতটা মেলে ধরতে পারেননি। রাসেলের নিজের ভাষ্য, ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সময় পাল্টে গেছে তাঁর জীবন। আর তাঁকে পাল্টে দেওয়াটা ব্যক্তিটি ক্রিস গেইল।
কাল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ২৫ বলে ৬৫ রানের ঝড় তোলেন রাসেল। এবার আইপিএলে ধারাবাহিক খুনে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন কলকাতা তারকা। কালও ঝড় তোলার পর তাঁর মুখোমুখি হয়েছিল বিবিসি। সংবাদমাধ্যমটির ‘দুসরা পডকাস্ট’ অনুষ্ঠানে রাসেল জানান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পথে গেইলের একটি পরামর্শ পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। ‘পাওয়ার হিটিংয়ে ক্রিস গেইল পাল্টে দিয়েছে আমার জীবন। তাঁর কাছ থেকে অনেক শিখেছি’—বলেন রাসেল।
ক্যারিয়ারের শুরু থেকে হালকা ওজনের ব্যাট ব্যবহার করতেন রাসেল। এতে কিছু সমস্যাও হতো। যা ধরতে পেরেছিলেন গেইল। বিশ্বকাপ চলাকালীন রাসেলকে ব্যাট পাল্টানোর পরামর্শটা ‘ইউনিভার্স বস’-ই দিয়েছিলেন, ‘হালকা ব্যাটে অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এমন ব্যাটে বল বেশি দূর যেত না। বিশ্বকাপ চলাকালীন একদিন সে (গেইল) আমাকে বলল “রাস, তুমি আরও ভালো করতে পারবে। আরও বড় (ভারী) ব্যাট ব্যবহার করে দেখ। তুমি তো বেশ শক্তিশালী।’
গেইলের পরামর্শমতো ভারী ব্যাট ব্যবহার করে ফলও পান রাসেল। তাঁর ভাষায়, ‘২০১৬ ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার ওই সময়টাই আমার জীবন পাল্টে দেয়। সেমিফাইনালে ৪৩ বলে ৪৮ রান করেছিলাম। এখন আমার ব্যাট বেশ ভারী ও বড়। ব্যাট নিয়ে অনেক কাজও করেছি।’ তবে ব্যাট বদলানো ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপার পাল্টেছেন রাসেল। যা ভূমিকা রেখেছে তাঁর পাল্টে যাওয়ায়।
কয়েক বছর আগে একবার যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে গিয়েছিলেন রাসেল। সেখানে এনএফএল রাগবি খেলোয়াড়দের অনুশীলনের ধরন দেখে সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে পাল্টাবেন, ‘ওরা কঠোর অনুশীলন করে। আমিও তা করি। আমি জানি আমার আরও শক্তিশালী ও ওজন বাড়ানোর দরকার নেই। ওজন বাড়ালে বলের গতির পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের সময় হাতের গতিও মন্থর হয়ে আসবে।’
২০১৭ সালে ডোপিং আচরণবিধি ভাঙায় এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ৩০ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। ওই বছর আইপিএলেও তাঁর খেলা হয়নি। তখন ভীষণ কঠিন সময় কেটেছে রাসেলের। হতাশায় মদ্যপানও ধরেছিলেন। কলকাতা তখন চাইলেই তাঁকে ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি তা করেনি। কঠিন সেই সময় স্মরণ করে রাসেল তাঁর দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এভাবে, ‘২০১৭ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমি খুব সহজে কাঁদি না, কিন্তু ভেঙ্কি মাইশুর (কলকাতা প্রধান নির্বাহী) ফোন করে আমাকে ধরে রাখার কথা জানালে চোখ ভিজে গিয়েছিল জলে। তারা আমাকে এবং আমার পরিবারকে জানে। এসব পারফরম্যান্সের জন্য আমি তাদের কাছে ঋণী।’