বিপিএলে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। অধিনায়ক ইমরুল কায়েস সেই চেতনাটাই ছড়িয়ে দিয়েছেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে।
ইমরুল কায়েস বরাবরই ছায়ায় ঢাকা এক চরিত্র। বাংলাদেশ দলের অনেক সাফল্যেই তাঁর অবদান থাকলেও বেশির ভাগ সময় সেগুলো ঢাকা পড়ে গেছে অন্য কারও পারফরম্যান্সের আড়ালে। ইমরুলকে নিয়ে তাই আলোচনাটা সব সময়ই কম।
সেই ইমরুল এবার আলোচনায় ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘ডাবল’ জেতে। গত ফেব্রুয়ারিতে অধিনায়ক হিসেবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে শিরোপা এনে দেওয়ার পর এবার এক ম্যাচ বাকি থাকতেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের হয়ে জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা। দলে জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার বলতে নুরুল হাসান, তাঁকেও পাওয়া গেছে সুপার লিগে এসে। বিপিএলে না হয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন মঈন আলী, ফাফ ডু প্লেসি, সুনীল নারাইনদের মতো বিদেশিদের হাত ধরে, কিন্তু প্রিমিয়ার লিগেও সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতা টেনে আনা তো কৌতূহল জাগায়ই, বিশেষ করে ইমরুলের দল শেখ জামাল যখন মোটেও তারার আলোয় উজ্জ্বল নয়।
ইমরুলের কাছে অবশ্য বিষয়টা খুবই সাদামাটা। একবাক্যে বললে, বিপিএলে কুমিল্লাকে যে সূত্র মেনে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন, প্রিমিয়ার লিগেও ঠিক সেই সূত্রেই জিতেছেন শিরোপা। প্রিমিয়ার লিগে এর আগে কখনোই শিরোপা না জেতা শেখ জামালকে ভিক্টোরিয়ানসের মন্ত্রেই উজ্জীবিত করেছেন ইমরুল, ‘কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসে দল যেমনই হোক, চ্যাম্পিয়ন হওয়া ছাড়া কোনো কথা নেই। আপনি যখন প্রতিদিন চ্যাম্পিয়ন হব, চ্যাম্পিয়ন হব বলবেন, তখন চ্যাম্পিয়ন না হলেও কাছাকাছি যাবেন।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের হয়ে পাঁচ মৌসুম বিপিএল খেলে সাফল্যের এই মন্ত্রটা মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছেন ইমরুল। শেখ জামালের সাফল্যের চাবি হয়েছে সেটাই, ‘আমাকে যখন দায়িত্ব (শেখ জামালের অধিনায়কের) দেওয়া হয়েছিল, প্রথম টিম মিটিংয়েই বলেছিলাম, আমি চাই না প্রতিবছরের মতো এবারও দল টেনেটুনে সুপার লিগে উঠুক। আমি চ্যাম্পিয়ন হতে চাই।’
শুরুতে ইমরুলের কথায় অনেকে আস্থা রাখতে পারেননি। কিন্তু আস্তে আস্তে অধিনায়ক বিশ্বাসটা ছড়িয়ে দিয়েছেন পুরো দলের মধ্যে। এরপর যখন চূড়ান্ত সাফল্যটা এল, ইমরুল তাঁর আত্মতৃপ্তি লুকাতে পারলেন না, ‘যদি বলি যে খুব ভালো লাগেছে, তাহলেও পুরো অনুভূতি প্রকাশ করা হবে না। অর্জনটা তো ছোট নয়! একই বছরে বিপিএল আর প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া অনেক বড় অর্জন।’ এই দুই অর্জনের মধ্যে ইমরুল এগিয়ে রাখছেন প্রিমিয়ার লিগের শিরোপাটাকেই।
ইমরুলের ‘ডাবল’ জয়ে ছিল দলীয় সমন্বয়ের বিশেষ ভূমিকা। দলে তেমন কোনো তারকা ক্রিকেটার না থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মাররা ছিলেন শেখ জামালে। তাঁদের মধ্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসেরই ছিলেন চার-পাঁচ জন। ইমরুল বলছিলেন, ‘কুমিল্লার চার-পাঁচজন ক্রিকেটার ছিল আমাদের দলে। অনেক ম্যাচে একসঙ্গে খেলায় আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো ছিল।’
অধিনায়ক ইমরুল কায়েসের মতো শেখ জামালের কোচ সোহেল ইসলামও বরাবর পর্দার আড়ালের মানুষ হয়েই থাকেন। জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে খুব ‘হাই প্রোফাইল’ কোচ বলা যাবে না তাঁকে। তবে শেখ জামালকে চ্যাম্পিয়ন করার পেছনে সোহেলের পরিকল্পনার অবদানও অনেক। ‘আমাদের দলে অনেক অলরাউন্ডার থাকায় ব্যাটিংটা দীর্ঘ হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান ছিল। জিয়া আটে, এমনকি নয়েও ব্যাটিং করেছে। সাফল্যের পেছনে এটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক’—বলছিলেন কোচ।
কোচের প্রশংসা পেয়েছেন দলের বোলাররাও, ‘টুর্নামেন্টজুড়ে বোলিং বিভাগ খুব সুশৃঙ্খল ছিল, যেটা ব্যাটসম্যানদের কাজ সহজ করে দিয়েছে।’ বোলিংয়ে ভারতীয় ক্রিকেটার পারভেজ রসুল ছিলেন শেখ জামালের প্রাণভোমরা। ২৬ উইকেট নিয়ে তিনিই আজ শেষ আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার দিনের আগপর্যন্ত লিগের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। রসুলের অবদান ছিল ব্যাট হাতেও।
তবে আলাদা করে বলতে হবে সুপার লিগে নুরুল হাসানের চোখধাঁধানো ব্যাটিংয়ের কথাও। জাতীয় দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে তিনি যেন নিয়ে নিলেন দলকে চ্যাম্পিয়ন করার দায়িত্ব! তিনটি ম্যাচজয়ী ইনিংসে সুপার লিগে সর্বোচ্চ ৩৫৭ রান নুরুলের। সোহেলের কথায়ও তার জন্য উপচে পড়া প্রশংসা, ‘সুপার লিগে সোহানের (নুরুল হাসান) যে পারফরম্যান্স, সেটা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। এককথায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে ও।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দুর্দান্ত খেলেছে আসলে পুরো শেখ জামাল দলই, যার চাবিটা ছিল দুই আড়ালের নায়ক ইমরুল আর সোহেলের হাতে।