>মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশের একাদশে সর্বোচ্চ তিনটি পরিবর্তন দেখা যেতে পারে। মাহমুদউল্লাহ আভাস দিয়েছেন দলে বেশ কিছু পরিবর্তনের। ব্যাটিং অর্ডার, উইকেট আর টস নিয়েও কথা বলেছেন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক
জিম্বাবুয়েকে তাদের ক্রিকেট ইতিহাসেই বিদেশের মাটিতে মাত্র তৃতীয় টেস্ট জয় উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। ১৭ বছর পর এমন স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে। দুই টেস্টের সিরিজ। এই ম্যাচ ড্র হলে বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয়টাও হয়ে যায়। এমন বাঁচামরার টেস্টে বাংলাদেশ দলের একাদশে কাল আসতে পারে বেশ কিছু পরিবর্তন। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আজ সংবাদ সম্মেলনে এমন ধারণাই দিলেন।
একাদশে অন্তত একটি পরিবর্তন আসছে, এমন আভাস আগেই মিলেছিল। আজ বাংলাদেশ দল ইনডোরে ঘাম ঝরাতে ঝরাতে পরিবর্তনের সংখ্যাটা তিনে গিয়ে পৌঁছাতে পারে বলে গুঞ্জন শোনা গেল। অনুশীলন শেষে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সেই ধারণাকে আরও জোরালো করলেন ‘কিছু পরিবর্তন’ আসছে বলে। অধিনায়ক অবশ্য একাদশ বলতে চাইলেন না। সেটা আগামীকালই চূড়ান্ত হবে।
সিলেটে প্রথম টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে ভরাডুবির মূল দায় ব্যাটসম্যানদের। তবে কালকের একাদশে মূল পরিবর্তন আসতে পারে বোলিংয়ে। কালকের ম্যাচ দিয়ে ৯ মাস পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরতে পারেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাঁ হাতি এই পেসার সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে খেলেছেন, এ মাঠেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সর্বশেষ যা খবর, বাংলাদেশ দলে আরও একজন পেসারকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করবে কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন শফিউল ইসলাম। নিয়মিত চোটের সঙ্গে যুঝতে থাকা শফিউলের গত এক বছরেই টেস্ট খেলা হয়নি। শফিউলকে জায়গা করে দিতে হলে বাদ পড়তে হবে আবু জায়েদকে।
ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একাদশ থেকে ছিটকে যেতে পারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তাঁর বদলে টেস্ট অভিষেক হয়ে যেতে পারে মোহাম্মদ মিঠুনের। আরেক নাজমুল, স্পিনার নাজমুল ইসলামকেও টেস্ট অভিষেকের পরের ম্যাচেই একাদশের বাইরে ছিটকে যেতে হতে পারে। নাজমুল সিলেট টেস্টে ৪ উইকেট নিয়েছেন।
গত ম্যাচে মাত্র এক পেসার খেলানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ একাদশে তাই দুজন পেসারকে দেখা যাবে, তা মোটামুটি নিশ্চিত। মোস্তাফিজের পাশাপাশি অন্য পেসার শফিউল নাকি আবু জায়েদ; এটাই এখন প্রশ্ন। একজন স্পিনার কমিয়ে একজন পেসার বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ, তার মানে কিন্তু এমন নয় মিরপুরে পেস-সহায়ক উইকেট বানানো হচ্ছে। এমনিতেই মিরপুরের উইকেট দেশের মধ্যে সবচেয়ে ধীর বলে ‘সুখ্যাতি’ আছে।
মিরপুরের এই টেস্টের উইকেটের চরিত্র কী হবে, তা নিয়ে মাহমদুউল্লাহকেও মনে হলো দ্বিধান্বিত, ‘মিরপুরের উইকেট সব সময়ই একটু অপ্রত্যাশিত আচরণ করে। আপনি যেটা প্রত্যাশা করবেন, সেটা না হলে আপনাকে মানিয়ে নিতে হবে। আমরা এই ম্যাচে যাচ্ছি মাথা শূন্য করে। পিচ, কন্ডিশন যেমন হবে সেই অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব। এটা সব সময়ই কঠিন, উইকেট একটু স্লো। স্লো উইকেট হলে রান করা একটু কঠিন হয়। কষ্ট করে রান করতে হবে। এখানকার উইকেট এমন না যে বল ব্যাটে আসবে আর আপনি শট খেলতে পারবেন। খুব বুঝে শুনে খেলতে হবে। একেক বোলারের জন্য একেক শট খেলতে হবে, আপনার শক্তি অনুযায়ী। এখন অপেক্ষা আমরা নিজেরা কীভাবে নিজেদের মেলে ধরি।’
একাদশে পরিবর্তন মানে কি ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন? বিশেষ করে মুশফিক কেন এত নিচে খেলছেন, এ নিয়েও আলোচনা আছে। তামিম-সাকিবের অনুপস্থিতিতে টেস্টে সবচেয়ে ভরসা করার মতো ব্যাটসম্যান তো মুশফিকই। এ ব্যাপারে মাহমুদউল্লাহ বললেন, ‘দেখুন সে যেহেতু উইকেটকিপিং করছে, আমার কাছে মনে হয় যে তার জন্য পাঁচ কিংবা ছয়ই সেরা ব্যাটিং পজিশন হবে। কারণ আপনি যদি প্রায় ৮০-৯০ ওভার কিপিং করেন, আবার দ্রুত ব্যাটিংয়ে নেমে পড়তে হয়, তাহলে সেটি কঠিন। তাই আমার কাছে মনে হয় তাকে একটু সময় দেওয়াটা ভালো হবে বলে। আর টিম ম্যানেজমেন্টও এই বিষয়টি সেভাবে চিন্তা করছে যে হয়তোবা ওকে যদি একটু সময় দেওয়া হয় তাহলে সে আরেকটু সতেজ হয়ে খেলতে পারবে, এটি তার ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো হবে। আর ওর ব্যাটিংটা আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।’
এমন প্রশ্নও উঠল, এখন তো অনেক দলই আগের দিনই একাদশ বলে দেয়। আর বাংলাদেশ দলের কথা শুনলে মনে হয়, একাদশ নিয়ে এখনো যেন দ্বিধায় টিম ম্যানেজমেন্ট। এমন দিন কবে আসবে, যখন বাংলাদেশ আগেই জানিয়ে দেবে একাদশ? মাহমুদউল্লাহ বললেন, ‘এটা খুব ভালো কথা বলেছেন। সেরা একাদশ নিয়ে নিশ্চিত থাকলে অধিনায়ক তাদের সঙ্গে আগে থেকেই কথা বলার সুযোগ পায়। আর এতে করে তারাও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে পারে। তবে আমার মনে হয় এই বিষয়ে কিছু কিছু ব্যাপার জড়িয়ে থাকে। যেমন পিচটা কেমন হচ্ছে। হয়তো টিম ম্যানেজমেন্ট অনেক সময় দ্বিধায় থাকে যে কে খেলবে আর কে খেলবে না। তবে আমরা আগে থেকেই একটা আভাস দিয়ে রাখি, যে খেলতে পারে তাকে জানানো হয়। অধিনায়ক হিসেবে আমি এই বিষয়টি অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে পরিস্থিতির কারণে সব সময় হয়তো আমরা তা করতে পারি না।’
মিরপুর টেস্টে টসটাও গুরুত্বপূর্ণ হবে। সিলেটে টসে হারার কারণে বাংলাদেশকে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হয়েছে। এই টেস্টেও ধীর উইকেট বানানো হলে বাংলাদেশ টসে জিতে ব্যাটিং নিতে চাইবে বলেই জানালেন মাহমুদউল্লাহ, ‘টসটা অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যদি আপনি ধীর পিচে খেলেন, সেখানে চতুর্থ ইনিংসে স্পিনাররা বেশি সুবিধা পাবে। সুতরাং অবশ্যই আপনি চাইবেন টসটি জিততে এবং সেখান থেকে সেরাটা নিয়ে আসতে।’
মিরপুর টেস্টের সময়সূচি সিলেটের মতো আধঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে। আগামীকাল সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে ম্যাচ।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: ইমরুল, লিটন, মুমিনুল, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, আরিফ, মেহেদী মিরাজ, তাইজুল, মোস্তাফিজ, শফিউল/আবু জায়েদ