ক্রিস কেয়ার্নসের সর্বশেষ অবস্থা জানালেন তাঁর স্ত্রী

নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ক্রিস কেয়ার্নস মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, খবরটা গতকালকের। কয়েক দিন আগে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়া কেয়ার্নসের হৃদ্‌যন্ত্রের মহাধমনিতে গুরুতর সমস্যা ধরা পড়েছে। আপাতত লাইফ সাপোর্টে আছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের পত্রিকা এনজেড হেরাল্ড জানিয়েছে, কেয়ার্নসকে ক্যানবেরা থেকে সিডনির একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে স্থানাস্তর করা হয়েছে। সেখানে তাঁর আরও একটি অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। তাঁর স্ত্রী মেলানি কেয়ার্নসকে উদ্ধৃত করে পত্রিকাটি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৬২টি টেস্ট আর ২১৫টি ওয়ানডে খেলা এই অলরাউন্ডারের শারীরিক অবস্থা মোটেও ভালো নয় ‘আপনারা সবাই জানেন, কেয়ার্নস গত সপ্তাহে ক্যানবেরায় গুরুতর হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ক্যানবেরাতেই তাঁর একটি প্রাথমিক অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর অবস্থা এতটাই খারাপ যে তাঁকে সিডনির বিশেষায়িত সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাঁর আরও একটা অস্ত্রোপচার হবে।’

ক্যানবেরায় নতুন জীবন শুরু করেছিলেন কেয়ার্নস

এ মুহূর্তে গণমাধ্যম ও মানুষের মনোযোগ থেকে একটু দূরেই থাকতে চান ক্রিস কেয়ার্নসের পরিবার, ‘কেয়ার্নসের খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পর সবাই আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন, সমবেদনা জানিয়েছেন। নিউজিল্যান্ড ও বাইরের দুনিয়া থেকে অনেকেই তাঁর খবর জানতে চাচ্ছেন। আমরা খুবই কৃতজ্ঞ যে এ বিপদের সময় আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে এখন আমরা একটু নির্জন পরিবেশ চাই। নির্জন পরিবেশে ক্রিসের চিকিৎসা করাতে চাই। এখন থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো আপডেট আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হবে না। আশা করছি, আমাদের মানসিক অবস্থাটা আপনারা সবাই বুঝতে পারছেন।’

ক্রিস কেয়ার্নসের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ক্রিকেট নিউজিল্যান্ডের প্রধান নির্বাহী ডেভিড হোয়াইট এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘আমরা ক্রিস কেয়ার্নসের শারীরিক অবস্থায় খুবই শঙ্কিত। আমরা এ বিপদে ক্রিসের পরিবারের পাশে আছি। তিনি কেবল নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারই নন, তিনি ভালোবাসাপূর্ণ এক স্বামী, বাবা ও সন্তান। আমরা আশা করছি, ক্রিস দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কেয়ার্নস

নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার টেস্টে ৩৩ গড়ে ৩ হাজার ৩২০ রান করেছেন। বল হাতে উইকেট নিয়েছেন ২১৮টি। টেস্টে ৫টি সেঞ্চুরি আর ২২ ফিফটি আছে তাঁর। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে (ওয়ানডে) ছিলেন বেশি কার্যকর। ২০০০ সালে উজডেসের বর্ষসেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হয়েছিলেন। স্ত্রী মেলানি ও সন্তানদের নিয়ে বেশ কয়েক বছর যাবৎ অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় বাস করছিলেন। সেখানে ‘স্মার্ট স্পোর্টৎজ’ নামের একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন তিনি।

২০০৮ সালে ভারতের বিদ্রোহী ফ্র্যাঞ্জাইজি ক্রিকেট লিগ আইসিএলে যোগ দিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) কখনোই সেই লিগকে স্বীকৃতি দেয়নি। উল্টো সেই লিগে খেলা কেয়ার্নস তাদের সে সময়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা লোলিত মোদির রোষানলে পড়েন। ২০০৮ সালেই আইপিএল শুরু হলে কেয়ার্নসকে ললিত নিলাম থেকে বাদ দেন। ললিত মোদি তখন আইপিএলের হর্তাকর্তা। কেবল তা–ই নয়, কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগও আনেন। সেই অভিযোগ তাঁর জীবন ‘নরক’ বানিয়ে ফেলেছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন কেয়ার্নস নিজেই।

এমনকি তাঁর দুই নিউজিল্যান্ড সতীর্থ লু ভিনসেন্ট আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামও ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনেছিলেন। ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডের এক আদালত তাঁকে সব ধরনের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেন। মাঝখানে প্রবল অর্থকষ্টেও পড়েছিলেন কেয়ার্নস। পরে ক্যানবেরায় গিয়ে এই স্মার্ট স্পোর্টৎজ প্রতিষ্ঠা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই কিউই অলরাউন্ডার।