সাউদাম্পটন টেস্ট শুরু হবে বৃহস্পতিবার। গুঞ্জন আছে, এ ম্যাচে অপরিবর্তিত দল মাঠে নামাবেন বিরাট কোহলি। কিন্তু ভারতের অধিনায়ক দল নির্বাচনে যেন ‘ক্রিকেটের হোর্হে সাম্পাওলি’! তাঁর নেতৃত্বে প্রতি ম্যাচেই আলাদা ভারতীয় দল মাঠে নেমেছে
ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতে ভারতীয় দল এখন সাউদাম্পটনে। চতুর্থ টেস্ট সামনে রেখে সেখানে পৌঁছে অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে বিরাট কোহলির দল। নেটে দলটির প্রথম অনুশীলন সেশনের ব্যাটিং অর্ডার চমকে দেওয়ার মতো। শিখর ধাওয়ান, লোকেশ রাহুল, পূজারা, কোহলি, রাহানে থেকে অশ্বিন। ব্যাটিং অর্ডারটা দেখে কী একটু খটকা লাগছে? ঠিকই ধরেছেন। এ তো ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্টের ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডার। সাউদাম্পটনে তবে কি কোহলি একই দল খেলাবেন? সেটি হওয়া কঠিনই। ভারতীয় অধিনায়ক যেন ফুটবলের হোর্হে সাম্পাওলি!
একটু খোলাসা করে বলা যাক। গত বছরের ২০ মে আর্জেন্টিনা দলে কোচের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সাম্পাওলি। রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে গত মাসে তিনি ছাঁটাই হন। তার আগে এক বছরের বেশি সময় আর্জেন্টিনার দায়িত্বে থাকতে সাম্পাওলি কখনো একই একাদশ মাঠে নামাননি। ক্রিকেটে কোহলি এই কাজে এক কাঠি সরেস। চার বছর আগে ভারতীয় টেস্ট দলের নেতৃত্বভার পাওয়ার পর থেকে প্রতি ম্যাচেই আলাদা একাদশ খেলাচ্ছেন। চলতি ইংল্যান্ড সফরের কথাই ধরুন। এ পর্যন্ত তিন টেস্টে কোহলির দলে ন্যূনতম একটি পরিবর্তন ছিলই।
এজবাস্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টে ধাওয়ান দলে থাকলেও দ্বিতীয় টেস্টে জায়গা পাননি। তৃতীয় টেস্টে ধাওয়ান ফিরেছেন মুরালি বিজয়ের জায়গায়। অর্থাৎ দল নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই যাচ্ছেন অধিনায়ক কোহলি। তাঁর এই অভ্যাস উন্নীত হলো টানা ৩৮ ম্যাচে—হ্যাঁ, ভারতের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে এই ৩৮ ম্যাচে কোহলি কখনোই একই একাদশ দ্বিতীয়বার খেলাননি। আর হোর্হে সাম্পাওলিও আর্জেন্টিনা কোচ হিসেবে তাঁর ১৫ ম্যাচের মেয়াদকালে প্রতিবারই আলাদা দল গঠন করেছেন।
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে আর্জেন্টিনার ৩-০ গোলে হারের ম্যাচটি ছিল সাম্পাওলির আর্জেন্টিনা-অধ্যায়ে ১৩তম ম্যাচ। এই ১৩ ম্যাচেই তিনি আলাদা একাদশ গঠন করেছেন। তাঁর এই ‘বদভ্যাস’ কিংবা ‘চঞ্চলমতি মনোভাব’ নিয়ে গোটা আর্জেন্টিনায় সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাম্পাওলি সেসব কানে তোলেননি। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচেই আলাদা একাদশ গড়েছেন। সেই ম্যাচটা জিতলেও পরের ম্যাচে শেষ ষোলোর মঞ্চে ফ্রান্সের সঙ্গে পারেননি। সাম্পাওলি এ ম্যাচেও ‘উইনিং কম্বিনেশন’ ভেঙেছিলেন। তা নিয়ে কত সমালোচনা, কত হইচই, পরিণতিতে তাঁর চাকরিটাও গেল। আর কোহলি এদিকে সাম্পাওলির পথে হেঁটেও প্রশংসা কুড়োচ্ছেন!
অধিনায়ক কোহলির সাফল্য-খতিয়ান কিন্তু সে কথাই বলছে। ফুটবল এবং ক্রিকেট দুটি আলাদা খেলা হলেও কোহলি কিন্তু সাম্পাওলিকে একটি জায়গায় বিস্তর পেছনে ফেলেছেন। সেটি প্রতি ম্যাচে আলাদা দল গঠন করেও সাফল্য তুলে নেওয়ায়। আর্জেন্টিনা কোচ হিসেবে ১৫ ম্যাচের ৭টিতে জিতেছেন সাম্পাওলি। এর মধ্যে রাশিয়া বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যাওয়াই তাঁর সর্বোচ্চ সাফল্য। আর কোহলি ইতিমধ্যেই ভারতের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সফল (৩৮ ম্যাচে ২২ জয়) অধিনায়ক। সর্বোচ্চ সফল মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও (৬০ ম্যাচে ২৭ জয়) যে তিনি ছাপিয়ে যাবেন, এ কথার পক্ষে বাজি ধরার লোকই বেশি।
৪৯ টেস্টে ২১ জয় নিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলি এত দিন ছিলেন ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয় সফল টেস্ট অধিনায়ক। ট্রেন্ট ব্রিজ টেস্ট জিতে ‘কলকাতার দাদা’কে পেছনে ফেলেছেন কোহলি। সাউদাম্পটন টেস্ট সামনে রেখে গুঞ্জন উঠেছে প্রথমবারের মতো ভারতীয় দলকে অপরিবর্তিত রেখে মাঠে নামবেন তিনি। সেটি কিন্তু এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের কোমরে চোট আছে। যদিও তিনি অনুশীলনে আগের টেস্টের ব্যাটিং অর্ডারেই ব্যাট করেছেন। এ ছাড়া ট্রেন্ট ব্রিজে মাত্র ২ উইকেট নেওয়া পেসার মোহাম্মদ শামিকে বসিয়ে উমেশ যাদবকেও খেলাতে পারেন কোহলি। সময়ই বলে দেবে কোহলি কোন পথে হাঁটবেন—সাম্পাওলির, না নতুন কোনো পথে!