ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে যখন মহাশ্মশানের নীরবতা, ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে হেলে পড়েছে। টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়লেন বলিউড অভিনেতা অনিল কাপুর। ফরসা মুখে বিষণ্নতার আঁধার। মনে মনে হয়তো ভাবছিলেন, নায়ক চলচ্চিত্রে একদিনের মধ্যে যেমন সব তোলপাড় করে ফেলেছিলেন, সেরকম যদি কিছু করতে পারতেন। কিন্তু মাঠের নায়ক যাঁর হওয়ার কথা, সেই বিরাট কোহলির হতে হতেও সেটা আর হওয়া হলো না।
অথচ বলিউডের নগরীতে সেই চিত্রনাট্য কোহলির জন্য যেন লেখাই হয়ে গিয়েছিল। ১ রানে থাকার সময় একই বলে দুই বার রান আউট হয়ে যেতে পারতেন। পরের বলে আবারও রান আউট হতে পারতেন, এবারও কীভাবে যেন বেঁচে যান। হাতের লক্ষ্মী এভাবে পায়ে না ঠেলার মতো বোকা কোহলি নন। ৪৭ বলে ৮৯ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে আক্ষেপটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের। ভারতের যখন ১৮০ রানই অনেক দূরে মনে হচ্ছিল, কোহলি সেটিকে নিয়ে গেছেন ১৯২ রানের পুঁজিতে। অথচ দুই বলের মধ্যে রান আউট হতে পারতেন তিন তিনবার!
সবকিছুই যেন কোহলির পক্ষে যাচ্ছিল। ব্যাট হাতে যা করার কথা, সেটা তো আগেই করে ফেলেছেন। কে জানত, বল হাতেও কোহলি জাদু দেখাবেন। ২০১৩ সালে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টিতে বোলিং করেছিলেন। প্রায় তিন বছর পর আবারও টি-টোয়েন্টিতে বল করতে এলেন ১৪তম ওভারে। জনসন চার্লস ও লেন্ডল সিমন্স তখন একটু একটু করে ম্যাচ বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। কোহলি চমক দেখালেন প্রথম বলেই। সিমন্সের চেয়ে তখন বেশি ভয়ংকর হয়ে থাকা চার্লসকে করে দিলেন আউট! ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কোহলি কোহলি স্লোগান যেন পেল আরেক মাত্রা। ম্যাচে দারুণভাবে ভারতকে ফেরালেন কোহলি, বোলার কোহলি।
কোহলি আবারও বল হাতে নিয়েছেন। ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে। জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার মাত্র ৮ রান দরকার। প্রথম দুটি বলই করলেন দারুণ। একটি তো লেগ কাটারও দিলেন। তবে কি সিনেমার শেষ দৃশ্যটাও কোহলির জন্য? না! সব সময় রূপকথা হয় না। তৃতীয় আর চতুর্থ বলে চার-ছক্কা হাঁকিয়ে কোহলিকে পার্শ্বচরিত্র বানিয়ে দিলেন আন্দ্রে রাসেল। নায়কের কেন্দ্রে তখন অবশ্য আরেকজন—লেন্ডল সিমন্স!
নায়ক হতে হতেও কোহলি হয়ে গেছেন ট্র্যাজেডির নায়ক। সিনেমার শেষ দৃশ্যের নায়কই কিন্তু আসল নায়ক, কোহলি!