গল্পটা হতে পারত চামিকা করুনারত্নের। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং-ধসের মুখে আটে নেমে ৭৫ বলে ৭৫ রানের ইনিংস খেলেছেন মূলত পেসার চামিকা, যেখানে ১৮ ম্যাচে গড়ানো ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এর আগে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোরই ছিল ৪৪ রানের। কলম্বোর স্পিন-স্বর্গে তাঁর দারুণ ব্যাটিংয়েই লড়াই করার মতো ১৬০ রানের স্কোর গড়েছে শ্রীলঙ্কা।
গল্পটা হতে পারত দুনিথ ভেল্লালাগের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেই ওয়ানডে অভিষেক, আগের ৪ ম্যাচে পেয়েছেন ৬ উইকেট। আজ ১০ ওভারে ৪২ রানে ৩ উইকেট তাঁর, তার মধ্যে প্রথম উইকেটে অস্ট্রেলিয়াকে ২/১৪ বানিয়েছেন। পরে মারনাস লাবুশেন ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকেও তিনিই ফিরিয়ে দিলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর হয় ৬/১২১।
কিন্তু কলম্বোয় আজ সিরিজের পঞ্চম ম্যাচে শেষ পর্যন্ত গল্পটা হলো অ্যালেক্স ক্যারির। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ৪৫ রানেই শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেট ও ৬৩ বল হাতে রেখে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।
সিরিজের প্রথম ম্যাচে হারলেও পরের তিন ম্যাচ জিতে দারুণভাবে সিরিজই জিতে গেছে শ্রীলঙ্কা, আজ শেষ ম্যাচে সে হিসেবে কারও তেমন পাওয়া বা হারানোর কিছু ছিল না। ২৯ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া দুই টেস্টের সিরিজের আগে এই জয়ে অস্ট্রেলিয়া একটু আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল, এই যা!
ম্যাচের প্রথম ২০ ওভারের পর অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার জয় অনায়াস হবে বলেই মনে হচ্ছিল। হ্যাজলউড, কুনেমান, কামিন্সদের ধাক্কায় ৬২ রানেই যে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলঙ্কা। কিছুক্ষণ পর জেফরি ভ্যান্ডারসেই রানআউট হয়ে ফিরলে ৮৫ রানে অষ্টম উইকেটও হারায় লঙ্কানরা। স্বাগতিকদের দলীয় স্কোর ১০০ ছাড়াবে কি না, সে-ই যখন শঙ্কা, অবিশ্বাস্য পাল্টা লড়াই শুরু হলো করুনারত্নের ব্যাটে।
২৮ বছর বয়সে এসে আজই প্রথমবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া প্রমোদ মাদুসানকে নিয়ে নবম উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়লেন করুনারত্নে। মাদুসানও দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন, ১৫ রান করেছেন ৫২ বলে। ৪৪তম ওভারের প্রথম বলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করুনারত্নে খেললেন ৭৫ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৭৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস।
উইকেটে স্পিন ধরছে, শ্রীলঙ্কার মহিশ তিকসানা, ভেল্লালাগে, ভ্যান্ডারসেই ও চারিত আসালঙ্কা—চার স্পিনার আছেন। অস্ট্রেলিয়ানরাও স্পিনে বিশেষ একটা সাবলীল নন। এমন পিচে এই ১৬০ রানই যে শ্রীলঙ্কার জন্য ভালো লড়াই করার মতো সংগ্রহ হতে যাচ্ছে, সেটি বোঝাই যাচ্ছিল। বাস্তবে অস্ট্রেলিয়ানরা কতটা খাবি খাচ্ছে, সেটি বোঝা গেল ইনিংসের ষষ্ঠ ওভার শেষ না হতেই। ইনিংসে ৩২ বলের মধ্যেই ১৯ রানে ৩ উইকেট নেই।
তিনে নেমে মিচেল মার্শ কিছুটা ইনিংস গুছিয়ে নেওয়ার কাজ করেছিলেন, কিন্তু দলকে ৫০ রানে রেখে তিনিও ফিরলেন (৫০ বলে ২৪ রান)। সেখান থেকেই অস্ট্রেলিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু, যেটির কেন্দ্রে অ্যালেক্স ক্যারি!
মার্শ আউট হওয়ার পর ক্রিজে নেমেছেন। অন্য প্রান্তে মারনাস লাবুশেনও দেখেশুনে খেলছিলেন। লাবুশেন (৫৮ বলে ৩১) ফেরার আগে ষষ্ঠ উইকেটে ক্যারি-লাবুশেনের জুটি হলো ৫১ রানের। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল দ্রুত ফিরে গেলেও (১৭ বলে ১৬) ক্যারি তো ছিলেন! সপ্তম উইকেটে ক্যামেরন গ্রিনের (২৬ বলে ২৫) সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪৩ রানের জুটিতে অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়ে যখন মাঠ ছাড়ছেন, ক্যারির নামের পাশে ৬৫ বলে ৪৫ রান।