খুঁজলে হয়তো অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে ছেলেদের আগেই বড় কোনো কীর্তি করে রেখেছে মেয়েরা। এমনকি ক্রিকেটেও! যেসব কীর্তি যে কোনো দিনই স্মরণ করার মতো। তবে বিশ্ব নারী দিবসই সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত দিন, কী বলেন?
বলুন তো, টেস্ট ক্রিকেটে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেটের ‘ডাবল’-এর প্রথম কীর্তি কার?
উত্তরটা হয়তো আপনার ঠোঁটের ডগায় এসে গেছে—কেন, ইয়ান বোথাম!
স্থান-কালও হয়তো বলে দিতে পারবেন অনেকে। ১৯৮০ সালে ভারতের বিপক্ষে মুম্বাইয়ে গোল্ডেন জুবিলি টেস্টে বোথামের ওই কীর্তি। দুই বছর পর ইমরান খান যেটির পুনরাবৃত্তি করেন, ৩৪ বছর পর সাকিব আল হাসান।
এবার আরেকটা প্রশ্ন, একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন কে?
আপনার মুখে একটা হাসি দেখতে পাচ্ছি। এর চেয়ে সহজ প্রশ্ন আর হয় নাকি! কে না জানে, একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ, মানে ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি শচীন টেন্ডুলকারের।
এখন যদি বলি, দুটি প্রশ্নের উত্তরই ভুল, তাহলে কি আপনি একটু চমকে যাবেন?
উত্তর দুটি আসলেই ভুল।
ইয়ান বোথামের ২২ বছর আগেই টেস্ট ক্রিকেট একই ম্যাচে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেটের যুগলবন্দী দেখে ফেলেছে। তা করেছেন একজন নারী। নাম বেটি উইলসন।
২০১০ সালে গোয়ালিয়রে শচীন টেন্ডুলকারের ডাবল সেঞ্চুরির ১৩ বছর আগেই ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করে রেখেছেন একজন নারী। নাম বেলিন্ডা ক্লার্ক।
ক্রিকেটের ব্যক্তিগত দুটি বড় রেকর্ডেই ছেলেদের হারিয়ে দিয়ে মেয়েরা প্রথম। বেটি উইলসনের সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেটের কীর্তি ১৯৫৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মেলবোর্নের সেন্ট কিল্ডা মাঠে। ১০ বছর আগে জীবনের প্রথম দুই টেস্টেই উইলসন যা প্রায় করে ফেলেছিলেন। অভিষেক টেস্টে বোলিংয়ে ১০ উইকেট নিলেও সেঞ্চুরি পাননি ১০ রানের জন্য। পরের টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম মেয়ে হিসেবে অ্যাশেজে সেঞ্চুরি পেলেও উইকেট পান ৯টি। মেয়েদের ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকও এই বেটি উইলসনের। বেটি উইলসনকে যে ‘ফিমেল ব্র্যাডম্যান’ বা ‘মেয়ে ব্র্যাডম্যান’ নামে ডাকা হতো, তাতে আর আশ্চর্য কী! যদিও বেটি উইলসন বলতেই পারতেন, ডন ব্র্যাডম্যান তো মূলত ব্যাটিংটাই ভালো পারতেন, তিনি কি আমার মতো অলরাউন্ডার ছিলেন!
কাকতালীয়ভাবে বেলিন্ডা ক্লার্কের ডাবল সেঞ্চুরি পুরুষদের ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান শচীন টেন্ডুলকারের জন্মস্থান মুম্বাইয়ে। ১৯৯৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ডেনমার্কের বিপক্ষে অপরাজিত ২২৯।
কলকাতার ইডেন গার্ডেনে খেলার স্বপ্ন থাকে যেকোনো ক্রিকেটারের। সেখানে বাংলাদেশের ছেলেদের আগে খেলেছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
বিশ্বকাপেও তো ছেলেদের হারিয়ে দিয়েছে মেয়েরা। মেয়েদের প্রথম বিশ্বকাপ হয়েছে ১৯৭৩ সালে। ছেলেদের বিশ্বকাপ ক্রিকেট এর দুই বছর পর।
ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েরাও এমন একটা ‘প্রথম’-এর দাবি করতে পারেন। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে খেলার স্বপ্ন থাকে যেকোনো ক্রিকেটারেরই। বাংলাদেশের ছেলেদের আগেই তা খেলেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ পশ্চিম বাংলা সভাপতি একাদশের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা খেলেছিলেন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের ব্যানারে।
এই প্রথম না হয় ঘটনাচক্রে। খেলোয়াড়ি কৃতিত্বের প্রমাণ মেলে, এমন ক্ষেত্রেও তো বাংলাদেশের মেয়েরা একটা 'প্রথম'-এর দাবিদার। বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল এখনো বলার মতো কোনো ট্রফি জিততে পারেনি। ছেলেদের অনেক পরে শুরু করেও মেয়েরা যা জিতে ফেলেছে। সেই জয় এশিয়া কাপে। ২০১২ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পুরুষ ক্রিকেট দল ফাইনালে মাত্র ২ রানে হেরে না গেলে হয়তো তা হতো না। কারণ মেয়েদের জয় তো ২০১৮ সালে। কী হলে কী হতো না, এই আলোচনার তো আর অর্থ হয় না। মেয়েরা আগে জিতেছে, এটাই শেষ কথা। শুধুই আগেই বা বলছি কেন, আগে-পরে সব হিসাব করলেও তো বাংলাদেশের ক্রিকেটে এশিয়া কাপ ওই একটাই।
খুঁজলে হয়তো এমন আরও অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে, যেখানে ছেলেদের আগেই বড় কোনো কীর্তি করে রেখেছে মেয়েরা। তবে ক্রিকেটেও এমন কিছুর একটু আলাদা মহিমা না থেকে পারেই না! এই কয়েক বছর আগেই ক্রিকেটের সবচেয়ে বনেদী ক্লাব এমসিসিতে মেয়েদের কোনো স্থান ছিল না। এমসিসির মাঠ লর্ডসের প্যাভিলিয়নে মেয়েরা প্রবেশাধিকার পেয়েছে, এটাও তো বেশি দিন আগের কথা নয়।
এসব কীর্তি যে কোনো দিনই স্মরণ করার মতো। তবে বিশ্ব নারী দিবস সম্ভবত সবচেয়ে উপযুক্ত দিন, কী বলেন?