>আইসিসি বর্ষসেরা ক্রিকেটার, বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার ও বর্ষসেরা ওয়ানডে ক্রিকেটারের ট্রফি জিতেছেন বিরাট কোহলি। ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি
ইতিহাস তিনি আগেও গড়েছেন। গড়ে চলছেন। সামনে আরও গড়বেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ক্রিকেট খেরোখাতায় শুধু বিরাট কোহলির জন্যই লাগবে আলাদা একটা অধ্যায়! মাঠে নামলেই তো গড়ছেন কোনো না কোনো রেকর্ড অথবা কীর্তি। এবার পেলেন মাঠে বছরজুড়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি। সে এমন স্বীকৃতি যা ইতিহাসে আর কারও নেই। আর কোনো ক্রিকেটারই কোহলির মতো আইসিসির এত পুরস্কার এক বছরে জিততে পারেনি!
বর্ষসেরা ক্রিকেটার (স্যার গারফিল্ড সোবার্স ট্রফি)। বর্ষসেরা টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটার। গত বছর দুর্দান্ত ধারাবাহিকতার স্বীকৃতি হিসেবে আইসিসির এই শীর্ষ তিন বর্ষসেরা ট্রফি-ই এবার জিতলেন কোহলি। ভারতীয় অধিনায়কের আগে ইতিহাসে আর কোনো ক্রিকেটারই এক বছরে শীর্ষ তিন ক্যাটাগরিতেই বর্ষসেরা ট্রফি জিততে পারেননি। শুধু কী তাই! এই তিন ক্যাটাগরিতে বর্ষসেরা হওয়ার সঙ্গে আইসিসির বর্ষসেরা টেস্ট ও ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবেও বেছে নেওয়া হয়েছে কোহলিকে। অর্থাৎ, এক বছরে একই সঙ্গে শীর্ষ তিন ব্যক্তিগত বর্ষসেরা ট্রফি জয় এবং দুটি সংস্করণে বর্ষসেরা দলের অধিনায়ক হওয়া প্রথম ক্রিকেটারও কোহলি!
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক কিছুদিন আগে বলেছেন, কোহলি ওয়ানডেতে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান। গত বছর ওয়ানডেতে কোহলির পারফরম্যান্সই যেন ক্লার্কের কথার প্রতিচ্ছবি। ১৪ ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২০২ রান করেছেন কোহলি। সেঞ্চুরিসংখ্যাও সর্বোচ্চ ৬টি। এখনই অবাক হবেন না। বাকিদের তুলনায় তাঁর ব্যাটিং গড় রীতিমতো চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। ১৩৩.৫৫! সেটাও ১০২.৫৫ স্ট্রাইক রেট বজায় রেখে। শীর্ষ দশে থাকা বাকি ব্যাটসম্যানদের গড় এক শ দূরে থাক কেউ আশিও ছুঁতে পারেনি।
এবার তাকানো যাক টেস্টে। গত বছর ১৩ টেস্ট খেলে এই সংস্করণেও কোহলির রান সর্বোচ্চ—১৩২২। সেঞ্চুরিও সর্বোচ্চ পাঁচটি। ব্যাটিং গড় ৫৫.০৮—শীর্ষ দশে থাকা বাকি ব্যাটসম্যানদের কারও ব্যাটিং গড়ই পঞ্চাশ ছুঁতে পারেনি। গত বছর এই দুই সংস্করণে কোহলির পারফরম্যান্সের সঙ্গে বাকিদের পার্থক্যটা বোঝা গেল? আরেকটু খোলাসা করে বলা যায়, টেস্টে গত বছর শুধু দুজন ব্যাটসম্যান হাজারের ওপরে রান করেছেন। কোহলি ও শ্রীলঙ্কার কুশল মেন্ডিস (১২ ম্যাচে ১০২৩)। ওয়ানডেতে যে তিন ব্যাটসম্যান হাজারের ওপরে রান করেছেন কোহলি সেখানেও শীর্ষে।
বর্ষসেরা ক্রিকেটার ও বর্ষসেরা টেস্ট ক্রিকেটার হওয়ার দৌড়ে কোহলিকে সর্বসম্মতিক্রমে বেছে নিয়েছে আইসিসির ভোটিং একাডেমি। দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা এ তালিকায় দ্বিতীয়। এই দুটি ক্যাটাগরিতেই কোহলির কাছে হেরেছেন টেস্টে গত বছরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি (১০ ম্যাচে ৫২ উইকেট) রাবাদা। বর্ষসেরা ওয়ানডে ট্রফি জয়ের দৌড়ে কোহলির কাছে হেরেছেন আফগানিস্তানের লেগ স্পিনার রশিদ খান। গত বছর ২০ ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৮ উইকেট নিয়েছেন রশিদ।
কোহলি একই সঙ্গে এত ট্রফি জিতে অভিভূত হলেও পা রাখছেন মাটিতেই। ভারতীয় অধিনায়ক বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। সারা বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার পেলাম। সবচেয়ে ভালো লাগছে এই ভেবে যে, আমার ভালো করার সঙ্গে দলও ভালো করছে। আইসিসির মতো বৈশ্বিক সংস্থার কাছ থেকে এই স্বীকৃতি ক্রিকেটার হিসেবে যে কাউকে গর্বিত করবে।’