>আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আজ তুলকালাম হয়েছে মিরপুরে। উইন্ডিজ অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফেট রিভিউ চাইলেও আম্পায়াররা সে সুযোগ দেননি। কিন্তু কেন?
ওশান টমাসের আগের বলটাও ‘নো’ ডেকেছিলেন তানভীর আহমেদ, পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল টমাসের পা দাগের ভেতরেই ছিল। সেখান থেকে পাওয়া ফ্রি হিটে ছক্কা হাঁকিয়েছেন লিটন দাস। চতুর্থ ওভারের শেষ বলেও ঠিক একই ঘটনা, আবারও টমাসের বলটা নো ডাকেন আম্পায়ার। সে বল আবার ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন। পরপর দুটি ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়েরা। ক্যারিবীয়রা মাঠের বড় পর্দায় দেখে বোঝেন বলটি নো ছিল না। এরপরই অধিনায়ক কার্লোস ব্রাফেটের নেতৃত্বে সবাই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বলেছিলেন।
আম্পায়ার তানভীর এরপরও সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন না দেখে রিভিউ চান ব্রাফেট। হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে পরে রিভিউ চাইতে অস্বীকৃতি জানান তানভীর। আম্পায়ার জানান, নো বল হয়েছে কি হয়নি, এটা জানতে রিভিউ নেওয়ার সুযোগ নেই। এরপর অন্য প্রান্তে থাকা আম্পায়ার মাসুদুর রহমান সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের তাঁর কথা শোনার ইচ্ছা হয়নি। অবস্থা এমনই দাঁড়ায়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলোয়াড়েরা যেন মাঠ থেকে বেরিয়ে যান!
ব্রাফেট চলে যান মাঠের বাইরে। কথা বলেন উইন্ডিজ টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে। কথা বলেন রিজার্ভ আম্পায়ার সরফুদৌলার সঙ্গে। ব্রাফেটের অভিব্যক্তি দেখে যেটা বোঝা গেল, তাঁর একটাই দাবি, আম্পায়ার বারবার ভুল ‘নো’ বল দিচ্ছেন। একটা পর্যায়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো। ব্রাফেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিম ম্যানেজমেন্ট, ম্যাচ রেফারি, রিজার্ভ আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিব অবশ্য বেশির ভাগ সময় নীরব দর্শক হয়েই থেকেছেন।
এর মাঝেই ৯ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। পরে নো বলটা মেনে নিয়েই আবার খেলা শুরু করেন সফরকারীরা। আম্পায়ার তাঁর নো বলেই অটল থেকে আরও একটি ফ্রি হিট দিয়েছেন। সে ফ্রি হিটে একটা ছক্কা মেরে সৌম্য উইন্ডিজদের জ্বলুনি আরও বাড়িয়েছেন। বিষয়টি তাঁদের কতটা ক্ষুব্ধ করে তুলেছে, শরীরী ভাষাতেই বোঝা গেছে। প্রতিটা উইকেট পতনে খ্যাপা উদ্যাপনে মেতে উঠেছেন ক্যারিবীয়রা। মাত্র ৩৩ বলের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ ও সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু কেন রিপ্লেতে ‘নো’ বলের সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হওয়ার পরও সিদ্ধান্ত বদল করেননি আম্পায়াররা। প্রথম কারণটা আম্পায়ার তানভীরই বলেছেন ব্রাফেটদের। ক্রিকেটের আইনে আউট-নটআউটের সিদ্ধান্ত রিভিউ দিয়ে বদলানো গেলেও, অন্যান্য সিদ্ধান্তে (যেমন নো বল) রিভিউ নেওয়া যায় না। আর দ্বিতীয় কারণটা দিয়েছেন ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়রা নো বল হয়েছে কি না, এটা নিশ্চিত ছিল না। তাঁদের ড্রেসিংরুম থেকে জানানোর পরই তাঁরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করতে পেরেছেন। ক্রিকেটের আইনে মাঠের বাইরে থেকে পাওয়া ইঙ্গিতে কোনো সিদ্ধান্ত বদলানোর আবেদন করা যায় না। গত ভারত সফরে আউট হওয়ার পর স্টিভ স্মিথ ড্রেসিংরুমের দিকে ফিরে তাকানোর পর এ কারণেই সমালোচনা হয়েছিল।
বাংলাদেশি আম্পায়ারদের সিরিজজুড়ে নানা ভুলের ব্যাখ্যা হয়তো দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আজ তাঁদের অমন ভুলের পরও সিদ্ধান্ত কেন বদলানো হয়নি, তার তো অন্তত ব্যাখ্যা মিলল!