>শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ দলের অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন খালেদ মাহমুদ। তবে তাঁর ইচ্ছে ছিল দীর্ঘমেয়াদি প্রধান কোচ হওয়ার। কেন প্রধান কোচ হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন মাহমুদ
স্টিভ রোডসের বিদায়ের পর বাংলাদেশ দলের কোচ কে হবেন, তা নিয়ে কম আলোচনা হচ্ছে না। বাংলাদেশ দলের পরবর্তী প্রধান কোচ কে, সে প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি। স্টিভ রোডসের নিয়োগের আগে বেশ লম্বা বিরতি দিয়েছিল বিসিবি। এবারও তেমন কিছু দেখতে হয় কি না, সেটা দেখার অপেক্ষা। আপাতত খালেদ মাহমুদের কোচিংয়েই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়বারের মতো অস্থায়ী ভিত্তিতে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পেয়েছেন খালেদ মাহমুদ। স্থায়ীভাবে কোচ হওয়ার ইচ্ছা আকারে-ইঙ্গিতে জানিয়েছিলেনও। কিন্তু স্থায়ী নয়, অন্তর্বর্তী কোচ হিসেবেই তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব। মাহমুদের ক্রিকেটজ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলে অবসর নিয়ে কোচিং ক্যারিয়ারের সঙ্গেও আছেন প্রায় এক যুগের বেশি সময়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ঢাকা ডায়নামাইটসের কোচ হিসেবে সাফল্য আছে তাঁর। কিন্তু জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য তিনি যোগ্য কি না, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। আজ আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন উঠেছিল, জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করার কারণ কী?
নিজের কোচিং–ক্যারিয়ারবৃত্তান্ত সামনে তুলে এনে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরেছেন মাহমুদ। এ ছাড়া জাতীয় দলের কোচ হওয়াটা এমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয় বলে মনে করেন মাহমুদ, ‘আমি নিজেকে যোগ্য মনে করি। আমি কতটুকু যোগ্য জানি না। তবে আমি মনে করি, এটা কোনো রকেট সায়েন্স নয়। অন্য কোচরা বলেন, আমরা লেভেল থ্রি-ফোর করেছি। আমিও ২০০৬-০৭ সালে তা করেছি। আর করে বসে ছিলাম, তাও নয়। মাঠে কাজ করেছি। ক্রিকেটের কৌশলগুলো তো সবারই একরকম। স্কয়ার কাট সবাই একভাবেই মারে বা ইনসুইং-আউট সুইং একই রকম থাকে। এটা নির্ধারিত বিষয়।’
জাতীয় দলের জন্য সব সময় বিদেশি কোচ দেখা যায়। কোচিং–জ্ঞানে বিদেশিরা এগিয়ে থাকলেও ভাষাগত সমস্যা থেকে যায়। এ ছাড়া অনেক দিন জাতীয় দলের ম্যানেজার ও ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচিং করানোর সুবিধার্থে সে বিদেশি যেকোনো কোচের চেয়ে নিজেকে এগিয়ে রাখছেন, ‘আমি মনে করি, যেহেতু আমি এ দেশে বড় হয়েছি, এই খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলেছি, মাঠে আমার জন্য পরিকল্পনা সাজানো অনেক সহজ হবে। আমি একেকজনের মানসিকতা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারি। ক্রিকেট অনেকটা মানসিক খেলা। ১১টা মানুষকে মাঠে এক করা, টিম স্পিরিট তৈরি করে ম্যাচ জেতানোর ব্যাপার থাকে। তো সেটার জন্য মনে করি যে আমি পারি। আমার জন্য সহজ হয়। এটা আমার জন্য বাড়তি সুবিধে। একটা নতুন কোচ আসলে যেটা হয় একটা টিমকে চেনা, নতুন খেলোয়াড়কে চেনা-বোঝা—এটা করতে করতে অনেক সময় চলে যায়। সেটা আমার লাগবে না। জুনিয়র যেসব খেলোয়াড় আছেন, তাদের সবার সঙ্গেই আমি কাজ করে অভ্যস্ত। জাতীয় দলের বাইরেও যদি যায়, এটা আমার জন্য বাড়তি সুবিধে।’
খেলোয়াড়ি জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর ক্রিকেট নিয়েই আছেন মাহমুদ। ঘরোয়া ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে তাঁর সাফল্যও অনেক, ‘ক্যারিয়ার ১৪-১৫ বছর হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন বড় দলের সঙ্গে কাজ করেছি। প্রিমিয়ার লিগটা যদি ওভাবে না ধরি বিপিএল ৫ বছর ধরে প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করছি। চিটাগংয়ে ছিলাম। পরে ঢাকা ডায়নামাইটসে কাজ করছি। সুতরাং আমার তো অভিজ্ঞতা আছে কোচিংয়ের। আর আমি তো বললাম, এটা কোনো রকেট সায়েন্স নয়। আমার ক্রিকেটে হাতেখড়ি ১৩ বছর বয়স থেকে। ক্রিকেটের সঙ্গেই আছি, নানা ধরনের কোচের সঙ্গে কাজ করেছি। কারা কী করতে চায়, কীভাবে টিম হ্যান্ডেল করে—সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেটের ব্যাপারে আমি কতটুকু ইচ্ছুক। সবকিছু মিলিয়ে ক্রিকেটের ব্যাপারে আমি খুবই আগ্রহী।’
নিজেকে প্রধান কোচ হিসেবে যোগ্য মনে করলেও কোচের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, সেখানে আবেদন করেননি মাহমুদ। আজই ছিল শেষ দিন। কেন করেননি, সে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আগেই, ‘খেলোয়াড়ি জীবনে আমি সব সময়ই অধিনায়কের নির্দেশে মেনেছি। এখনো মানি। অধিনায়কের দিক থেকে সাড়া পাইনি বলে আর আবেদন করিনি।’ খেলোয়াড়ি জীবনে অনেক অধিনায়কের অধীনেই খেলেছেন। এখন মাহমুদের ‘অধিনায়ক’ হচ্ছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। নাজমুলের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পাননি বলেই প্রধান কোচ হতে আবেদন করেননি।