দুই দিন আগে রোনালদিনিও তাঁর ইনস্টাগ্রামে একটি আঁকা ছবি পোস্ট করেছেন—বিশ্বকাপ ট্রফিতে দুদিক থেকে চুমো আঁকছেন তিনি এবং রোনালদো। পর্তুগিজ ভাষায় দেওয়া ছবিটির ক্যাপশনের বাংলা করলে অর্থ দাঁড়ায়, ‘সেই মুহূর্তকে জাগিয়ে তুলতে পারাটা দারুণ এক ব্যাপার! পেন্টা জয়ের ২০ বছর।’
দুই দিন আগে নয়, ব্রাজিলের পঞ্চম বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের ২০ বছর পূর্তি আসলে আজ। ক্যারিয়ারের প্রথম আর একমাত্র বিশ্বকাপ জয় বলে কথা! তাই আনন্দটা আর চেপে রাখতে পারেননি রোনালদিনিও, দুই দিন আগেই প্রকাশ করে ফেলেছেন।
২০ বছর আগের সেই আনন্দের ক্ষণকে স্মরণ করেছেন সেবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দেওয়া কাফু আর অন্যতম সদস্য রবার্তো কার্লোসও। কাফু ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ী দলেরও সদস্য ছিলেন। তবে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ ট্রফিটা উঁচিয়ে তো ধরেছিলেন ২০০২ সালেই।
মধুর সেই ক্ষণটির জন্য আজও গর্ব হয় কাফুর, ‘ব্রাজিলের হয়ে খেলতে পেরে আমি গর্বিত আর খুব খুশি। বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরতে পারার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত।’ এ এমন এক স্মৃতি, যেটা চিরদিন মনের মণিকোঠায় রাখবেন কাফু।
বিশ্বকাপ খেলা আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অনুভূতিটা কেমন, সেটাও বর্ণনা করেছেন ব্রাজিলের সাবেক অধিনায়ক, ‘আপনি যখন বিশ্বকাপ খেলবেন, স্বপ্ন থাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। আমারও সেই স্বপ্ন ছিল এবং এটা সত্যি হয়েছে। আমরা যা অর্জন করেছি, তার জন্য আমি গর্বিত।’
২০০২ সালে অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন বলে ১৯৯৪–কে ভুলে যাচ্ছেন না কাফু, ‘২৪ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ জয়টা ছিল স্বপ্নের মতো। ২০০২ সালে আমরা পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতেছি। এ কারণে এটা আরও বিশেষ।’
পঞ্চম বিশ্বকাপ জয় নিয়ে নিজের গর্বের কথা বলেছেন ব্রাজিলের সাবেক লেফটব্যাক কার্লোসও। বিশ্বকাপে কোনো দলের যে কয়জন খেলোয়াড় খেলেন, বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ তো শুধু সে কয়জনেরই নয়! বিশ্বকাপ জয় আনন্দে ভাসায় পুরো দেশকে।
ব্রাজিল সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ের রেকর্ড গড়লেও সেই আনন্দ থেকে দেশটির ফুটবল–পাগল মানুষ ২০ বছর ধরে বঞ্চিত। কারণ, ২০০২ সালে নিজেদের ইতিহাসে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপা জয়ই যে বিশ্বকাপে তাদের সর্বশেষ ট্রফি!
ব্রাজিলের মানুষের জন্য এটা বেশ হতাশারই। ১৯৫৮ সালে প্রথম শিরোপা জয়ের পর এর চেয়ে বেশি শিরোপাহীন বিশ্বকাপে আগে একবারই ছিল ব্রাজিল। ১৯৫৮ সালের পর ১৯৬২—টানা দুটি বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ১৯৬৬ সালে ফেবারিট হিসেবে গেলেও গ্রুপ পর্বের বৈতরণীই পার হতে পারেনি তারা। তবে ১৯৭০ সালে আবার বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল।
সত্তরের পর চতুর্থ বিশ্বকাপ জিততে ব্রাজিলকে অপেক্ষা করতে হয় ২৪ বছর। এর আগে ১৯৮২ সালে জিকো–সক্রেটিসদের ব্রাজিল বিশ্বকাপ জিততে না পারায় আক্ষেপের অন্ত নেই ব্রাজিলিয়ানদের। ব্রাজিলের ফুটবল–পাগল মানুষের আরেকটা আক্ষেপের নাম ১৯৯৮ বিশ্বকাপ। সেবার ফেবারিট হিসেবে ফাইনাল খেললেও দেশম–জিদানদের ফ্রান্সের কাছে হেরে যায় রোনালদো–কাফু–কার্লোসরা।
আটানব্বইয়ের আক্ষেপ রোনালদোরা মিটিয়েছেন ২০০২ সালে, চুরানব্বইয়ে শিরোপা জেতার ৮ বছর পর। এর পর থেকেই আবার খরা—যেটা এবার দুই দশকে পৌঁছেছে। সেই খরার আক্ষেপ থেকেই ব্রাজিলের ফুটবল আকাশের নতুন তারা নেইমার–ভিনিসিয়ুস জুনিয়রদের প্রতি একটা আকুতিও জানিয়েছেন কার্লোস—এবার বিশ্বকাপ জয়ের সময় এসেছে!
কাফুও আশা করছেন, কাতারেই কাটবে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ের খরা, ‘আমার মনে হয় এবারের দলটা ভালো। তারুণ্য আর অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়া এক দল...কাতার বিশ্বকাপে ভালো অবস্থা নিয়েই যাচ্ছে ব্রাজিল। আমি সত্যই আশা করছি, তারা আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে এবং খুব ভালো একটি টুর্নামেন্ট কাটবে ব্রাজিলের।’
এই আকুতি শুধু কাফু–কার্লোসদেরই নয়, এটা গোটা ব্রাজিলের আকুতি। ব্রাজিলের পেন্টা জয়ের উচ্ছ্বাসের সঙ্গে শিরোপা ষষ্ঠক জয়ের আকুতি জানাচ্ছেন কাফু–কার্লোসরা, তথা ব্রাজিলের ফুটবল–পাগল মানুষ। নেইমার–ভিনিসিয়ুস এই আকুতি শুনতে পাচ্ছেন তো! ব্রাজিল তাদের পঞ্চম ও সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল এশিয়াতেই। এবার এশিয়াতে ২০ বছরের খরা কাটাতে পারবেন আপনারা?