শেন ওয়ার্নের মৃত্যুর পাঁচ দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার কাছেই এখনো ব্যাপারটি অবিশ্বাস্য—ওয়ার্ন নেই! আর কোনো দিন স্বভাবসুলভ রসিকতা আর উচ্ছলতায় ভরিয়ে দেবেন না চারদিক। কখনোই বিতর্কে জড়াবেন না। ইউটিউব বা আর্কাইভে তাঁর ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’ কিংবা ম্যাচজয়ী বোলিং স্পেলগুলো অবশ্য থাকবে। সেসবের মধ্যেই ওয়ার্নকে খুঁজে নিতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া দলে তাঁর সাবেক সতীর্থদের কাছে মৃত্যুটা ছিল হৃদয় ওলট-পালট করে দেওয়ার মতো খবর। ওয়ার্নের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কেঁদেছেন রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক। কেউ মেনে নিতে পারছেন না এমন মৃত্যু। এমন প্রাণোচ্ছল একজন সবাইকে এভাবে ফাঁকি দিয়ে চলে যাবেন, কেউই মেনে নিতে পারছেন না। সতীর্থদের কাছে পুরো বিষয়টিই যেন এক দুঃস্বপ্ন।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ফাস্ট বোলার ব্রেট লির কাছেও তা-ই। গভীর রাতে ফোনের শব্দে জেগে কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই মর্মান্তিক সংবাদ পান তিনি। ফোন করে তাঁকে ওয়ার্নের মৃত্যুসংবাদ জানান সাবেক ইংলিশ অফ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ান।
যে কেউই অন্যকে দুঃসংবাদ সাধারণত একটু ঘুরিয়ে বলেন। সচেতনভাবেই এমনটা করা হয়। কারণ, অনেকের জন্যই দুঃসংবাদ ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে কাছের মানুষের চলে যাওয়া বা কোনো বিপদ। শুক্রবার ওয়ার্নের নিথর দেহ যখন থাইল্যান্ডের কোহ সামুইয়ের ভিলায় আবিষ্কৃত হয়, অস্ট্রেলিয়ায় তখন গভীর রাত। ব্রেট লিও সেদিন ঘুমাচ্ছিলেন। জেগে ওঠেন গ্রায়েম সোয়ানের ফোনে। ইংলিশ অফ স্পিনার তাঁকে বলেন, ‘ওয়ার্নের খবরটা বিশ্বাস করতে পারছি না লি।’ সে সময় ব্রেট লি মনে করেছিলেন, ওয়ার্ন হয়তো আবার নতুন করে কোনো বিতর্ক তৈরি করেছেন।
সে মুহূর্তের বর্ণনা নিজের পডকাস্টে দিয়েছেন লি (ব্রেট লি পডকাস্ট), ‘আমি আমার মা-বাবার সঙ্গে ছিলাম। প্রথমে সাউথ কোস্ট ও পরে সাউদার্ন আইল্যান্ডে ছুটি কাটিয়ে ফিরেছি। সেদিন রাতে ঘুমিয়ে পড়েছি। আমি ঘুমানোর সময় ফোনের শব্দ কমিয়ে ঘুমাই। হঠাৎ ফোনের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে আমার ঘর। জেগে দেখি, গ্রায়েম সোয়ান ফোন করেছে। ফোন ধরতেই সে আমাকে বলে, “লি, ওয়ার্নির খবরটা বিশ্বাস করতে পারছি না।” আমি প্রথমে ভেবেছিলাম ওয়ার্ন বুঝি নতুন করে কোনো কাণ্ড ঘটিয়েছে।’
ব্রেট লি এরপর গুগলে ওয়ার্নের খবর সার্চ দেন। সেখানেই দেখেন, অবিশ্বাস্য সংবাদটা—ওয়ার্ন আর নেই, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। এমন কিছু দেখব, ভাবতেই পারিনি। আমার বাবাও বাড়ির ওপর তলা থেকে নিচে নেমে এসে বললেন, “এসব কী দেখছি!”’
কেবল ব্রেট লি কেন, গোটা ক্রিকেট দুনিয়াতেই তো শুক্রবার সন্ধ্যার প্রশ্ন, ‘এসব কী শুনছি!’