‘স্বগতোক্তি’ করেই নতুন করে বিপদে পড়েছেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। তিন বছর আগে বল-টেম্পারিং নিয়ে কথা বলেছিলেন একটি পত্রিকার সঙ্গে। সেখানে কেপটাউন টেস্টের ঘটনার সব দায় নিজের ঘাড়েই নিয়েছেন। শুধু বলেছেন, বল যে বিকৃত করা হচ্ছে, সেটা টের পাওয়ার কথা অন্যদের। কারণ, একজন পেশাদার বোলারের সেটা বোঝার কথা।
এরপরই শুরু হয়েছে তোলপাড়। সাবেক ক্রিকেটাররা বলছেন, এ ঘটনায় যে অনেকেই জড়িত, সেটা আগেই টের পাওয়া গেছে। ইংলিশ পেসার স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছেন, একজন বোলার হিসেবে বল ধরার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা বুঝে ফেলেন বলে কিছু হয়েছে কি না, তাই অস্ট্রেলিয়ান বোলাররাও নিশ্চয় জানতেন এ ঘটনা। ইয়ান চ্যাপেল আরও একধাপ এগিয়েছেন। বলেছেন, এ ঘটনায় নিশ্চিত বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় লোকজনও জড়িত ছিলেন।
এদিকে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বলেছে, দরকার হলে নতুন করে তারা তদন্ত করবে। তাই কারও (ব্যানক্রফট) কাছে নতুন তথ্য থাকলে জানাতে। এমন অনুরোধের পর পিছু হটেছেন ব্যানক্রফট। বলেছেন, নতুন করে জানানোর মতো কিছু নেই।
ব্যানক্রফট এখন আছেন যুক্তরাজ্যে। কাউন্টি খেলার জন্য ডারহামে আছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। সেখানেই গার্ডিয়ানের ডোনাল্ড ম্যাকরির কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২০১৮ সালের মার্চের সে ঘটনা নিয়ে কথা বলেছেন, ‘দেখুন, আমি নিজে যা করেছি সেটার দায় নিতে চেয়েছি, নিজে যতটুকু ভূমিকা রেখেছি, সেটার ফল মেনে নিয়েছি। অবশ্যই, আমি যা করেছি সেটা বোলারদের সুবিধা দিয়েছে এবং ব্যাপারটা যে অন্যরা টের পাচ্ছিল সেটা তো “স্ব-ব্যাখ্যামূলক” (বোঝাই যায়)।’
ব্যানক্রফট এরপর যোগ করেছেন, ‘একটা জিনিস যদি এ থেকে শিখে থাকি আমি, সেটা হলো কোথায় থামতে হবে, সে ব্যাপারে দায়িত্বশীল হওয়া। যদি আরও সচেতন হতাম, তাহলে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতাম।’ ব্যানক্রফটের কাছে স্পষ্টভাবে আবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, বোলাররা কি আসলেই জানতেন বল বিকৃতির বিষয়ে? এর উত্তরে একটু দ্বিধা করে ‘হ্যাঁ’-ই বলেছিলেন এই ওপেনার, ‘উম...হ্যাঁ। দেখুন, আমার মনে হয় হ্যাঁ, জানত। আমার ধারণা, এটা তো সম্ভবত “স্ব-ব্যাখ্যামূলক” (বল বিকৃত করা হয়েছে, সেটা বোঝা)।’
২০১৮ সালের প্রাথমিক তদন্তে শুধু ব্যানক্রফট, অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ ও সহ অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। এ ব্যাপারে অন্য কেউ জড়িত নয় বলেই জানানো হয়েছিল। তাই নতুন সাক্ষাৎকারের পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ব্যানক্রফটের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। এ ব্যাপারে খেলোয়াড়ের কাছের এক সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সোমবার রাতেই ব্যানক্রফট এ ব্যাপারে বোর্ডের সঙ্গে মীমাংসা করে নিয়েছেন এবং বলেছেন, বোর্ডকে দেওয়ার মতো নতুন কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাঁর কাছে নেই। ব্যানক্রফট বোর্ডকে দেওয়া এক ই-মেইলে বলেছেন, বোর্ডের তদন্তে তিনি সন্তুষ্ট।
এর আগে ইয়ান চ্যাপেল, মাইকেল ক্লার্ক ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টরা বলেছেন, ব্যানক্রফটের কথায় চমকানোর কিছু নেই। কারণ, একটি পেশাদার ক্রিকেট দলের কারও পক্ষেই বল বিকৃতির ঘটনায় অজ্ঞ থাকা সম্ভব নয়। চ্যাপেল তো ব্যানক্রফট, স্মিথ ও ওয়ার্নারকে সব খুলে বলার উপদেশ দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি হলে এর পেছনে থাকা সব ‘রাঘববোয়াল’-এর নামও জানিয়ে দিতেন।