অ্যালান ডোনাল্ড আছেন বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে, শন পোলক ধারাভাষ্যকক্ষে। বাংলাদেশ দলের নতুন পেস বোলিং কোচকে নিয়ে কথা বললেন দক্ষিণ আফ্রিকার ‘গ্লেন ম্যাকগ্রা’ পোলক।
শন পোলকের মতো একজনকে এই মুহূর্তে সামনে পেয়ে গেলে প্রথম প্রশ্নটা কী হওয়া উচিত? হ্যাঁ, অবশ্যই অ্যালান ডোনাল্ডকে নিয়েই হবে সেটি। মাত্রই বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন ডোনাল্ড। তাঁর সম্পর্কে কিছু বলার জন্য পোলকের চেয়ে ভালো আর কে আছেন!
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে একসঙ্গে ৪৭টি টেস্ট খেলেছেন ডোনাল্ড-পোলক, ওয়ানডেতে তাঁরা জুটি হয়েছেন ঠিক ১০০ ম্যাচে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাফল্যের হারটাই বেশি ছিল সে সময়ে। ডোনাল্ড-পোলকের একসঙ্গে খেলা ৪৭ টেস্টের মধ্যে ২৩টিতেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, হার ৯টিতে। আর ১০০ ওয়ানডের মধ্যে জয় ৭৩টিতেই।
সেই ডোনাল্ড-পোলক এবারও আছেন এক সিরিজে। ডোনাল্ড বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমে আর পোলক সুপার স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকক্ষে। সেঞ্চুরিয়নের পর কাল জোহানেসবার্গের ইম্পেরিয়াল ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামেও দেখা হয়ে গেল পোলকের সঙ্গে। বাংলাদেশ দলের নতুন পেস বোলিং কোচ সম্পর্কে তাঁর সাবেক সতীর্থের কাছ থেকে কিছু জানার সুযোগটা চলে এল সেখানেই। তবে সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে চলুন জেনে নিই পোলক সম্পর্কে ডোনাল্ড কী বলেন।
পোলকের প্রতি ডোনাল্ডের শ্রদ্ধার জায়গাটা একটি কথাতেই পরিষ্কার—পোলক দক্ষিণ আফ্রিকার ‘গ্লেন ম্যাকগ্রা’। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আইসিসির ‘হল অব ফেমে’ নাম ওঠে পোলকের। দীর্ঘদিনের সতীর্থকে উদ্দেশ্য করে আইসিসির ওয়েব সাইটে লেখা খোলাচিঠিতে কথাটা বলেছিলেন ডোনাল্ড।
আবেগময় সেই চিঠিতে ডোনাল্ডের দৃষ্টিতে শন পোলক কেন ‘গ্লেন ম্যাকগ্রা’, সেই ব্যাখ্যাও আছে। ডোনাল্ড চিঠিতে পোলকের উদ্দেশে লিখেছিলেন, ‘তুমি খেলাটার সঙ্গে যেভাবে মানিয়ে নিতে, সেটাই তোমার প্রতি আমার সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রোটিয়া দলে তুমি যখন এলে, তুমিই ছিলে প্রথম বোলার, যে কিনা ব্যাটসম্যানদের মনে ভয় ধরাতে পারত। আমার বলের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আমি যেটা করতে চাইতাম, সেটাই তুমি করতে সুইং দিয়ে।’
চিঠির পরের অংশে ম্যাকগ্রার সঙ্গে তুলনার কারণটা সরাসরিই ব্যাখ্যা করেছেন ‘সাদা বিদ্যুৎ’, ‘ক্যারিয়ারের পরের দিকে চোট সত্ত্বেও তুমি সব সময় কার্যকর ছিলে। একসময় তোমার বলে যে গতি ছিল, সেটা তখন আর ছিল না, তবু ও রকম বোলিং করতে পারাটা বিস্ময়কর ছিল। তুমি ছিলে আমাদের গ্লেন ম্যাকগ্রা, এমন একজন বোলার, যে কিনা একটা প্রান্তে আটকে রাখতে পারতে আর অন্য প্রান্তে আমাদের সাবলীল বোলিং করতে দিতে।’
কাল ধারাভাষ্যকক্ষের বাইরে পোলককে প্রথমে ডোনাল্ডের সেই চিঠির কথাই মনে করিয়ে দেওয়া হলো। ‘আপনি দক্ষিণ আফ্রিকার গ্লেন ম্যাকগ্রা—ডোনাল্ডের এই প্রশংসা বাক্য সম্পর্কে কী বলবেন?’ প্রশ্নটা শুনে স্মিত হেসে পোলকের জবাব, ‘ডোনাল্ড অনেক বড় মাপের বোলার ছিলেন। তাঁকে দেখেও আমরা অনেক কিছু শিখতাম।’
টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণেই ৩০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের ‘ডাবল’ পাওয়া একমাত্র খেলোয়াড় পোলক। তাঁর কাছে ডোনাল্ডের সঙ্গে খেলোয়াড়ি জীবনের সবচেয়ে আনন্দের স্মৃতিটা ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হোম সিরিজে। ৫-০ ব্যবধানে জেতা সেই সিরিজের স্মৃতিচারণা করলেন পোলক, ‘আমরা দুজন মিলে সেবার ৫২ উইকেট নিয়েছিলাম।’
সেই ডোনাল্ড এখন বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ, বিষয়টাকে যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই দেখেন পোলক, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশ দলের জন্য তাঁকে ড্রেসিংরুমে পাওয়াটা বিরাট ব্যাপার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, খেলাটা সম্পর্কে তাঁর যে জ্ঞান, তার ভাগ পাবে বাংলাদেশের পেসাররা।’
বাংলাদেশ দলে যোগ দেওয়ার আগে বড় বড় দলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন ডোনাল্ড। তাঁর সেই অভিজ্ঞতাকেও পোলক বাংলাদেশের বাড়তি প্রাপ্তি বলে মনে করেন, ‘একজন বোলার হিসেবে ডোনাল্ড যেমন অনুসরণযোগ্য ছিলেন, কোচ হিসেবেও তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক। এর আগে তিনি নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে কাজ করেছেন। কাজেই তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছুই নেওয়ার আছে বাংলাদেশের পেসারদের।’
পেস বোলিংয়ের সামর্থ্যটা অনেকাংশেই সহজাত। কৌশলের সঙ্গে শারীরিক সামর্থ্যের যোগফলই একজন ভালো পেস বোলার হয়ে ওঠার প্রথম শর্ত। সেদিক দিয়ে বাংলাদেশকে আর যা–ই হোক, পেসারদের দেশ বলা যায় না। কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাংলাদেশের বোলারদের পেস বোলিং–সামর্থ্য একটা গণ্ডি পর্যন্তই আটকে থাকে। কিন্তু পোলক সেটা মানতে চাইলেন না, ‘কে বলেছে বাংলাদেশ পেস বোলারদের দেশ নয়! আমি তো তাদের ভালো সম্ভাবনাই দেখি। নিউজিল্যান্ডে পেসাররাই আপনাদের টেস্ট জিতিয়েছে। এখানে সেঞ্চুরিয়নের ম্যাচ জয়েও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ডোনাল্ডের সঙ্গে কাজ করে তারা নিশ্চিতভাবেই আরও ধারালো হবে।’
বাংলাদেশ দলের পেসারদের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ডও ঠিক এ কথাই বলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমি বাংলাদেশকে সাহায্য করতে পারব। কারণ, সত্যিকারের কিছু প্রতিভা আছে সেখানে। কাজেই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন হয়নি আমার জন্য।’
বাকিটা নির্ভর করছে তাসকিন আহমেদ-শরীফুল ইসলামদের ওপর। ডোনাল্ডের সঙ্গে পোলকের কথাটাকেও সত্যি প্রমাণ করার দায়িত্ব এখন তাঁদেরই।