>ধর্মঘট শেষ, খেলোয়াড়েরা উন্মুখ হয়ে আছেন মাঠে ফিরতে। সমস্যার সমাধান হলেও একটা ভয়ও কাজ করছে ক্রিকেটারদের মধ্যে
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে কাল রাতে খেলোয়াড়দের সঙ্গে বসেই বিসিবি সভাপতি শুরুতেই খুঁজতে শুরু করলেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। উচ্চ স্বরে মিরাজের কাছে জানতে চাইলেন, ‘গত দুই দিনে তুমি আমার ফোন ধরনি কেন?’ এরপর ভরা মজলিশেই বলে ফেললেন, ‘বাদ পড়ার পর তোমাকে আমিই ফিরিয়েছি, অথচ তুমি আমার ফোন ধরো না!’
ধর্মঘট চলার সময় ক্রিকেটাররা বোর্ড কর্তা থেকে শুরু করে সাংবাদিক এমনকি কাছের বন্ধুবান্ধবদেরও ফোন ধরা থেকে বিরত ছিলেন। বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ফোন বন্ধ করে রেখেছিলেন। মিরাজও ব্যতিক্রম নন। ধর্মঘট শতভাগ সফল করতে এ ছাড়া নাকি তাঁদের আর কোনো উপায়ও ছিল না। শুধু মিরাজ নন, বিসিবি সভাপতি আসলে আন্দোলনে যাওয়া কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। এটিই নাকি তাঁকে বেশি ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তিনি মানতেই পারেননি, ধর্মঘট সফল করতে ক্রিকেটাররা তাঁর সঙ্গে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন।
কাল বৈঠকের শুরুতে তাই মিরাজের ওপর রাগ ঝেড়ে নাজমুল সব ক্রিকেটারকে বুঝিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর একেবারে ভালো লাগেনি। বিসিবি সভাপতির ভালো লাগা না–লাগা জেনেই তো খেলোয়াড়েরা ধর্মঘটে গেছেন। তবুও বৈঠকের শুরুতে তাঁর রাগান্বিত চেহারা দেখে অনেক ক্রিকেটারই ঘাবড়ে গেছেন। পরে যদিও নাজমুল নিজেই পরিবেশ হালকা করেছেন। খেলোয়াড়দের বলেছেন, ‘তোমাদের ওপর আমার রাগ ছিল, তবে এখন সেটা পড়ে গেছে। তোমরা বলো, শুনি তোমাদের দাবিদাওয়া।’
ক্রিকেটাররা যে দাবিদাওয়া তুলে ধরেছেন, প্রায় সবই যে মেনে নিয়েছেন, সেটি তো পরে সংবাদমাধ্যমকে নাজমুল এবং ক্রিকেটারদের পক্ষে সাকিব আল হাসান জানিয়েছেন। তবে বৈঠক শেষে অনেক খেলোয়াড়ের মধ্যে একটা ভয়ও কাজ করেছে। তাঁদের ধারণা, এখন থেকে বিসিবি অণুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ও নানা ভুলত্রুটি দেখবে। পান থেকে চুন খসলেই হয়তো তাঁদের শাস্তি পেতে হবে। সেই শাস্তি নিয়ে তাঁরা খুব একটা উচ্চবাচ্যও করতে পারবেন না।
ধর্মঘটে যুক্ত থাকা এক ক্রিকেটার অবশ্য বলছেন, এটিকে ভয় নয়, চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে, ‘পারফরম্যান্স খারাপ করলে বাদ পাড়াটা নতুন কিছু নয়। হ্যাঁ, এখন হয়তো এ বিষয়ে বোর্ড আরও কঠোর হবে। এটাতে ভয় না পেয়ে বরং চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। আমি ভালো খেললে আমাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না, সবাইকে এটাই ভাবা উচিত।’
পারফরম্যান্সের বাইরে অন্যান্য বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। তবুও চলতে-ফিরতে ভুল হবেই। বিসিবি যেন সেই ভুলের সুযোগে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিতে পারে, সে কারণে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াবে নতুন নেতৃত্ব চান তাঁরা। তাঁদের চাওয়া, এই সংগঠনের নেতৃত্বে থাকবেন বর্তমান খেলোয়াড়েরা, যাতে যেকোনো খেলোয়াড়ের সমস্যা-সংকট, বিপদ-আপদে বড় ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে কোয়াব। কাল বৈঠকের পর সাকিব তাই তাঁর সতীর্থদের বলেছেন, ‘আমরা যেন এভাবেই এক হয়ে থাকি। এবার যেভাবে সংঘবদ্ধভাবে আমাদের দাবি আদায় করেছি, ভবিষ্যতেও আমাদের এভাবে এক হয়ে থাকতে হবে।’
ধর্মঘট শেষ। খেলোয়াড়েরা এখন মাঠে ফিরবেন। জাতীয় লিগের তৃতীয় রাউন্ড খেলতে আজই যাঁর যাঁর ভেন্যুতে চলে যাবেন তাঁরা। বাংলাদেশ দল কাল থেকে শুরু করবে ভারত সফরের প্রস্তুতি।