মিলারের ব্যাটে হারা ম্যাচ জিতল গুজরাট
মিলারের ব্যাটে হারা ম্যাচ জিতল গুজরাট

‘কিলার’ মিলারে অসম্ভবকে সম্ভব গুজরাটের

চেন্নাইয়ের সংগ্রহটা মন্দ ছিল না। ১৬৯—লড়াকু স্কোরই। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে নেমে গুজরাট টাইটানস যখন ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল, তখন সংগ্রহটাকে অনেক বড়ই মনে হচ্ছিল। এখানে থামলেও হতো। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর ৪৮ রানে তাদের নেই ৪ উইকেট। রান ৮৭ হতে হতে আরও একজন ব্যাটসম্যান নেই। জয় তো দূরেরই মনে হওয়ার কথা। কিন্তু ডেভিড মিলারের সেটি মনে হয়নি। দলের বিপর্যয়ের মধ্যেও নিজের খেলাটা খেলে গেলেন। ‘কিলার’ মিলার বলা হয় যাঁকে, তিনি তাঁর নামকরণের সার্থকতা প্রমাণ করলেন ৫১ বলে ৯৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে রশিদ খানও খেললেন ম্যাচজয়ী এক ইনিংস। দুজনে মিলেই প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে গুজরাটকে এনে দিয়েছেন ৩ উইকেটের দারুণ এক জয়।

৫১ বলে ৯৪ রান মিলারের

মিলারের ব্যাটে খুনে ব্যাপারটি ছিলই। টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটে তিনি যেভাবে প্রতিপক্ষকে খুন করেন, আজ তিনি সেটিই করেছেন। দলের বিপর্যয়–টিপর্যয় মাথাতেই ছিল না তাঁর, খেলে গেছেন নিজের খেলাটা। চেন্নাই সুপার কিংসের বোলারদের পাত্তাই দেননি। তাঁর বাউন্ডারির সংখ্যা দেখলেই সেটি স্পষ্ট হবে। ছক্কা মেরেছেন ৬টি, বাউন্ডারি ৮টি। স্ট্রাইক রেট ছিল ১৮৪.৩৪। রশিদ খান করেছেন ২১ বলে ৪০। তাঁর স্ট্রাইক রেট অবশ্য আরও বেশি—১৯০.৪৭। আফগান তারকার বাউন্ডারির চেয়ে ছক্কার সংখ্যা বেশি। ২টি বাউন্ডারির পাশাপাশি তিনি মেরেছেন ৩টি ছক্কা। মিলার আর রশিদ খান ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে ৩৭ বলে ৭০ রান তুলে হারা ম্যাচটা বের করে এনেছেন দারুণভাবেই।

১৮ তম ওভারে ক্রিস জর্ডানের বলে ৩ ছক্কা আর এক বাউন্ডারি, কাজ অনেকটাই সহজ করে দেন রশিদ

টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল চেন্নাই। আগের ম্যাচে ভালো করা রবিন উথাপ্পা শুরুতেই ফেরেন। মোহাম্মদ শামির বলে উথাপ্পার ফেরাটা চেন্নাইয়ের জন্য ছিল বড় ধাক্কা। মঈন আলীও দ্রুত আউট হন। ৩২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপদেই পড়ে গিয়েছিল চেন্নাই। কিন্তু রুতুরাজ গায়কোয়াড় আজ সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠেন। ৪৮ বলে ৭৩ রান করেন তিনি। পাঁচটি করে বাউন্ডারি আর ছক্কা মেরেছেন রুতুরাজ। আম্বাতি রাইডুর সঙ্গে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৬ বলে ৯২ রানের জুটি গড়েন রুতুরাজ। এই জুটিটিই চেন্নাইকে অনেকটা পথ এগিয়ে দেয়। তবে রুতুরাজ আউট হওয়ার পর রানের চাকাটা দ্রুত ঘোরাতে পারেনি চেন্নাই। তবে এ ক্ষেত্রে গুজরাট বোলারদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে। যেখানে একসময় মনে হচ্ছিল চেন্নাইয়ের সংগ্রহটা ১৮০ পেরিয়ে যাবে, সেখানে গুজরাট বোলারদের মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৯ রানের বেশি করতে পারেনি চেন্নাই। আম্বাতি রাইডু ৩১ বলে ৪৬ করেন। তবে শেষ দিকে শিভম দুবে ১৭ বলে ১৯ আর রবীন্দ্র জাদেজা ১২ বলে ২২ করেন। গুজরাটের ক্যারিবীয় পেসার আলজারি জোসেফ নিয়েছেন ২ উইকেট। মোহাম্মদ শামি আর ইয়াশ দায়াল নিয়েছেন ১টি করে উইকেট।

৮৭ রানে ৫ উইকেট হারানো গুজরাটই শেষ পর্যন্ত বিজয়ের বেশে

জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই শুবমান গিলকে হারায় গুজরাট। বিজয় শঙ্কর ফেরেন পরের ওভারেই। তিনি রানের খাতাই খুলতে পারেননি। এ ম্যাচে সুযোগ পাওয়া ঋদ্ধিমান সাহা আর অভিনব মনোহর দলকে টেনে তুলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ঋদ্ধি ১১ ও অভিনব ১২ রানে আউট হন। রাহুল তেওয়াটিয়াও ছিলেন ব্যর্থ।

১৩তম ওভারে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারানো গুজরাট যে এ ম্যাচ জিতবে, সেটি বিশ্বাস করার মানুষ খুব বেশি ছিল না। সেখান থেকেই ‘কিলার’ মিলার দেখালেন তাঁর খুনে ব্যাটিং। চেন্নাইয়ের বোলারদের অসহায় বানিয়ে তিনি খেলতে থাকেন একের পর এক শট। তবে রশিদ খান ১৮তম ওভারে ক্রিস জর্ডানকে তিনটি ছক্কা আর একটি চার না মারলে হয়তো ম্যাচটা মিলারের পক্ষেও বের করা কঠিন হতো। রশিদ খুব অল্প সময়ে ঝড় তুলে মিলারের কাজটা সহজ করে দিয়ে যান। ১৯তম ওভারে ডোয়াইন ব্রাভো তাই ২ উইকেট নিলেও চেন্নাইকে হারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি। এক বল হাতে রেখেই ম্যাচটি নিজেদের করে নেয় গুজরাট।