>মালিঙ্গা ও রুবেল-চম্পকা রামানায়েকের দুই প্রিয় ছাত্র। স্লিঙ্গিং অ্যাক্সহন, গতি ও রিভার্স সুইং-দুজনের মধ্যে মিলও অনেক। কিন্তু মালিঙ্গার গল্পটা যেখানে শুধুই তৃপ্তি দেয়, রুবেলের গল্পে শুধু অপ্রাপ্তির ছোঁয়া। কেন?
‘ওরা বলে রুবেল আমার ছেলে, মালিঙ্গাও তো আমার ছেলে।’
প্রিয় দুই ছাত্রের সঙ্গে তোলা এক ছবি দেখাতে দেখাতে বলছিলেন চম্পকা রামানায়েকে। ম্যাচের দিন সকালে যখন এ কথা বলছেন, তখনো হয়তো জানতেন না দুপুরেই প্রিয় ছাত্র রুবেল হোসেনকে নিয়ে ম্যাচ উইকেটের পাশেই বোলিং অনুশীলন করবেন। একাদশে না থাকায় তাসকিনের সঙ্গে অনুশীলনে ছিলেন রুবেলও। এটাই হয়তো সবচেয়ে মানানসই, রুবেলের গল্পটা এমনই!
লাসিথ মালিঙ্গাকে খুঁজে বের করে তাঁকে তৈরি করেছেন বলে বিখ্যাত হয়ে থাকবেন রামানায়েকে। অ্যাকশনটা একদম ভিন্ন, যেকোনো কোচই হয়তো মালিঙ্গাকে বদলে ফেলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু চম্পকা সে পথে হাঁটেননি, মালিঙ্গাকে তাঁর মতোই চলতে দিয়েছেন, পাশ থেকে শুধু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ দিনে মালিঙ্গা সে কথা মনে করে দুর্দান্তভাবে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চম্পকাকে। পুরস্কার বিতরণীর অনুষ্ঠানেই ডেকে এনে একটি ফ্রেমবন্দী জার্সি উপহার দিয়েছেন। বিশ্ব আরও একবার জেনেছে চম্পকার অবদান। ক্রিকেটকে মালিঙ্গার মতো একজন উপহার দেওয়ায় ধন্যবাদ দিয়েছে।
মালিঙ্গার মতোই রুবেলের ‘রুবেল’ হয়ে ওঠার পেছনেও অবদান আছে চম্পকার। রুবেলের যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু, চম্পকা তখন বাংলাদেশ দলের পেস বোলিং কোচ। দুর্দান্ত শুরু হয়েছিল তাঁরও। বাংলাদেশের হয়ে নিয়মিত ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতেন। স্লিঙ্গিং অ্যাকশন, আউট সুইং, পুরোনো বলে রিভার্স সুইং মিলিয়ে বাংলাদেশের জন্য বড় এক আশা হয়ে উঠেছিলেন রুবেল। কিন্তু সেই রুবেলের বলে আর সেই গতি দেখা যাচ্ছে না। বলে নেই নিয়ন্ত্রণের ছাপ। প্রিয় ছাত্রের ব্যাপারে এই অনুযোগে অবশ্য আপত্তি করলেন চম্পকা, ‘আমার মনে হয় সে এখনো জোরে বল করতে পারে। আমার মনে হয় সে এখনো ভালো বল করছে। সে একজন উইকেট শিকারি। আমি আসলে ওর মধ্যে কোনো সমস্যা দেখছি না। আমি তো আসলে এখন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই, শুধু এই সফরে আছি। তবে এই মুহূর্তে আমি ওকে নিয়ে খুবই খুশি।’
বোলিং কোচ খুশি হলেও দল যে খুশি নয়, সেটা বোঝা গেছে কাল রুবেলের বাদ পড়ায়। উইকেটের কথা চিন্তা করে একজন পেসার কমিয়ে স্পিনার নেওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক। কিন্তু আগের ম্যাচে বাকি দুই পেসারের চেয়ে কম খরচে বোলিং করার পরও খড়্গটা রুবেলের ওপর দিয়েই গিয়েছে। রুবেলের চেয়ে প্রায় তিন বছর পর ওয়ানডে খেলা শফিউলের ওপর দল বেশি আস্থা দেখিয়েছে। গুরুর চোখে এখানেই সমস্যা হচ্ছে রুবেলের, ‘রুবেল হলো এমন একজন, যাকে ভরসা দিতে হয়। সে এমনই, তাকে ভালো সমর্থন দেওয়া লাগে।’
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১০ বছর কাটিয়ে দেওয়ার পরও চম্পকার চোখে রুবেলের মানসিকভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। তাহলেই নাকি রুবেলের সেরা ফর্ম পাওয়া যাবে। ২০১৫ বিশ্বকাপে তো ৯০ মাইলের সীমা টপকে গেছেন। সেটা আর ৩০ বছর বয়সী রুবেলের পক্ষে হয়তো আর সম্ভব নয়। কিন্তু এখনো গতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেওয়ার ক্ষমতা রুবেলের আছে বলেই বিশ্বাস চম্পকার।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে রুবেলের মতো বোলারের অভাব আছে, তাই রুবেলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করায় মনোযোগী হতে বলেছেন মালিঙ্গার গুরু, ‘আমি এখনো মনে করি, সে এখনো ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করতে পারে। হয়তো আরেকটু ভালোভাবে চাপ সামলাতে হবে ওকে। এটা মানসিক ব্যাপার। বাংলাদেশের সবচেয়ে দ্রুতগতির বোলার সে। আমার মনে হয়, আরও অনেক দিন দলে অবদান রাখতে পারবে রুবেল। ওকে সেভাবে ব্যবহার করতে হবে। দেশে কিন্তু ওর মতো বোলার খুব বেশি নেই। ওকে সমর্থন দিতে হবে।’
এক প্রিয় ছাত্র মালিঙ্গার কিংবদন্তি হয়ে বিদায় নেওয়ার দুদিন পরেই আরেক ছাত্রের দল থেকে বাদ পড়ার ঘটনা চম্পকার কেমন লেগেছে কে জানে। দিনের শুরুতে বারবার যে সমর্থনের কথা বলছিলেন, মধ্যভাগে এসে সেই সমর্থনের অভাবই দেখলেন চম্পকা। এটা ঠিক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন মঞ্চে ১০ বছর কাটিয়ে দিয়ে সমর্থনের আশা করাটা কঠিন। মালিঙ্গার মতো বিশ্বসেরা না হোন, দেশসেরাও যে হতে পারলেন না রুবেল, সেটাই হয়তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনেক বড় হতাশা।