ক্রিস কেয়ার্নসের জীবনটা যেন তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগটা খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ পর্যন্ত, যেখানে তিনি নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটের অন্যতম বড় চরিত্র। পরের অংশটা ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অনেকের চোখে খলনায়ক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পরের অংশটার শুরু গত বছরের আগস্ট থেকে, কেয়ার্নসকে এখন লড়তে হচ্ছে জীবন বাঁচাতে।
গত বছরের আগস্টে হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার কেয়ার্নসের। লাইফ সাপোর্টে নিতে হয়েছিল তাঁকে। চার–চারটি ওপেন হার্ট সার্জারির পর সেখান থেকে জীবন নিয়ে ফিরতে পারলেও চলার শক্তি হারান কেয়ার্নস। চারটি ওপেন হার্ট সার্জারির একটি করার সময় স্ট্রোক করেছিলেন। কোমড় থেকে নিচের অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায় তাতে। এরপর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে খবর আসে, ক্যানসার বাসা বেঁধেছে কেয়ার্নসের শরীরে।
সব মিলিয়ে জীবনের এমন বাঁকবদল পাল্টে দিয়েছে কেয়ার্নসের জীবনদর্শন। পুরোনো অনেক রাগ, ক্ষোভ আর দুঃখ এখন আর মনের মধ্যে পুষে রাখেন না। এত ঝড়ঝাপটা পেরিয়েও বেঁচে আছেন বলেই খুশি কেয়ার্নস। এমনকি ম্যাচ পাতানোর অভিযোগের দুঃখ–কষ্টের সেসব দিনও এখন আর তাঁর কাছে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। এত দিন পর সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন কেয়ার্নস। ওই সময় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন, ডুবে গিয়েছিলেন হতাশায়।
কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ মূলত এনেছিলেন লোলিত মোদি। ২০০৮ সালে একটি টুইট করে কেয়ার্নসের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। সেই টুইটের জের ধরে ২০১২ থেকে ২০১৫—এই তিন বছর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে কেয়ার্নসকে। পরে নির্দোষ বলে প্রমাণিতও হয়েছিলেন। এরপর মানহানির মামলা করেছিলেন মোদির বিরুদ্ধে। ক্ষতিপূরণও পেয়েছেন কেয়ার্নস।
ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আদালতে দৌড়াদৌড়ির দিনগুলোর কথা মনে করে কেয়ার্নস মিডিয়া কোম্পানি এনজেডএমইর পডকাস্টে বলেছেন, ‘আমার খুব রাগ হয়েছিল, হতাশায়ও ডুবে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি সবকিছু নীরবে সয়ে গেছি। আমি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে নিভৃতে জীবন যাপন করছিলাম। কিন্তু ভীষণ ক্ষোভ ছিল আমার।’
এখন আর এসব নিয়ে কেয়ার্নস খুব একটা ভাবেন না, ‘গত সাত মাসের পর সেই সময়টা নিয়ে আমি আর ভাবি না। এটা এখন আর আমার কাছে খুব একটা মূল্য পাচ্ছে না। আমার মনে হয়, আমি অন্য সময়ে আছি, অন্য কোনো জায়গায় আছি।’ তবে মোদির বিরুদ্ধে যে মানহানির মামলা করেছিলেন, তা নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই কেয়ার্নসের। আর কোনো ক্ষোভ নেই তাঁর বিরুদ্ধে সেই সময় ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ আনা সাবেক সতীর্থ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বা লু ভিনসেন্টের ওপরও।