৩১তম ওভারে জোমেল ওয়ারিক্যানের বলটি মিডল স্টাম্প বরাবর পড়ে খুব বেশি ঘুরল না। কিন্তু যতটা ঘুরল সেটিই যথেষ্ট ছিল মুশফিকুর রহিমের জন্য। সম্পূর্ণ সামনে এসে সোজা ব্যাটে খেলেও বলটি পেলেন না মুশফিক। উইকেটকিপার জশুয়া দা সিলভার গ্লাভসে যাওয়ার আগে গেল মুশফিকের ব্যাট ছুঁয়ে। ক্যারিবীয় স্পিনারদের নিয়ে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে দুশ্চিন্তার শুরু তখনই।
৬২তম ওভারে প্রায় একই বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স খেলতে গিয়েছিলেন আরেক ডানহাতি মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়ারিক্যানের বলটি এবারও খুব বেশি ঘুরল না। কিন্তু মিরাজের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যেতে যতটা দরকার, ঠিক ততটুকুই ঘুরল। এবার বলটা কিপারের হাতে না গিয়ে গেল প্রথম স্লিপে থাকা রাকিম কর্নওয়ালের হাতে। মিরাজের চোখেমুখে তখন অবিশ্বাস। একবার তাকালেন উইকেটের দিকে, একবার স্লিপে।
মুশফিকের আউট যেই শঙ্কা জন্ম দিয়েছিল, মিরাজের আউটে সেই শঙ্কা হয় সত্যি। বাংলাদেশের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ আউট হন জয়ের মাত্র ১৮ রান দূরে থেকে। বাংলাদেশের ধবলধোলাই হওয়াও নিশ্চিত তখন।
ভারতীয় স্পিন কিংবদন্তি বিষেন সিং বেদির কথাটা আজ মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন আরেকবার সত্যি হলো, ‘র্যাঙ্ক টার্নারে সবচেয়ে ভয়ংকর বল যেই বলটি সোজা যাবে সেটিই। যেই বলটি অনেক ঘুরবে সেটি নয়।’ কথাটা নিশ্চয়ই কর্নওয়াল, ওয়ারিক্যান ও ক্রেইগ ব্রাফেটদের জানা ছিল। সে জন্যই দুই প্রান্ত থেকে বল করে গেছেন সোজা লাইনে। কিছু ঘুরেছে, কিছু গেছে সোজা। গতির বৈচিত্র্যে কিছু বলে বাউন্স কম বেশি হয়েছে। ব্যাটসম্যানের মনে ভয় ঢোকাতে কিছু বল উইকেটের ক্ষততে ফেলেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনাররা।
ইনিংসের শুরুতেও এই সোজা বলের ঝুঁকিটা অবশ্য তেমন ছিল না। দুশ্চিন্তা বলতে উইকেটের দুই প্রান্তের ডানে ও বাঁয়ে তৈরি বুটের ক্ষত ছাড়া কিছুই ছিল না। উইকেটের মাঝখানটা ছিল পরিষ্কার। যতক্ষণ না পর্যন্ত উইকেটের মাঝখান থেকে বল বাঁক খাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানরা একটু স্বস্তিতে নিশ্বাস ফেলতেই পারেন।
তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার ক্রিজে নেমেই হাত খুলে ফেলার সাহসটা হয়তো সেখান থেকেই পান। সৌম্য ইনিংসের শুরুতে দুই পা এগিয়ে স্টাম্প বরাবর বল রাকিম কর্নওয়ালের অফ স্পিনকে এক্সট্রা কাভারে তুলে মারেন। তামিমও একই শট খেলেন একই বোলারের বিপক্ষে। টার্নিং উইকেটে এই শট খেলা খুবই কঠিন। কিন্তু বাঁহাতির ব্যাটের পাশ ঘেঁষে বল কিপারের কাছে যাওয়ার ঝুঁকি নেই জেনেই হয়তো ক্রিজ ছেড়ে কাভারের ওপর খেলেছেন দুই বাঁহাতি।
পেসের বিপক্ষে তো তামিম খেলছিলেন সাবলীল ভঙ্গিতে। অধিনায়ক ব্রাফেট তাই দুই পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও আলজারি জোসেফকে চার ওভারের বেশি করানোর সাহস পাননি। অফ স্পিনও খুব একটা কাজে দিচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়েই কিনা বাঁহাতি স্পিনার ওয়ারিক্যানকে বল তুলে দেন ব্রাফেট। বাঁহাতির অফ স্টাম্পের বাইরের ক্ষততে বল ফেলে যদি কিছু ভীতির সঞ্চার করা যায়।
তামিমও হয়তো পরিকল্পনাটা বুঝলেন। ওয়ারিক্যানের প্রথম ওভারেই একবার করে সুইপ ও রিভার্স সুইপে চার মারলেন। লক্ষ্য ২৩১ রান, রান ছাড় দেওয়া যাবে না। তাই বাঁহাতি স্পিন কৌশল বাদ সেখানেই। ওয়ারিক্যান এক ওভারের বেশি করতে পারেননি তাঁর প্রথম স্পেলে।
এরপর অনিয়মিত বোলার ব্রাফেট নিজেই বোলিংয়ে এলেন। প্রথমে সৌম্য ও পরে তামিম আউট হন সেই ব্রাফেটের বলে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বল দুটিই ছিল নিরীহ।
নাজমুল হোসেন ক্যাচ দিলেন শর্ট লেগে। কর্নওয়ালের বাউন্সে পরাস্ত হয়ে শর্ট লেগে আউট হন তিনি। মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, নাঈম হাসান, তাইজুল ইসলাম—সবাই আউট সোজা বলে। অথচ চতুর্থ দিনের উইকেটে বাংলাদেশকে হারানোর কথা প্রতিপক্ষের স্পিনারদের বিশাল বিশাল বাঁক। কে জানে, সেই বাঁকের প্রত্যাশায় থেকেই কি সোজা বলে হার মানলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।