ছবিটা পুরোনো, তবে মাহমুদুলের উদ্‌যাপনটা
ছবিটা পুরোনো, তবে মাহমুদুলের উদ্‌যাপনটা

কোচের কাছে ১০০ টাকা পাওনা মাহমুদুলের

তখনো ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আমেজ কাটেনি। দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত আকবর-মাহমুদুলদের সময় কাটছিল বর্ণাঢ্য অভ্যর্থনার আবহে। এমন সময় ডাক আসে জাতীয় দলের নির্বাচকদের কাছ থেকে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজপূর্ব দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য বিসিবি একাদশ দলে রাখা হয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের একঝাঁক ক্রিকেটারকে। খেলা বিকেএসপিতে। তাই বিশ্বকাপ শেষে বাড়িতে যাওয়া ক্রিকেটারদের ফিরতে হয় ঢাকায়।

মাহমুদুল হাসানও ডাক পেয়েছিলেন ওই বিসিবি একাদশ দলে। তিনি আবার বিকেএসপির ছাত্রও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বিকেএসপির সেই প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদুল ছিলেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রে। বিকেএসপির ছাত্র–শিক্ষকদের অনেকেই দিনের খেলা শেষে এক এক করে দেখা করে গেলেন মাহমুদুলসহ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে।

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০। মাত্রই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতে ফেরা মাহমুদুল সেমিফাইনালে শতকের জন্য কোচ মন্টু দত্তের কাছ থেকে ১০০ টাকা পুরষ্কার বুঝে নিচ্ছেন

বিকেএসপিতে মাহমুদুলের প্রিয় কোচ মন্টু দত্তও এলেন। কিন্তু তাঁর আসার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। মন্টু দত্তের কাছে মাহমুদুলের ১০০ টাকা পাওনা ছিল। সেটি দিতেই তাঁর আসা। শতক বা ৫ উইকেট পেলে ছাত্রদের ১০০ টাকা পুরস্কার দেন বিকেএসপির এ কোচ। ২০০০ সাল থেকেই দিয়ে আসছেন এ পুরস্কার। প্রতি মাসে এ খাতে তাঁর হাজার দুয়েক টাকা খরচ হয়।

মাহমুদুল কয়েক দিন আগেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ম্যাচজয়ী শতক করেছিলেন। সেদিন ঘটা করে মাহমুদুলকে নিজের স্বাক্ষর করা ১০০ টাকার নোট হাতে তুলে দিয়েছিলেন মন্টু দত্ত। সেদিন মাহমুদুল কোচের কাছ থেকে টাকা পেয়ে বলেছিলেন, ‘আমি সব সময়ই স্যারের কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়ার চেষ্টা করি। সামনে আরও নেব।’

মাহমুদুল কথা রেখেছেন। দুই বছর পর আবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে মন্টু দত্তকে ঋণী করলেন। এবার দেশের হয়ে প্রথমবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে গড়লেন ইতিহাস। বাংলাদেশের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট শতকের মালিক এখন মাহমুদুল।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কাল ইতিহাস রাঙানো শতকের পর মাহমুদুলের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ

মন্টু দত্ত ১৩৭ রানের ঝলমলে ইনিংসের শুরু থেকেই দেখেছেন। নিজের ছাত্রের সাফল্যে তিনি গর্বিত তো বটেই, কিন্তু মন্টু দত্ত মজা পাচ্ছেন অন্য কারণে। মাহমুদুল নাকি শতকের ১০০ টাকা নিতে বিকেএসপিতে চলে আসবেন, এটা ভাবতেই তাঁর হাসি পাচ্ছে। আজ মুঠোফোনে তিনি বলছিলেন, ‘দেখবেন, ও ঠিকই চলে আসবে টাকা নিতে (হাসি)। খুব ভালো লাগে যখন দেখি যে জয় (মাহমুদুল) রান করছে। আমি ওকে প্রথম যেদিন দেখি, সেদিনই বলেছিলাম ও টেস্টের জন্য আদর্শ খেলোয়াড় হবে। সেটি প্রমাণ করতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি।’

মন্টু দত্তের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি ১০০ টাকা পুরস্কার নিয়েছেন বিকেএসপির আরেক ছাত্র লিটন দাস। এখনো শতক করলে নাকি কোচের কাছে থেকে পাওনা টাকা আদায় করে নেন লিটন। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলা মাহমুদুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুটা যেভাবে হলো, তাতে মন্টু দত্তের অনেক টাকাই পুরস্কার দিতে হবে মনে হচ্ছে!