গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে খেলোয়াড়দের পক্ষে কথা বলতে এলেন তাদের আইনি পরামর্শক ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। গত সোমবার ক্রিকেটাররা মিরপুরের একাডেমি মাঠে দাঁড়িয়ে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ইকবালসহ ১১ ক্রিকেটার যে ১১ দফা তুলে ধরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে ব্যারিস্টার মুস্তাফিজ যোগ করেন আরও দুই দফা। এই ১৩ দফা দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) একটি চিঠি দিয়েছেন।
ক্রিকেটারদের ১৩ দফায় যা যা আছে...
০১. ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তদের পদত্যাগ। ক্রিকেটাররা জানিয়েছেন কোয়াবের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত কোনো সংঘাত নেই। কেবল স্বার্থের সংঘাত বন্ধ করতেই এই পদত্যাগ করতে হবে। উল্লেখ কোয়াবের দুই শীর্ষ ব্যক্তি বিসিবির পরিচালক। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট কোয়াবের নেতৃস্থানীয়রা।
এর পাশাপাশি লিস্ট ‘এ’, প্রথম শ্রেণিসহ সব ধরনের পেশাদার ক্রিকেটারদের নিয়ে একটি আলাদা সংগঠন পেশাদার ক্রিকেট সংগঠন গঠন করার কথাও বলা হয়েছে। ১৯৬৭ সালে ইংল্যান্ডে ও ১৯৯১ সালে এমন সংগঠন গঠিত হয়েছে।
০২. ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের আয়োজন আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া। এখন যে পদ্ধতিতে প্রিমিয়ার লিগ আয়োজিত হয়, তাতে আছে ‘খেলোয়াড় ড্রাফট’ ও ‘পেমেন্ট স্ল্যাব’। এতে করে ক্রিকেটাররা নিজেদের ইচ্ছামতো ক্লাব বেছে নিতে পারেন না। চাহিদা অনুযায়ী বাজার মূল্যও নির্ধারণ করার অধিকার রাখেন না।
০৩. আগামী বিপিএলেও এই পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়েছে। এতে খেলোয়াড়েরা নিজের ফ্র্যাঞ্চাইজি বা দল নিজেরাই বেছে নিতে পারবেন, বাজারদরও চাহিদা অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। বিপিএলে বিদেশি ও দেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে পারিশ্রমিকে বৈষম্য দূর করতে হবে। ক্রিকেটাররা বলেছেন, একটা স্বাধীন দেশে এই বৈষম্য অগ্রহণযোগ্য।
০৪. প্রথম শ্রেণির ম্যাচে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ১ লাখ টাকা করা।
০৫. পারিশ্রমিক বছর শেষে পুনর্মূল্যায়ন করা। প্রথম শ্রেণির দলগুলোর কোচিং স্টাফ সারা বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া। খেলোয়াড়েরা যেন সারা বছর অনুশীলন করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা। প্রতিটি বিভাগে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।
০৬. বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে ন্যূনতম ৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা।
০৭. লোকাল স্টাফ, গ্রাউন্ডসম্যানদের পারিশ্রমিক বাড়ানো। দেশি কোচদের বেতন বাড়াতে হবে।
০৮. লিস্ট ‘এ’, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটে ম্যাচের সংখ্যা বাড়ানো। বিপিএলের পাশাপাশি আরও একটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চালু করা।
০৯. ঘরোয়া ক্রিকেটের অপরিবর্তিত ক্যালেন্ডার নিশ্চিত করা। সারা বছর ক্রিকেটাররা খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের সূচি নির্দিষ্ট থাকলে সে অনুযায়ী পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় নিশ্চিত করতে পারেন তারা।
১০. খেলোয়াড়দের সব পাওয়া টাকা-পয়সা সময়মতো নিশ্চিত করা। বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো যেন খেলোয়াড়দের টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো টালবাহানা না করে সে ব্যবস্থা করা।
১১. একজন খেলোয়াড়কে দুইয়ের অধিক ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট খেলার অনুমতি প্রদান। তবে এটা অবশ্যই জাতীয় দলের খেলা ও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে দিতে হবে।
১২. ক্রিকেট-ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। বিসিবির রাজস্বের ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের ক্রিকেট আর কয়েক বছরের মধ্যে ক্রিকেট দুনিয়ার দ্বিতীয় বড় বাজার হতে যাচ্ছে। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার রাজস্বের হিস্যা পায়। তবে এটি ক্রিকেটারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি নিশ্চিত করা।
১৩. নারী ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। পুরুষ ক্রিকেটারদের সমান সম্মান ও তাদের পাওনা।
এই ১৩টি দাবির সঙ্গে আরও কথাবার্তা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছেন ক্রিকেটারদের আইনি পরামর্শক ব্যারিস্টার মুস্তাফিজ। তিনি বলেন, একজন ক্রিকেটার নিজেকে গড়ে তুলতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন। তিনি তাঁর একাডেমিক পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে ক্রিকেট খেলেন। সে কারণে অন্যান্য চাকরি বাকরি করার সুযোগও তাঁর কমে যায়। সঙ্গে চোট ও ফর্মহীনতার কারণে তাদের ক্যারিয়ার সংক্ষিপ্ত হতে পারে।
চোটের চিকিৎসার জন্য বোর্ডের দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর ক্রিকেটারদের নির্ভর করতে হয়। চিকিৎসা যেন নিশ্চিত হয় সে জন্য আলাদা কল্যাণ তহবিলও চেয়েছেন তারা।
ক্রিকেটাররা বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এই সুযোগ-সুবিধাগুলো খুব সহজেই নিশ্চিত করতে পারে। কারণ বিসিবির সেই আর্থিক সংগতি আছে।
ক্রিকেটাররা খেদ প্রকাশ করে বলেছেন, মোটামুটি সচ্ছল ক্রিকেট বোর্ড হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশি বেতনভুক্ত ক্রিকেটারদের বেতন জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ডের চেয়েও কম।
এ ছাড়া বিদেশের মাটিতে দৈনিক ভাতা নিয়েও ক্ষোভ ক্রিকেটারদের। জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার বিসিবির কাছ থেকে বিদেশে খেলতে গেলে দৈনিক ভাতা পান ৫০ ডলার। অথচ, বিদেশে গেলে বোর্ড কর্তারা পান ৫০০ ডলার করে।